পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
বিলাত ফেরত

বঙ্গমাতার কোল ছেড়ে আর কোথাও যাব না। বন্ধুদের কৃপা আমড়ার টকের চেয়েও ঢের বেশী দূর গড়িয়েছে। কাঁচা গোল্লা রসগোল্লা ক্ষীর পায়েস ইত্যাদি চর্ব্ব্য চুষ্য লেহ্য পেয়ের দ্বারা রসনা পরিতৃপ্ত করেছি। হা হতভাগ্য ইংরেজ তোমার কপালে রসগোল্লা নেই তাই ভেবে ভেবে আমার ঘুম হয় না। তুমি হিন্দু দর্শন পড়িবে স্বীকার করেছ। কিন্তু তোমার আড়ষ্ট জিভ যদি কোন দিন জামাই-তত্ত্ব রসগোল্লার রসে সাঁতার দেয়—তুমি বুঝ্‌তে পারবে যে আর্য্যজাতি কত মহৎ এবং কত রসিক।

দুই একজন ব্রাহ্ম বন্ধু আমার বঙ্গবাসীর চিঠিতে কুরুচি আছে বলিয়া বিরক্ত হইয়াছেন। কোন এক ভদ্রলোকের বাগানে একটি বকুল গাছ আছে। একটি ব্রাহ্ম প্রতিবাদ করেন যে ঐ অশ্লীল বৃক্ষটি রাখা উচিত নহে। ভদ্রলোকটি বলেন যে বকুল গাছের থাকা না থাকার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে কিন্তু ঐ বকুলে যে একটি অশ্লীল পাখী অর্থাৎ কোকিল এসে বসে তার উপায় কি। আমিও তদ্রূপ নিরুপায়। প্রণয় বিরহ বা রূপমধু-পান ইত্যাদি প্রয়োগ প্রবাসীর চিঠিতে অনিবার্য্য। যাহা হউক এখন তর্ক বিতর্ক ছেড়ে একটা আসল কথা বলি।

য়ুরোপীয়দিগের প্রায়ই এই বিশ্বাস ক্রমে দৃঢ় হইতেছে যে শ্বেতাঙ্গ জাতি মানবকুল-শ্রেষ্ঠ। অন্যান্য জাতি―গৌর শ্যাম ও কৃষ্ণ—তাহাদিগের দাসত্ব করিতে জন্মিয়াছে। এই প্রভুত্বের আকাঙ্ক্ষা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতেছে। ইহা যেন একটা আসুরিক ভাব। ইহা পৃথিবীতে অনেক অমঙ্গল আনিয়াছে ও আনিবে। এই ভাব প্রবল হইলে ভারতের যে কি হানি হইবে তাহা প্রকাশ করা কঠিন। এই বিপদ কাটাইবার জন্য একটি উপায় অনেক দিন ধোরে আমার মনে হইতেছে। যদি ভারত পুরাকালের ন্যায় আবার পৃথিবীর