পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৭৫

তাহারা তাহাদের নিজের ধর্ম্ম ও শাস্ত্র ভাল করিয়া বুঝিতে পারিবে আর তাহাদের সর্ব্বনেশে আসুরিক ভাব দূর হইবে। এইরূপে তাহাদেরও মঙ্গল ও আমাদেরও মঙ্গল সাধিত হইবে। বিলাত দেখে আমার দৃঢ় ধারণা হয়েছে যে সভ্যতা সামাজিকতা লৌকতা আচার ব্যবহার— এই সকল বিষয়ে হিন্দুজাতি ইংরেজ অপেক্ষা অনেক বড়। যে নব্য সংস্কারকেরা পাশ্চাত্য সভ্যতা দেখিয়া হিন্দুকে হীন মনে করেন তাঁহারা অত্যন্ত কৃপাপাত্র। আমাদের দেশে এক্ষণে যে অনাচার বা কুসংস্কার নাই তাহা নহে। আর ইংরেজের কাছে যে কিছু শিখিবার নাই তাহাও নহে। কিন্তু এ কথা প্রমাণ করা যায় যে হিন্দুর আন্তরিক উদারতা ও উন্নত ভাবের নিকট ইংরেজের বাহ্য রং ঢং কিছুই নয়।

আমি বারমিংহাম্ নগরে একজন প্রসিদ্ধ দার্শনিকের বাটীতে অতিথি হেয়েছিলাম। তাঁহার পত্নী বড় বিদুষী। তিনি তন্ন তন্ন করিয়া আমাদের দেশের কথা আমায় জিজ্ঞাসা কোরেছিলেন। বিশেষতঃ আমাদের দেশে বিদ্যার আদর কি প্রকার তা জানিতে বড়ই ঔৎসুক্য দেখিয়েছিলেন। আমি বলিলাম যে খুব নীচজাতি ছাড়া এমন হিন্দু নাই যাহারা অল্প স্বল্প লিখিতে পড়িতে জানে না। কেন না হিন্দুর বিদ্যাশিক্ষা ঋষি-ঋণ শােধ করিবার জন্য―নিজের গৌরবের জন্য নয়। আমাদের হাতে খড়ি দেওয়া যে একটি ধর্ম্মকার্য্য তাহা শুনিয়া তাঁহারা আশ্চর্য্য হইয়া গিয়াছেন। তাঁরা বলিলেন যে আমরা কত আইন-কানুন কোরেও এপ্রকার লেখাপড়ার প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা দাঁড় করাইতে পারি নাই।আমাদের পণ্ডিতদের উপাধি শুনিয়া তাঁরা বড়ই প্রীত হইয়া ছিলেন। বিদ্যাসাগর (Ocean of Learnnihg)―ন্যায়বাচষ্পতি (Lord of Wisdom in Logic)―তর্করত্ন (Jewel in Disputation)