পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিকে ফিরিয়া গিয়াছে। সে খুটির আড়ালের স্ত্রীলোকটিকে সম্বোধন করিয়া কহিতেছে, তুমি কি ক্ষেপে গেলে হারুর মা ? সুদ তা হয়েচে কুললে সাত টাকা দু’আনা ; আর দু’আনাই যদি ছাড় করে নেবে, তার চেয়ে আমার গলায় পা দিয়ে জিভ বের করে মেরে ফেল না কেন ? তাহার পরে উভয়ে এমনি ধস্তাধস্তি শুরু করিয়া দিল, যেন এই সু’স্তমান পয়সার উপরেই তাহদের জীবন নির্ভর করিতেছে । কিন্তু হাকিব মাও যেমন স্থির সঙ্কল্প, একাদশীও তেমনি অটল । দেরি হইতেছে দেখিয়া অপূর্ব উভয়ের বাগবিতণ্ডার মাঝখানেই বলিয়া উঠিল, আমাদের লাইব্রেরীর কথাটা একাদশী মুখ ফিরাইয়া বলিল, আজ্ঞে, এই যে শুনি ;-ই রে নফর, তুই কি আমাকে মাথায় পা দিয়ে ডুবৃতে চাস রে! সে দু’টাকা এখনো শোধ দিলিনে, আবার একটাক চাইতে এসেচিস কোন লজ্জায় শুনি ? বলি সুদ-টুদ কিছু এনেচিস ? নফর ট্যাক খুলিয়া এক আনা পয়সা বাহির করিতেই একাদশী চোখ রাঙ্গাইয়া কহিল, তিন মাস হয়ে গেল না রে ? আর দু’টো পয়সা কই ? নফর হাতজোড় করিয়া বলিল, আর নেই কর্তা ; ধাড়ার পোর কত হাতে-পায়ে পড়ে পয়সা চারটি ধার করে আনচি, বাকী দুটো পয়সা আসচে। হাটবারেই দিয়ে যাব । একাদশী গলা বাড়াইয়া দেখিয়া বলিল, দেখি তোর ওদিকের ট্যাকটা ? নফর বঁা-দিকের ট্যাকটা দেখাইয়া অভিমানভারে কহিল, দুটো পয়সার জন্য মিছে কথা কইচি কর্তা ? যে শালা পয়সা এনেও তোমাদের ঠকায়, তার মুখে পোকা পাডুক, এই বলে দিলুম। একাদশী তীক্ষ্মদৃষ্টিতে চাহিয়া কহিল, খুট চারটে পয়সা ধার করে আনতে পারলি, আর দুটো এমনি ধার করতে পারলি নে ? নফর রাগিয়া কহিল, মাইরি। দিলাসা করলুম না কর্তা ! মুখে পোকা পাডুক । Rbr