পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তা, তা ঠিক । বৈরাগী ত নয়, পিচেশ ! চোখে দেখলেন ত কি করে মোর পয়সা দুটো আদায় নিলে ! বড়োর লাঞ্ছনায় উপস্থিত সকলেই মনে মনে নির্মল আনন্দ উপভোগ করিতে লাগিল। তাঁহাদের মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া বিপিন উৎসাহিত হইয়া চোখ টিপিয়া বলিয়া উঠিল, তোমরা ত ভেতরের কথা জানো না, কিন্তু আমাদের গায়ের লোক, আমরা সব জানি । কে গো বড়ো, আমাদের গায়ে কেন তোমার ধোপা-নাপতে বন্ধ হয়েছিল বলব ? খবরটা পুরাতন । সবাই জানিত । একাদশী সদগোপের ছেলে, জাতি-বৈষ্ণব, নহে। তাহার একমাত্র বৈমাত্রেয় ভগিনী প্ৰলোভনে। পড়িয়া কুলের বাহির হইয়া গেলে, একাদশী অনেক দুঃখে অনেক অনুসন্ধানে তাহাকে ঘরে ফিরাইয়া আনে । কিন্তু এই কদাচারে গ্রামের লোক বিস্মিত ও অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া উঠে। তথাপি একাদশী মা-বাপ মরা এই বৈমাত্র ছোটবোনটিকে কিছুতেই পরিত্যাগ করিতে পারে নাই। সংসারে তাহার। আর কেহ ছিল না ; ইহাকেই সে শিশুকাল হইতে কোলে-পিঠে করিয়া মানুষ করিয়াছিল, তাহার ঘটা করিয়া বিবাহ দিয়াছিল । আবার অল্প বয়সে বিধবা হইয়া গেলে, দাদার ঘরেই সে আদর-যত্নে ফিরিয়া আসিয়াছিল। বয়স এবং বুদ্ধির দোষে এই ভগিনীর এতবড় পদস্থলনে বৃদ্ধ কঁাদিয়া ভাসাইয়া দিল ; আহার-নিদ্ৰা ত্যাগ করিয়া গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে ঘুরিয়া অবশেষে যখন তাহার সন্ধান পাইয়া তাহাকে ঘরে ফিরাইয়া আনিল, তখন গ্রামের লোকের নিষ্ঠুর অনুশাসন মাথায় তুলিয়া লইয়া, তাহার এই লজ্জিতা, একান্ত অনুতপ্ত, দুর্ভাগিনী ভগিনীটিকে আবার গৃহের বাহির করিয়া দিয়া নিজে প্ৰায়শ্চিত্ত করিয়া জাতে উঠতে একাদশী কোনমতেই রাজী হইতে পারিল না। অতঃপর গ্রামে তাহার ধোপা-নাপিত-মুদা প্রভৃতি বন্ধ হইয়া গেল। একাদশী নিরুপায় হইয়া ভোক লইয়া বৈষ্ণব হইয়া এই বারুইপুরে পলাইয়া আসিল ; কথাটা সবাই জানিত ; S را