পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
বিলাত-প্রবাসী

কিন্তু তাদের বড়মানুষদের উপর যে রাগ দেখিলাম তাতে বড় ভয় হয়। এরা ভাল লোক কিন্তু দায়ে পোড়ে বিদ্বেষভাবাপন্ন হোয়েছে। সভ্যতার বাজারে এত টানাটানি যে এরা সামলে উঠিতে পারে না। তাই এরা বর্ত্তমান সমাজের দ্রোহী হোয়ে উঠিতেছে। আর যাদের তেলা মাথায় তেল—এরা তাদের দেখে একেবারে তেলে বেগুণে জ্বলে যায়। আমি ইহাদিগকে আমাদের বর্ণাশ্রমধর্ম্মের কথা অল্প স্বল্প বলিলাম। প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়িয়া কৌলিক কর্ম্মকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা শুনিয়া ইহারা বিস্মিত হইল কিন্তু ইহা যে শান্তিপ্রদ তাহা বার বার স্বীকার করিল। ইহারা বেশ শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান্। এই সমাজ-দ্রোহিতা―সভ্যতার একটী অঙ্গ। ইহাই ধর্ম্মঘট স্থাপন করে এবং ধনী ও কর্ম্মীতে শত্রুতা বাধায়। প্রতিযোগিতায় যার চালাকি আছে সেই খুব মেরে দেয় আর যে বেচারি ভাল মানুষ তার সহস্র সহস্র গুণ থাকিলেও কিছু সুবিধা হয় না। এই সমাজের ভয়ানক অসামঞ্জস্য-ভীতি য়ুরোপের চিন্তাশীল ব্যক্তিদিগকে উৎকণ্ঠিত করিয়া তুলিয়াছে।

এই ত গেল ভয়ের কথা। সভ্যতার একটী শোচনীয় ব্যাপার আছে। সেটি ভয়ানক দারিদ্র্য। সহরে ভারি শোভা—পূর্ণমাত্রায় আয়েস ঐশ্বর্য্য—কিন্তু পশ্চাদ্ভাগের অলিতে গলিতে বড়ই দারিদ্র্য। দেখিলে প্রাণ ফেটে যায়। ছোট ছোট পায়রার খোপের মতন ঘর―তাতে স্বামী স্ত্রী ছেলেমেয়ের গাদাগাদি। ঘোর শীতে অগ্নি নাই—এখানে ঘরে আগুন নহিলে তিষ্ঠিবার জো নাই—বস্ত্র নাই আহার নাই। সকলে কাজ করিবার জন্য লালায়িত কিন্তু সহরে কাজ কর্ম্ম পায় না। এমন একজন আধজন নয়—শত শত সহস্র সহস্র। এই অমরাবতীর ঐশ্বর্য্যের মধ্যে কত লোক শীতে ও অনাহারে প্রাণ হারাইতেছে। কি দুঃখের কথা—কি লজ্জার কথা—আবার এমনি চমৎকার আইন