পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৩১

ফেলি ছড়াছড়ি। আর এখানে যেন হিসাব কোরে গুণে-গেঁথে ফুল-ফল-শস্য-গাছ-পালা আমদানী করা হোয়েছে।

লােকে বিলাতের শীতের বিষয়ে আমায় বড় ভয় দেখিয়েছিল। আর এখানে আমার সাহেব বন্ধুরা প্রায়ই আমায় দয়াপ্রকাশ কোরে বলেন―শীত সহিতে পারিতেছ ত। আমার কিন্তু মনে হয়—পঞ্জাবে এখানকার চেয়ে শীত অধিক। এখানে আমি যদি একটু বেড়িয়ে আসি ত অমনি দরদর কোরে ঘাম পড়ে। ঘরে সদাই আগুণ জ্বালাতে হয় কিন্তু আমার ত তত আবশ্যক বােধ হয় না। আমি সাতটার সময় উঠি আর একচক্র ঘুরে আসি। তখন অন্ধকার, ঠিক যেন আমাদের দেশে পাঁচটা বেজেছে। আর আমার কাপড় চোপড়ের অবস্থা তথৈব চ। তার উপর আবার মাংস মদিরা খাই না। লােকে বলে তােমার ধাতে গরমি বেশী। কিন্তু সত্য কথা বলিতে কি আমার মেজাজ একেবারেই গরম নয়। এখানকার শীত আমার বেশ লাগে। আমার শরীর বড় ভাল আছে। বোধ হয় যেন দশ বৎসর পরমায়ু বেড়ে গেছে। তবে পয়সার অভাবে ভাল কোরে দুধ ও ফল খেতে পাই না। তা না হােলে বােধ হয় বিশ বৎসর বেড়ে যেতাে। যাক্‌―বড়াই করিব না। নাহঙ্কারাৎ পরো রিপুঃ―অহঙ্কার করিলেই পড়িতে হয়। কেবল মনে মনে বড় রাগ হয় যে এখানে দিনের পর দিন চলে যায়—তবু সূর্য্য উঠে না। আকাশ সদাই মেঘে ঢাকা। যদি এক দিন সূর্য্য উঠিল ত লোকের মুখে আর হাসি ধরে না। সূর্য্যের তাপটা কিন্তু কি রকম। বেলা একটার সময় যেন কলিকাতায় আটটা বেজেছে। তাই তাদের হাসি দেখে আমার হাসি পায়।

আমার চেহারাটা ক্রমশঃ লাল হোয়ে উঠছে। আমি চুণোগলি ছাড়িয়া চৌরঙ্গীর ঘেঁসাঘেসি ফিরিঙ্গিদের সঙ্গে মিলিতে পারি। তবু আমায় দেখে রাস্তায় শিহরুণি-আতকানি-হাসি ঘােচেনি। এখানে এক জন