পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাদখ [ २४२ ] লাদখ মন্থয্যের বাস নাই। এখানকার অধিত্যক ও উপত্যকামাত্রই সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ৯• • • ও ১৭০০ • ফিটের মধ্যবৰ্ত্তী এবং তন্মধ্যবৰ্ত্তী অনেকগুলি পৰ্ব্বতশৃঙ্গও ২৫ হাজার ফিটের কম নয়। এখানে সিন্ধু এবং তাহার সায়ক, নিওত্রা, চানচেঙ্গমে ও জানস্কর শাখা প্রবাহিত। পাৰ্ব্বত্য খাতবিশেষ লবণজলে পূর্ণ, তন্মধ্যে পাঙ্গকোঙ্গ ও ছোমোরিরি প্রধান । এই জনপদের প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও অসাধারণ তুষারশীতল হিমালয় শিরে স্থাপিত হইয়াও এখানে গ্রীষ্মের মাত্র অত্যধিক বলিয় বোধ হয়। দিবাভাগে এখানে দারুণ উষ্ণতা এবং রাত্ৰিতে মৰ্ম্মভেদী শৈত্য। শীতের আধিক্য এবং বায়ুর রূক্ষত্মনিবন্ধন এখানে বিশেষ কোন ফসলাদি উৎপন্ন হয় না। স্থানীয় তুষারমণ্ডিত শৈলশৃঙ্গ ব্যতীত এখানে আর কোন বিষয়েই প্রাকৃতিক সৌন্দর্ঘ্যের গাম্ভীৰ্য্য পরিলক্ষিত হয় না, কেবল মাত্র পর্বতশিখয়জাত ঝাউ, ক4কপ্রকার ফল বৃক্ষ ও কোন কোন কলাই স্থানবিশেষে জন্মিতে দেখা যায়। এই প্রদেশের উত্তরপূৰ্ব্ব অধিত্যকায় এবং পৰ্ব্বতের ঢালু সামুদেশে মধ্যে মধ্যে বনমালা দৃষ্ট হয়। কিন্তু সেই বৃক্ষগুলি প্রায়ই পত্রহীন এবং সেই জমিতে কোন প্রকার সব জিই উৎপন্ন হয় মা । এখানকার বন্ত ওস্তুর মধ্যে কিয়াঙ্গ নামক বহু-গর্দভ, ভেড়া, ছাগল, খরগোষ ও Maruut এবং পক্ষীর মথ্যে ঈগল, পেরু, পাজ ও বাল-ছাস প্রধান। পালিত পশুর মধ্যে সচরাচর পনিঘোড়া, গর্দভ, গোরু, ছাগল, ভেড়া ও কুকুর দেখা যায়। লাদকবাসীর পালিত ভেড়ার লোমে শাল্ল প্রস্তুত হয়। ঐ লোম প্রধানত: কাশ্মীর, নেপাল ও ইংরাজাধিকৃত ভারতে প্রেরিত হষ্টয়া থাকে। ১৮৫৩ খৃষ্টাব্দে ডাঃ কনিংহাম লাদক হইতে কাশ্মীরে ২৪০০ মণ পশমের রপ্তানীর বিযর উল্লেখ করিয়াছেন। এখানকার ছাগই সাধারণের বিশেষ উপকারে লাগে। ঐ সকল বৃহদাকার পাৰ্ব্বতীয় ছাগলের দুগ্ধ তাহারা পান করে এবং ছাগলের পুষ্ঠে পণ্যদ্রব্যসমূহ চাপাইয়া স্থানান্তরে লইয়া যায় । কনিংহাম একদিন ঐক্লপ ছয় হাজার ছাগপৃষ্ঠে শাল, পশম, সোহাগা ও গন্ধক প্রভৃতি পণ্যদ্রব্য বহনের উল্লেখ করিয়াছেন । লাদকবাসী বণিক সম্প্রদায় ঐ সকল দ্রব্য লইয়া পাৰ্ব্বত্যপথে দক্ষিণপশ্চিম প্রদেশভাগে অবতরণ করিত। এখানে যে সকল দ্রব্য উৎপন্ন হয়, তাহার মধ্যে পশম, সোহাগ, গন্ধক ও শুষ্ক ফলাদি প্রধান । ঐ সকল দ্রব্য তাহার কাশ্মীর ও নিকটবৰ্ত্তী হিন্দুস্থান, ইয়ারকনা, খোটান এবং উত্তর ও পূৰ্ব্বে তিব্বতীয় প্রদেশভাগে বিক্রয়ার্থ লইয়া যায়। ঐ সকল দ্রব্যবিক্রয়ে তাহাদের যথেষ্ট লাভ হয়। তাহারা সেই মূল্যের বিনিময়ে ভারত হইতে কার্পাসবক্স, কাচ চামড়া, পরিষ্কৃত চৰ্ম্ম, নানাপ্রকার শস্ত, বন্দুক, কামান ও চা প্রকৃতি দ্রব্য এবং চীনসাম্রাজ্য হইতে ছাগ ও ভেড়ার পশম, চা, স্বর্ণরেণু, রূপ, নানারূপ প্রাচীন মুদ্রা, রেশম ও চরস প্রভৃতি দ্রব্য আমদানী করিয়া থাকে। এই প্রদেশের মধ্যবৰ্ত্তী রূপক্ষ জেলায় আসিতে দুইটী উৎকৃষ্ট পথ আছে। রূপক্ষ হইতে বড়লাচ গিরিসঙ্কট দিয়া ইংরাজাধিকৃত ভারতে উপনীত হওয়া যায় এবং পরঙ্গ-ঘাট দিয়া লাহুল ও সিমলার শৈত্যাবাসে যাতায়াতের সুবিধা হয় বলিয়া অনেক ভ্রমণকারী বণিক্‌ ঐ পথে ভারত হইতে রূপসু ও সিমলা প্রভৃতি স্থানে গমন করিয়া থাকে । লাসা-নগরবাসী চা-ব্যবসায়িগণ লে প্রদেশে গমনকালে রূপমুর মধ্য দিয়া যাতায়াত করে । এথানকার অধিবাসিগণ লাদথি নামে পরিচিত । ইহার বৌদ্ধধৰ্ম্মাবলম্বী। ইহাদের খৰ্ব্বাকৃতি ও দৃঢ় গঠন দেখিলে কদৰ্য্য তুরাণীয় জাতির শাখাভূক্ত বলিয়াই মনে হয়। ইহার সাধারণতঃ নিৰ্ব্বিরোধী। দলবদ্ধ হইয়া একত্র গ্রামে বাস করে, চাসবাসই তাহদের প্রধান উপজীবিকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ৯৫০০ নাগাদ ১৩৫০০ ফিট, উচ্চ স্থানে ইহাদের বাস আছে । ইহারা সৰ্ব্বদাই মনের আনন্দে বিভোর ; কোন বিশেষ কারণে, মদিরাদি মাদকদ্রব্য বা চঙ্গপানে উন্মত্তপ্রায় না হইলে ইহার কখনও কাহার সঙ্গে বিবাদ করে না । ইহাদের বেশভূষার বিশেষ পারিপাট্য নাই। পশমনিৰ্ম্মিত চোগা, পায়জাম, কোমরবন্দ ও পায় মোট জুতা ব্যবহার করে। পুরুষেরা এবং স্ত্রীলোকেরা ঘাঘরার দ্যায় এক প্রকার অঙ্গরাখায় সৰ্ব্বাঙ্গ আবৃত করে, স্কন্ধদেশে সলোম চৰ্ম্মচ্ছদ ও মস্তকে কড়ি বা শামুক দ্বারা অলঙ্কৃত বস্ত্র আচ্ছাদন করিরা থাকে। ঋতুর পরিবর্তনামুযায়ী ইহাদের বেশপরিপাট্য বা কোনরূপ পার্থক্য লক্ষিত হয় না। সকল লাদর্থী পরিবারেই অল্প বিস্তর কৃষিক্ষেত্র রাখে । এখানে যবেরই অধিক চাস হয় । কোথাও কোথাও নিম্নজমিতে গম ও কলাই বোন হয়। ঘনত্বন্ধে যব সিদ্ধ করিয়া ইহারা খাইতে, ভালবাসে । চঙ্গ নামক মদ্য সাধারণের প্রিয়। অপেক্ষাকৃত ধনবান ব্যক্তিরাই চা পান করিয়া থাকে। ইহারা সবলকায় ও কৰ্ম্মঠ। অনায়াসেই বড় বড় বোঝা উচ্চ পৰ্ব্বতোপরি লইয়া যাইতে পারে। স্ত্রীলোকের পুরুষের ষ্ঠায় বলিষ্ঠ ও কৰ্ম্মপটু। ইহাদের মধ্যে অবরোধপ্রথা নাই । ইহার ইচ্ছামত যথাস্থানে বিচরণ করিয়া বেড়ায়। ধনবান ব্যক্তি ভিন্ন সাধারণতঃ রমণীদিগের একাধিক স্বামী দৃষ্ট হয়। ইহাতে তাহার কোন দোষ বিবেচনা করে না । সম্ভবতঃ প্রত্যেক পরিবারের নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি থাকায়, তাহার উৎপন্ন শস্তাদি হইতে ইহার আপন আপন পরিবারদিগকে লালন পালন করিতে পারে.