পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৫৫

সংস্কারকদের উপর আমার রাগ বাড়িতেছে। সভ্যতার যে ভাল দিক্ আছে তাহা ঢের বুঝান হইয়াছে। তবে আমরা গুণই জেনেছি গুণাগুণ ভাল করে বুঝিনি। শুন্‌লে বিস্মিত হতে হয় যে এখানে শতকরা চল্লিশ জন বিবাহ করিতে পারে না। গরীব ভদ্রগৃহস্থের বিবাহ করা দায়। যদি তাহারা সমান ঘরে বিবাহ করে তাহলে সমাজে গৃহিণীর মর্য্যাদা রাখিতে গিয়া গাউনের খরচাতেই প্রাণ অন্ত ―একেবারে ঢাকী শুদ্ধ বিসর্জন। আর যদি নীচু ঘরে বিবাহ করে তাহলে একঘরে হতে হয় —নিজর সমাজে নিমন্ত্রণাদি বন্ধ হয়। এই সভ্যতার তত্ত্বটি আমি অতি অন্তরঙ্গ ভাবে জানিয়াছি বাহির থেকে বড় একটা জানা যায় না। অর্থাভাবে প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ রহিত হয়ে প্রবৃত্তির যদৃচ্ছাচারিতা ক্রমশই বাড়িতেছে।

এখানে বিপুল ঐশ্বর্য্য কিন্তু দরিদ্রতাও খুব। শতকরা ত্রিশ জন দরিদ্র অর্থাৎ কোন রকমে গ্রাসাচ্ছাদন উপার্জ্জন করে। তার মধ্যেও আবার অনেকে তাও পারে না।

শুন্‌লে বিশ্বাস হয় না যে এখানকার অধিকাংশ শ্রমজীবীরা মাংস খেতে পায় না। মদিরাটুকু (beer) চাইই-চাই কিন্তু মাংস কিনিবার পয়সা তাদের জুটে উঠে না। কেবল রবিবার দিন মাংস খায় ―আর অন্য দিন রুটি পনীর আলু ইত্যাদি খায়। এক দিকে যেমন অর্থ বাড়িতেছে অপর দিকে তেমনি অভাব বাড়িতেছে। প্রতিযোগিতা যে সভ্যতার মূল তাহার ফল এইরূপ হইবেই হইবে। এখানে কলেতে (factory) অপরিণীতা স্ত্রীলোক সকল কাজ করে। তারা যে রোজগার করে তাতে তাদের কিছুতেই চলে না। তাই তারা প্রায় সকলে পেটের দায়ে দুশ্চরিত্রা হয় এ একেবারে জানা কথা। তবুও এমনি প্রতিযোগিতার (Competition) চাপ যে তাদের পাওনা বাড়ান বড়ই মুস্কিল।