পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৫৩

পরায়ণ মানবের পক্ষে স্বরূপলাভ অসম্ভব। মাধুর্য্যশালী বস্তু প্রতীক হইতে পারে না কেন না তাহা প্রবৃত্তিকে সম্ভোগমুখিনী করে। যাহা মহান্ মঙ্গলময় যাহা আত্মদান করে তাহাই সেই শিবস্বরূপের প্রতিমা বলিয়া স্বীকৃত। গীতাশাস্ত্রে জ্যোতিষ্কের মধ্যে তপন—পাদপের মধ্যে অশ্বত্থ―গিরির মধ্যে হিমালয়―নদীর মধ্যে গঙ্গা বর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণ―ইত্যাদি বিভূতিমান্ কল্যাণময় বস্তুই প্রতীক বলিয়া কীর্ত্তিত হইয়াছে। যখন কোন ভক্ত অশ্বথের মুলে জলসেক করে তখন ভূমার মঙ্গলভাবই পূত হয়। যখন কুলকামিনীরা পয়স্বিনী গাভীর পরিচর্য্যা করে ভালে সিন্দুর লেপন করিয়া তাহাকে মাতৃপদে বরণ করে তখন অনন্ত করুণাই উপাসিত হয়। যখন ব্রাহ্মণেরা সূর্য্যদেবকে বেদমন্ত্রের দ্বারা স্তুতি করেন তখন হিরন্ময় পুরুষই স্তূত হন। অবিশেষকে জানিতে গেলে―বিশেষ বস্তু বিশেষ স্থান বিশেষ কালকে তাহার বিশেষ অধিষ্ঠান বলিয়া স্বীকার করিতে হয়। গঙ্গোত্রি পবিত্র তীর্থ সাধারণ গ্রামে বা নগরে সে পবিত্রতা নাই। গ্রহণের কাল―অন্যান্য কালের অপেক্ষা দান-পূজার অধিকতর উপযোগী। সাধুভক্তগণের আবির্ভাব বা তিরোভাবের তিথি অপরাপর তিথি অপেক্ষা নিশ্চয়ই সন্মানার্হ। অশ্বত্থ অন্য বিটপীর অপেক্ষা পূজ্যতর। গঙ্গা মাতৃস্থানীয়া যে সে নদী নহে। রূপকে এই প্রকার স্বরূপের বিগ্রহ বলিয়া উপাসনা করিতে হয়। রূপকে সাধন-সামগ্রী না করিলে প্রবৃত্তির তাড়না হইতে বাঁচা দায়।

ইংরেজেরা প্রকৃতির রূপকে ভালবাসে কিন্তু রূপের সাধন জানে না। নব্য সভ্যতার শাস্ত্রে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যকে উচ্চস্থান দেওয়া হইয়াছে বটে কিন্তু তাহাতে পবিত্রতার বা মঙ্গল ভাবের আরোপ নাই। প্রকৃতির মাধুরী লইয়া কত না গীত—কত না গাথা। কিন্তু যে সকল বস্তু আত্মদ ও কল্যাণময় তাহার আদর নাই। ক্রোটন আর অর্কেরিয়া