টাকা এখন শুধু দাও। তাই নিয়ে যাও মা । ঘোষালমশাই, খাতাটা একবার দাও, সই করে নেই ; আর বাকী টাকার তুমি একটা চিঠি করে দাও। ঘোষাল কহিল, আমি সই করে এনে নিচ্চি। তুমি আবারএকাদশী কহিল, না না, আমাকেই দাও না ঠাকুর, নিজের চােখে দেখে দিই। বলিয়া খাতা লইয়া অধ্যামিনিট চোখ বুলাইয়া হাসিয়া কহিল, ঘোষালমশাই, এই যে একজোড়া আসল মুক্ত ব্ৰাহ্মণের নামে জমা রয়েছে। আমি জানি। কিনা, ঠাকুরমশাই আমাদের সব সময় চোখে দেখতে পায় না, বলিয়া একাদশী দরজার দিকে চাহিয়া একটু হাসিল। এতগুলি লোকের সুমুখে মানিবের সেই ব্যঙ্গোক্তিতে ঘোষালের মুখ কালো হয়ে গেল। সেদিনের সমস্ত কর্ম নির্বাহ হইলে অপূর্ব সঙ্গীদের লইয়া যখন উত্তপ্ত পথের মধ্যে বাহির হইয়া পড়িল, তখন তাহার মনের মধ্যে একটা বিপ্লব চলিতেছিল। ঘোষাল সঙ্গে ছিল, সে সবিনয়ে আহবান করিয়া কহিল, আসুন, গরীবের ঘরে অন্ততঃ একটু গুড় দিয়েও জল খেয়ে যেতে হবে। অপুর্ব কোন কথা না কহিয়া নীরবে অনুসরণ করিল। ঘোষালের গা জ্বলিয়া যাইতেছিল । সে একাদশাকে উদ্দেশ্য করিয়া কহিল, দেখলেন, ছোটলোক ব্যাটার আস্পধা ? আপনাদের মত ব্ৰাহ্মণসন্তানের পায়ের ধূলো পড়েছে, হারামজাদার ষোল পুরুষের ভাগ্যি! ব্যাটা পিচেশ কিনা পাচ গণ্ডী পয়সা দিয়ে ভিখারী বিদেয় করতে চায় । বিপিন কহিল, দু’দিন সবর করুন না ; হারামজাদা মহাপাপীর ধোপা-নাপতে বন্ধ করে। পাচ গণ্ডা পয়সা দেওয়া বার করে দিচ্চি । রাখালবাবু আমাদের কুটুম, সে মনে রাখবেন ঘোষালমশাই । ঘোষাল কহিল, আমি ব্ৰাহ্মণ । দু’বেল সন্ধ্যে-আহ্নিক না করে জলগ্ৰহণ করিনে, দুটাে মুক্তোর জন্যে কি-রকম অপমানটা দুপুরবেলায় আমাকে করলে চোখে দেখলেন। ত । ব্যাটার ভাল হবে ?
পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৮
অবয়ব