পাতা:বিলাপ - অমৃতলাল বসু.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
বিলাপ।

দানে উদ্যোগী হইয়াছিলেন। দয়া জাগিয়া উঠিলে বিদ্যাসাগরের হৃদয়ে অন্ত কোন বৃত্তি তর্ক জ্ঞান স্থান পাইত না; স্বদেশবৎসল বীর মাতৃভূমি রক্ষার্থ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবিষ্ট হইলে যেমন তাহার হৃদয়ে নরহত্যা পাপের কথা উদয় হয় না, অন্যের কথা দূরে থাক, আভ্যন্তরিক কলহ বশতঃ শোণিতাপ্লুত আর্য্যাবর্ত্তে ধর্ম্মরাজ্য সংস্থাপনার্থ শান্তিদান কামনায়, দীন দুর্ব্বলকে রক্ষা করিতে, যখন ভগবান নারায়ণ দীননাথ শ্রীকৃষ্ণরূপে অবতীর্ণ হন, তখন যেমন কুরুক্ষেত্রে বা যদুবংধ্বংস কালে, হত্যা মিথ্যা জ্ঞাতিনাশ আদি পাপ বলিয়া গ্রাহ্য না করিয়া কেবল দীনের সহায় হইয়া “দীননাথ” নাম কিনিয়া গিয়াছেন, সেইরূপ বিদ্যাসাগর ও সমাজবন্ধন, লৌকিক নিয়ম, প্রতিপক্ষের তাড়ন, তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া একমাত্র কৌমার বিধবার কাতরতায় আকুল হইয়া “দয়ার সাগর” নাম রাখিয়া গিয়াছেন।

 ৩য় নাগ। বটে বটে ঠিক; বিদ্যাসাগর যে দয়াবান ছিলেন, এ কথা কে অস্বীকার করবে? কিন্তু বিধবা বিবাহটা হিঁদুর প্রাণে কেমন কেমন লাগে, তাই লোকে বলা বলি করে।

 ৪র্থ নাগ। হিন্দু কই? হিঁদুয়ানি কে রাখে? এমন সংসার যদি থাকে যেখানে সনাতন ধর্ম্ম অক্ষুণ্ণভাবে প্রতিপালিত হয়, যেখানে কর্ত্তা গৃহিণীকে বিলাসের সামগ্রী না করিয়া সহধর্ম্মিণী ভাবেন, পত্নী পতিকে শয্যাগুরু না ভাবিয়া ধর্ম্ম গুরু জ্ঞানে, “পতির্ব্রহ্মা পতিবিষ্ণুং পতিরেব মহেশ্বর” বলিয়া পূজা করেন, বিধবার প্রতি গৃহস্থ সকলে সমবেদন জানাইয়া সাত্ত্বনা বাক্যে ও সদ্দৃষ্টান্তে ব্রহ্মচর্য্য শিক্ষা দেন, দেব পূজাদিতে রত রাখিয়া পুরাণ পাঠাদি শ্রবণ করাইয়া আত্মসংযমে প্রবৃত্তি