পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
বিলাত-প্রবাসী

বাড়ীর নীচে দিয়ে সুড়ঙ্গ গেছে তারা রাত্রিতে এক রকম গম্‌গমানি শব্দ শুনিতে পায়—ঘরদোর যেন টল্‌ছে—এইরকম তাদের বোধ হয়। আর যারা সুড়ঙ্গে কাজ করে তাদের স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়। কখন কখন কোন কোন বাড়ী ধোসে যায় আর রেল-কেম্পানিকে ক্ষতিপুরণ সহিতে হয়। ৬০ হাত নীচে সুড়ঙ্গ কেটে গাড়ি চালান একটা অলৌকিক ব্যাপারের মধ্যে বটে। তবে শেষ রক্ষা হোলেই ভাল। প্রকৃতি সভ্যতার এত অত্যাচার সহ্য করিতে না পেরে শেষে না প্রতিশোধ লয়।

লণ্ডনে আমার চোখে সব চেয়ে সুন্দর জিনিষ একটি হাইড পার্ক—প্রকাণ্ড বাগান। কলিকাতার বিডনষ্ট্রীট সারকুলার রোড্ হারিসন রোড্‌ ও চিৎপুর রোড্ দিয়ে যতখানি জায়গা ঘেরা যায় হাইড্ পার্ক ততটা হবে― বেশী ত কম নয়। ইহা বৃক্ষলতাপুষ্পে সুশোভিত ও বড় বড় তৃণাচ্ছাদিত মাঠপূর্ণ—দেখিলে চক্ষু জড়িয়ে যায়। ইহার মধ্যে এক প্রকাণ্ড কৃত্রিম হ্রদ আছে। তাহাতে মরালাদি জলচর পক্ষী সকল ক্রীড়া করে। মাঝে মাঝে আবার মনোহর দ্বীপ। সন্ধ্যার সময় যখন সমস্ত পার্কটা ইলেক্‌ট্রিক আলোকমালায় ভূষিত হয় তখন মনে হয় যেন অমরাবতী ধরাধামে অবতীর্ণা। ইহা প্রণয়িজনের বিহারবন―ভাবুকের চিন্তাভবন—অলসের আরাম—গলাবাজি বক্তৃতার রঙ্গভূমি—চোরছেঁচড়ের আশ্রয়―কর্ম্মক্লিষ্ট কেরাণীর প্রাণ। মনে হয় লোকভারাক্রান্ত লণ্ডন যেন এই স্থান দিয়ে নিশ্বাস প্রশ্বাসক্রিয়া সম্পাদন করে।

লণ্ডনে চুরি-জুয়াচুরি-খুন লেগেই আছে। প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ লোক। পৃথিবীর সবজাতি এখানে বর্ত্তমান। তাই সবরকম দুষ্কর্ম্মও মূর্ত্তিমান্। সে দিন একটা বড় মজার চুরি হয়ে গেছে। বড় রাস্তার ধারে এক জহুরীর দোকান। বহুমূল্য আংটি সকল কাচের জানালার ভিতর সাজান রয়েছে। হাজার হাজার লোক সেইখান দিয়ে চলে যাচ্ছে