পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
২৫

যে ভিক্ষা করিবার হুকুম নাই। রাস্তায় দেখিতে পাইবে যে দীনহীন রমণীরা ছেলে কোলে শীতে হি-হি কোরে কাঁপ্‌ছে আর দুই একটা শুক্‌নো ফুলের তোড়া বা ভাঙ্গা দেশলাইয়ের বাক্স বিক্রী করিবার ছল কোরে ভিক্ষা চাহিতেছে। বড় বড় ঘাঘরা―বড় বড় টুপি কিন্তু তাহাদের পানে কেহ ফিরেও চায় না। সে দিন একজন রমণী, আমার কাছে কাঁদিতে কাঁদিতে ফুলের তোড়া বিক্রী করিতে এলো। আমি ভারি গরীব। তবুও তাকে এক সিলিং―বারো আনা দিলাম। কিন্তু অমনি একজন ইংরেজ নারী বোলে উঠিল―ছি―কালোমানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা নিলি। যাহা হউক এত ধনের মধ্যে অনাহারে মরে যায়—ইহাই বড় প্রাণে লাগে। সে দিন দুইটী স্ত্রীলোকের কথা শুনে অশ্রুবারি সম্বরণ করিতে পারি নাই। তারা দুটী বোন। একজন অনাহারে মরে পড়ে আছে আর একজন ক্ষুধার জ্বালায় ক্ষেপে গেছে। পুলিশ এসে মরা ও ক্ষেপা দুজনকে বের করে নিয়ে গেল। এমন সভ্যতার মুখে ছাই। আমি ত দেখে শুনে ধিক্কারে মরি।

আমার আলোকে কাজ নাই—আমার রংচংএ কাজ নাই। আমাদের অসভ্য দেশ অসভ্যই থাক্। শান্তি আমাদেরই ইষ্টদেবতা—ঠেলাঠেলি মারামারি আমাদের কাজ নাই। জিগীষার কাড়াকাড়ি হোতে ভগবান্ রক্ষা কর। হিন্দুসন্তান সভ্যতার প্রবৃত্তিপরায়ণতা হোতে বাঁচুক ও নিষ্কাম হইয়া কুল-ধর্ম্ম পালনে রত হউক।

বিলেতে এসে স্ত্রী-স্বাধীনতার কথা কিছু না বলিলে ভাল দেখায় না। সাংখ্যদর্শনে বলে যে প্রকৃতি যখন অবগুণ্ঠন খুলে আপনার স্বরূপ জানায় তখন পুরুষের মুক্তি হয়। এখানে প্রকৃতি অবগুণ্ঠিতা নহে। মাঠে ঘাটে হাটে আপনাকে প্রকাশিত করিয়া রাখে। এখানকার পুরুষেরা তবে সাংখ্যমতে মুক্ত। সাংখ্যমতে হউক আর না হউক আমাদের বিলাত-প্রবাসী দেশী ভায়াদের মতে সাহেবেরা মুক্ত পুরুষ। কেননা