পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৬৯

উৎসুক কিন্তু ইনি একেবারে বীতরাগ। হিন্দু দর্শনের উপর এঁর কিছু শ্রদ্ধা নাই। তবে সুখের বিষয় এই যে এখানে ইনি গাঁয়ে-মানে-না-আপনি-মোড়ল গোছর লোক। আমাদের দেশের লোক মনে করেছিল যে কোন একটা দিগ‍্গজ এসেছে। কিন্তু উক্ষপারে এঁর প্রতিপত্তি ভারি কম। ডাক্তার ল্যাড ত স্পষ্ট লিখেছেন যে হিন্দুরা মিথ্যাবাদী ও দুশ্চরিত্র। যে ইংরেজ ভারতে যায় সেই হিন্দুর বিষয় কিছু না কিছু লেখে। এখানে এত বই বেরিয়েছে যে আমরা তার খবরই জানি না। কিন্তু প্রায় সবগুলি হিন্দুর নিন্দায় ভরা। এঁর উপায় কি। উপায় রাঙ্গা পায়। আমাদের দেশীয় ধুরন্ধরেরাও হিন্দুর নিন্দা করিতে ছাড়েন না। রমেশ বাবুর হিন্দু সভ্যতা নামক পুস্তকখানিতে হিন্দুর নামকে যে কি মাটি কোরেছেন তা বলা যায় না। তাঁর গ্রন্থের মর্ম্ম যে আমরা কোনও পুরাকালে একটু আধটু সভ্য ছিলাম—তা আবার সে সভ্যতাটুকুও ব্রাহ্মণদের অত্যাচারে লোপ পেয়েছে। যাক্ তাঁর আর নিন্দা করিব না। তিনি দেশ-হিতৈষী। ইংরেজের কাছে তিনি আমাদের দারিদ্রের ওকালতি করেন—তাঁর মঙ্গল হোক্।

 এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে বেদান্তদর্শন শিক্ষা হয় সেই বিষয়ে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছি। যদি হয় ত বড় ভাল হয়। কতকগুলো বিলাতী ভুতুড়ে লোক আর বিলাতী মেয়ে মানুষের হাত থেকে হিন্দুয়ানির পাণ্ডাগিরি যত দিন না যায় তত দিন অমঙ্গল বই মঙ্গল নয়। যারা উচ্চশিক্ষিত তারা ঐ অর্ধশিক্ষিত প্রেতাত্মা-মহাত্মা-গ্রস্ত উদ্ভ‌ুট্টে বিলাতি হিন্দুদের ঘৃণা করে। এই পাণ্ডার দল—দর্শন কি বস্তু তাঁর বড় খোঁজ রাখে না কিন্তু কেবল নিজেদের দেশের নিন্দা ও কুৎসা করে আর না বুঝে সুঝে হিন্দুর বিষয় নিয়ে চীৎকার করে। যত স্বদেশদ্রোহী আর নব-নব-কৌতুহল-বিলাসিনী নারীগণের দ্বারা এই দল পরিপুষ্ট।