পাতা:বিলাসী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এতদিন শুধুমাত্র সে আপনাকেই আপনি ঠকাইয়াছে। সেই নিভৃত গোপন-কক্ষে দিবানিশি উভয়ে মুখোমুখি বসিয়া আছে— প্ৰেমালাপ করিতেছে না, কলহ করিতেছে না।--কেবল নিঃশব্দে উভয়ের চক্ষু বাহিয়া অশ্রু বহিয়া যাইতেছে। নিজেদের জীবনের এই একান্ত করুণ চিত্ৰটি তাহার মনশচক্ষের অগোচর ছিল বলিয়াই ইতিমধ্যে গৃহে তাহার অনেক উৎসবরজনীর নিম্বফল অভিনয় হইয়া গেলা-পরাজয়ের লজা তাহাকে ধুলির সঙ্গে মিশাইয়া দিল না । কিন্তু আজিকার দিনটা ঠিক তেমনি করিয়া কাটিতে চাহিল না ; কেন, সেই কথাটাই বলিব । জন্মতিথি উপলক্ষে প্রতি বৎসর তাহার গৃহে একটা আমোদআহলাদ ও খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান হইত। আজ সেই আয়োজনটাই কিছু অতিরিক্ত আড়ম্বরের সহিত হইতেছিল। বাটীর দাসদাসী হইতে আরম্ভ করিয়া প্ৰতিবেশীরা পর্যন্ত আসিয়া যোগ দিয়াছে । কেবল তাহার নিজেরই যেন কিছুতে গা নাই। সকাল হইতে আজ তাহার মনে হইতে লাগিল, সমস্ত বৃথা, সমস্ত পণ্ডশ্ৰম ! কেমন করিয়া যেন এতদিন তাহার মনে হইতেছিল, ওই লোকটাও দুনিয়ার অপর সকলেরই মত সেও মানুষ সেও ঈর্ষার অতীত নয় । তাহার গৃহের এই যে সব আনন্দ-উৎসবের অপর্যাপ্ত ও নব নব আয়োজন, ইহার বার্তা কি তাহার রুদ্ধ বাতায়ন ভেদিয়া সেই নিভৃত কক্ষে গিয়া পশে না ? তাহার কাজের মধ্যে কি বাধা দেয় না ? হয়তবা সে তাহার তুলিটা ফেলিয়া দিয়া কখনও স্থির হইয়া বসে, কখনও বা অস্থির দ্রুতপদে ঘরের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়ায়, কখনও বা নিদ্রাবিহীন তপ্ত শয্যায় পড়িয়া সারারাত্রি জ্বলিয়া পুড়িয়া মরে, কখনও বা-কিন্তু থাক সে-সব } কল্পনায় এতদিন মা-শোয়ে একপ্রকার তীক্ষ আনন্দ অনুভব 8