পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিলাত-যাত্রী

এক এক বার জাহাজের উপর আসিতাম। সৈয়দ বন্দর থেকে তিন দিন কেবল জলরাশি। তার পরে সিসিলি দ্বীপ দেখা গেল। সিসিলির এট্‌না আগ্নেয় পর্ব্বত দেখিতে অতি ভীষণ। অম্বর-চুম্বিত শিখর-দেশ হইতে অবিরত দীপ্ত ধূমরাশি উদ্গীর্ণ হইতেছে। ধূসরকৃষ্ট জলদজাল কটিদেশকে জড়াইয়া রহিয়াছে।

আমাদের জাহাজখানি এক ইতালীয় কোম্পানীর। ইহার গম্যস্থান জেনোয়া (Genoa) সহর। ৫ই অক্টোবর মুম্বই ছাড়িয়াছিল। ১লা নভেম্বর নেপল্‌স্‌ সহরে আসিয়া পঁহুছিল। ইতালীয়েরা এই সহরকে নাপলী (Napoli) বলে। ইংরেজ বাহাদুর এই সুন্দর নামটীকে বিকৃত করিয়া তুলিয়াছেন। নাপলী একটি ছবি বলিলে অত্যুক্তি হয় না। দুর থেকে ঠিক যেন চিত্রার্পিতারম্ভ বলিয়া বোধ হয়। আমার টিকিট জেনোয়া অবধি ছিল। তথায় শুনিলাম নাপলী হইতে রোম (ইহার ইতালীয় নাম রোমা) রেলে চারি ঘণ্টার রাস্তা রোমা দেখিবার বড় সখ হইল। জাহাজ হইতে নামিয়া পড়িলাম। ভয়ানক কোমরে ব্যথা নিয়ে অতি কষ্টে ইষ্টিশানে গেলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা কোরে ডাকগাড়িতে উঠিলাম। গাড়ি রোমে রাত্রি নয়টার সময় পঁহুছিবে শুনিয়া একটু ভাবনা হোলো। বিদেশ ভূঁই—কি জানি কিরকম। গাড়ি খুব বেগে চলিল! আগ্নেয় পর্ব্বত বিসুবিয়স অতি নিকটে। ইহারও মাথায় ধূমরাশি। বিস্ময়ের কথা যে ইহার পৃষ্ঠে ও তলদেশে বড় বড় বসতি আছে। কতবার ভস্মসাৎ হইয়াছে তবুও ভয় নাই। রাস্তার দুই দিকে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে সুন্দর সুন্দর গ্রাম। সমস্ত দেশটি যেন একখানি বাগান। বাহিরে ত এই প্রকৃতির শোভা। আবার গাড়ীর ভিতরেও প্রকৃতির লীলা। আমার গাড়িতে এক যুবক ও এক যুবতী উঠিয়াছিল। যুবক একটু স্থির গম্ভীর কিন্তু নারীটি কিছু চঞ্চলা। এই