পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
বিলাত-প্রবাসীর

বড় পরিশ্রমী। দাসী নাই। সমস্ত দিন রান্না ও ঘরকন্নার কাজ তাঁহাকে করিতে হয়। আমার উপর এঁর কিছু ভক্তি হয়েছে। এক এক দিন সময় হোলে আমার কাছে এসে ধর্ম্মোপদেশ নেন। সংসারের ভাবনার সঙ্গে ভগবদ্ভক্তি কি প্রকারে মিশাইতে হয় তাহা আমি একে বলি। তাই অনেকটা গুরুর মতন সেবা পাই। ছোট ছোট মেয়েগুলি সদাই ব্যস্ত পাছে আমার খাবার দাবারের কোন ত্রুটি হয়। বড় মেয়েটি একদিন, আমার খাবার দিতে এসে তার কাঁধের উপর দিয়ে একটু নুন ছড়িয়ে দিলে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম—ব্যাপার কি। সে বল‍্লে যে আস‍্তে আস‍্তে নুন ফেলে দিয়েছিল। নুন ফেলা বড় অলক্ষণ। তাই ঐরকম কোরে অলক্ষণের কাটান করিতে হয়। আমাদের দেশেও অনেক স্থানে এই রকম প্রথা আছে—যেমন তেল পড়ে গেলে সেই জায়গায় একটু জলের ছিটে দিতে হয়। এখানে ঐপ্রকার অনেক সরল প্রথা আছে। সভ্যতার প্রকোপে আমাদের দেশে ভারতবর্ষে কত না ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আচার ব্যবহারকে কুসংস্কার বোলে উড়িয়ে দেওয়া হোয়েছে। সভ্যতার দেশেই কিন্তু কুসংস্কার বেশী। গৃহিণীর এক ভগ্নী তার মামাতো ভাইকে বিয়ে করিবে বোলে ক্ষেপেছে। মামা ভয়ানক চটেছেন। ছেলেকে বিষয় দেবে না বলে ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু প্রণয়িযুগল অটল। তাই গৃহিণী দুঃখ কোরে আমায় বাল‍্ছিলেন যে মামাতো পিস‍্তুতো ভাই বোনে বিয়ে বড় মন্দ। একটা ইংরেজিতে ছড়া বলিলেন —সেটা আমি ভুলে গেছি। তার অর্থ এই যে ঐ প্রকার বিয়েতে স্বাস্থ্য ও অর্থনাশ হয় আর বন্ধ্যাদোষ হয়। বল‍্লেন—যতগুলা আমি দেখেছি ততগুলা ঐরকম। তার সাক্ষী আমাদের পাড়াতেই এক ঘর বুড়ো বুড়ী স্বামী স্ত্রী আছে। তারা খুড়তুতো ভাই বোন। তাদের সব টাকাও ব্যবসায় নষ্ট হোয়েছে—ছেলে পিলে হয় নাই আর তারা রোগে জীর্ণ।