পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
বিলাত-প্রবাস

কোরে বোসে বোসে আয়নাতে দেখ—সাহেব পরামাণিক কেমন তোমায় কেয়ারি করিতেছে। কি যে আয়েস তা বুঝিয়ে উঠা দায়—তবে পিচকারি ও পাউডারের সুখটা আমি ভোগ করি নাই—কেন না ওটা আমার পক্ষে নিষিদ্ধ। এত বিলাস সুখ এখানে আছে কিন্তু নিষেধের জ্বালায় সে সব অঙ্গীকার করিতে পারি না। বঙ্গবাসীর আর কেহ পত্রলেখক হোলে ভাল হোতো। কত নাচ তামাসা আহার-পানের মজা। কিন্তু আমার কপালে তা নাই।

উদ্দাম-প্রবৃত্তি যুবকদের প্রথম দৃষ্টিতে মনে হোতে পারে যে ভারতে না জন্মানই ভাল ছিল। তাই দেখা যায় যে যত যুবক এখানে আসে―অধিকাংশই সাহেব হোয়ে সাহেবি বিলাসিতায় ডুবে মরে। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখিলে মোহ ঘুচে যায়। এখানকার গৃহস্থদের জীবনে শান্তি নাই। এত বেশী জিনিস-পত্তর দরকার যে তারা কুলিয়ে উঠিতে পারে না। আর দিন্‌কের দিন খুটি-নাটি বাড়ছে। আমি অতি সামান্য রকমে একটি গৃহস্থের বাটীতে থাকি। তবু আমার বাসা ভাড়া ও খাবার জন্যে মাসিক ৬৩৲ টাকা দিতে হয়। আমার একটি বসিবার ঘর ও একটি শোবার ঘর। ঘর দুটি ছোট ছোট কিন্তু এমনি সাজান যে কলিকাতার বড় মানুষের বৈঠকখানা হোতে কোন অংশে কম নয়। টেবিল কেদারা কোচ দেরাজ ও ভাল ভাল ছবিতে বসিবার ঘরটি সুশোভিত। নীচে কারপেট―জানালায় সাপের খোলসের মতন পরদা। শোবার ঘরে স্প্রিংএর খাট—শুইলেই এক হাত নেবে যায়—তায় আবার গদির উপর গদি। এক দিন একটা পরদা কিরকম লাগান হয় নাই―তাই গৃহিণী আমার নিকট ক্ষমা চাহিতে এসেছিল। আমি মনে করিলাম ভাল রে ভাল―তোমার পরদা কোচ সরিয়ে নিয়ে যাও—আর কিছু ভাড়া কমিয়ে দাও। কিন্তু এখানে এর চেয়ে সস্তা বাসা পাওয়া যায় না। আর যাদের