পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৩৭

মায়ার বিষয়ই লেখা ছিল। মায়া কথাটা শুনিলে ইংরেজ চমকিত ও স্তম্ভিত হয়। আমরা দীন হীন জাতি—আমাদের বাঁচা-মরা শালগ্রামের শােয়া-বসার মতন দুই সমান। জগৎকে মায়াময় মিথ্যা বলিতে আমরা কুণ্ঠিত নহি কিন্তু ইংরেজের ঐশ্বর্য্য-ভাণ্ডার পরিপূর্ণ। তাই জগৎ মিথ্যা―ইহা একেবারেই মিথ্যা কথা মনে হয়। অনেক মারপেঁচ কোরে বুঝাতে হয়। সহজে তারা ঘাড় পাতে না। কিন্তু অবশেষে ঘাড় পাতিতেই হবে। আমাদিগকে পরাজয় কোরে তারা সম্রাট্ হােয়েছে। ঐ সাম্রাজ্য মায়ার ফাঁকি আর কিছুই নয়―এই স্বীকার কোরে একদিন তাহাদিগকে হিন্দুস্থানের পদানত হােতে হবে ও জ্ঞানের জয় ও বলের পরাজয় ঘােষণা করিতে হবে। ইংলণ্ডে অল্পস্বল্প বেদান্তের কথা রটেছে কিন্তু যাঁরা রটান তাঁরা মায়ার বাঁধে এমনি আটকেছেন যে মায়াবাদে আর পঁহুছিতে পারেন না। পুরুষেরা অবিদ্যাকে সদ্বস্তু বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। আর অবিদ্যারা পুরুষকে তুচ্ছ করিয়া মাথায় চড়িয়া বসিয়াছেন। কাজেই একটা কিম্ভূত কিমাকার গাউন-পরানাে বেদান্ত দাঁড়িয়ে উঠেছে। তবে রক্ষে যে বিলাতিমার্কা মায়াবাদের বা মায়াসাধের প্রাদুর্ভাব অতি কম।

যাহা হউক সেই গ্রাম ছাড়িয়ে আমরা গ্রামান্তরে গেলাম। চাষাভূষা দেখে মনে ধারণা হয় যে ইংরেজেরা আমাদের মতনই মানুষ। সেই চাষ করে মরাই বাঁধে গরু চরায়। তবে চারি কোটি না পাঁচ কোটি লােক ধরাখানাকে সরা কোরে তুলেছে কেমন কোরে। ঐক্য ও পুরুষকারের জোরে। সমস্ত ইংরেজ জাতির মধ্যে একটা বাঁধন আছে—সেটা কিছুতেই ছেঁড়ে না। এত ভয়ানক দলাদলি ও রাগারাগি যে তার সিকির সিকিও আমাদের দেশে নাই। অনেকেই ত রাজমন্ত্রীদিগকে ও গভর্ণমেণ্টকে গাল দিয়া ভূত ভাগায়। কিন্তু বিধিপূর্ব্বক আইন পাস হলেই সব ঠাণ্ডা। অনেকেই প্রতিবাদ করে কিন্তু বিধি কিছুতেই লঙ্ঘন করে না। ইংরেজের