পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
বলাত-প্রবাসী

অর্থ যে কি অনর্থ ঘটিয়েছে তা বর্ণনা করা যায় না। যদি বড় মানুষ হয় তাহলে তার ছেলে মেয়ের বিবাহোপলক্ষে খানা ও মজলিসে গরিব পিতামাতার ভাইভগ্নীর নিমন্ত্রণ হবার জো নাই। ভ্রাতৃভাবাপন্ন সংস্কারকেরা এই সভ্যতার ফলটি একটু তলিয়ে যেন দেখেন। তাহোলে তাঁদের জাতিভেদের উপর বিদ্বেষ ঘুচে যেতে পারে।

আর একটা কথা বলি। স্বাথীন প্রেমে বড় একটা বিভ্রাট ঘটেছে। পণ-ভঙ্গের (Breach of Promise) মোকদ্দমার কিছু বাড়বাড়ি হয়েছে। কোন যুবক যদি কোন যুবতীকে বাগ্‌দান কোরে বিবাহ না করে তা হোলে খেসারৎ নালীস চলে। এই রকম নালিস অনেক হচ্ছে, বোলে হাকিমেরা দণ্ড বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেদিন এক গরীব যুবকের পণভঙ্গের দরুণ ৭৫০০৲ টাকা দণ্ড হয়েছে অর্থাৎ যুবতী এই টাকাটা যতদিনে পারে কিস্তিবন্দি কোরে আদায় করে নিতে পাবে। কিস্তিবন্দিটা অবশ্য আয় অনুসারে হবে। যুবতীরা যত প্রেমপত্র—সব নম্বর ডকেট (docket) ও ফাইল কোরে রাখতে আরম্ভ করেছে―কি জানি যদি প্রণয়িণীর নামে নালিস করিতে হয়। তারাও গ্রিমেণ্ট (Agreement) লিখিয়ে নিতে আরম্ভ করেছে। সেদিন কোর্টে পণ-ভঙ্গের মোকদ্দমায় এক গ্রিমেণ্ট দাখিল হয়েছিল। তার মর্ম্ম এইরূপ —আমার প্রণয়ী (ভাবি স্বামী) আমাকে প্রাণের অপেক্ষা ভালবাসে—তা আমি জানি কিন্তু যদি কোন আকষ্মিক কারণে আমায় বিবাহ করে তাহলে আমি ১৫০৲ টাকা পাইলেই সন্তুষ্ট হইব আর সব প্রেম-পত্র (Love letters) ফিরাইয়া দিব। এই গ্রিমেণ্টের জোরে যুবক ১৫০ টাকাতেই রেহাই পেয়েছিল। প্রেমেও ব্যবসাদারি—বাহবা সভ্যতা। ডাকের আর সময় নাই—আজ এই পর্য্যন্ত।

অক্ষফোর্ড—২৪শে এপ্রিল ১৯০৩। বি উপাধ্যায়।