পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লামা [ २४० ] লামা, ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়ন করিয়া প্রচার করেন । কেবল তিববতীয় বর্ণমালার স্বরসামঞ্জন্ত দ্য তিনি সেই অক্ষরমালায় আবগুক মত কতকগুলি চিহ্ন আবিষ্কার করিয়াছিলেন । ইহাই পরবৰ্ত্তিকালে তিব্বতীয় বর্ণমালা বলিয়া পরিচিত হয় । থোগ্নি বৌদ্ধধৰ্ম্মগ্রন্থের অনুবাদ কার্য্যে জীবন অতিবাহিত করিলেও, প্রকৃত ধৰ্ম্ম প্রচারক বা বৌদ্ধগতিরূপে আপনাকে প্রতিষ্ঠা করিতে পারেন নাই ; কিন্তু রাজা স্রোঙ -ংসন গম্পে বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠাতা বলিয়া বোধিসত্ত্ব অবলোকিতের অবতাররূপে পূজিত হইয়াছিলেন। র্তাহার পত্নী চীনরাজস্থাহিতা নৃেছেঙ্গ অবলোকিতের পত্নী তারাদেবীর নামে শ্বেতাঙ্গিনী তারা এবং নেপালরাজকন্যা ক্রকুটা তারা দেবী বলিয়া পূজিত হন। ফ্রকুট তারার বর্ণ নীল এবং মূৰ্ত্তি অতীব ভীষণা। তিনি অহরহ স্বীয় সপুষ্ট্ৰী বেনছেঙ্গেল্প সহিত কলহ করিতেন বলিয়া তাহার উগ্ৰমূৰ্ত্তি কল্পিত হইয়াছে। আনুমানিক ৬৫০ খৃষ্টাব্দে রাজা স্রোঙ -ংসন গম্পে পরলোক গমন করিলে তৎপৌত্র মঙ্গস্রোঙ মঙ্গ-সন রাজার বৌদ্ধধৰ্ম্মযাজক মৃথরের প্রতিনিধিত্বে রাজ্য শাসন করেন। উহার পরবর্তিকাল । হইতে তিব্বতে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভূতোপাসক ষীমান ধৰ্ম্মের প্রভাব বৃদ্ধি হয়। প্রায় শতাব্দ পরে উক্ত বংশে রাজা থি-স্রোঙ দেংসানের রাজত্বকালে পুনরায় বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রাধান্ত লাভ করে। চীনসম্রাট, ২ছঙ্গ.ংসোঙ্গের পালিত কন্যা ছিন ছেঙ্গের গর্ভে এই রাজকুমারের জন্ম হয়। বৌদ্ধধৰ্ম্মে মাতার আসক্তিবশতঃ পুত্রও বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত হন। তিনি কুলপুরোহিত ভারতীয় বৌদ্ধযতি শাস্তুরক্ষিতের পরামর্শ অনুসারে ভারতবর্ষ হইতে গুরু পদ্মসম্ভবকে আনিতে দূত প্রেরণ করেন। পদ্মসম্ভব তৎকালে বিহারস্থ নালন্দা মঠে তান্ত্রিক যোগাচাৰ্য্য শাখায় বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন। প্রবাদ, গুরু পদ্মসম্ভব শাস্তরক্ষিতের ভগিনী সন্দরবাকে বিবাহ করেন । - রাজার আহবানে উৎফুল্ল হইয়া পদ্মসম্ভব নেপাল রাজ্য মধ্য দিয়া তিব্বতে যাত্রা করেন । ৭৪৭ খৃষ্টাব্দে তিনি রাজধানীতে উপনীত হইয়া রাজসকাশে যাত্রা বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলেন। পথি মধ্যে তিনি কিরূপ ডাকিনী ও যক্ষিণীগণের প্রভাব খৰ্ব্ব করিয়াছিলেন, তাহাও রাজসমীপে নিবেদন করিয়া বলেন যে, *তাহারা বুদ্ধের প্রভুত্ব স্বীকার করিয়াছে, আর কাহারও অপকার করিবে না। আমিও তাহাদিগকে অভয় দিয়া বলিয়াছি যে, তোমরাও আমার আদেশে পুজা ও বলি পাইবে।” ইহাতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ভারতের অৰ্দ্ধ-সভ্য ও অসভ্য জাতিকে বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিতে প্রয়াস পাইয়া যখন বৌদ্ধাচাৰ্য্যগণ দেখিলেন যে,তাহার কুসংস্কারে এবং পৰ্ব্বত,বৃক্ষ ও ভূতাদির উপাসনা লইরা এতই মোহাড়িভূত হইয়া রহিয়াছে যে, তাহাজের খদয় হইতে এই কুসংস্কাররূপ কুঞ্জ কটক অপনোদিত করিয়া নিৰ্ব্বাণমুক্তি ও প্রতীত্য-সমুৎপাদন্ধপ মহাধৰ্ম্মবীজ তাহাতে বপন করা নিতান্তই দুরূহ ব্যাপার, তখন তাহারা দেবরূপে পূজ্য সেই সকল ভীষণদৃশু অপদেবতাগিকে প্রকৃত দেবরূপে গণ্য করিয়া “ন দেবাঃ সৃষ্টিনাশকাঃ” বাক্যের সার্থকতা রক্ষা করিতে প্রয়াস পাইলেন । র্তাহারা প্রচার করিতে লাগিলেন, “এই সকল পিশাচ, যক্ষ, ডাকিনী, যোগিনী প্রভৃতি বুদ্ধের মঙ্গলময় করুণায় মন্দকারী শক্তি বিসর্জন করিয়া এক্ষণে জীবের মঙ্গল কামনায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন। র্তাহারা আর জীবের অপকার করিবেন না । বরং যাহাতে জীবসত্যের মঙ্গল ও মুক্তিলাভ হয়, তদ্বিষয়ে সহায়তা করিবেন, সুতরাং তাহারা সাধারণের পুঞ্জ্য, তাহদেরও বলি দেওয়া কৰ্ত্তব্য ।” এইরূপে যেমন ভারতে বৌদ্ধ-তাঞ্জিকযুগে সাধারণের চিত্তবৃত্তি আকর্ষণ করিবার অভিপ্রায়ে দশবাহুশালিনী দুর্গ, লোলরসন করালবদন কালী, বিস্ফার্তিনেত্র বিরূপাক্ষ, রক্তবর্ণ ভীষণদৃশু শীতলা, করালদংষ্ট্র বারাহী প্রভৃতি দেব দেবীর আবির্ভাব হইয়াছিল, বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবও তিব্বতে উপনীত হইয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন তিব্বতবাসীকে পুৰ্ব্বতন ধৰ্ম্মে বিশ্বস্ত রাখিয়া তাহদের হৃদয়ে যুদ্ধের প্রাধান্ত স্থাপনপূৰ্ব্বক বৌদ্ধধৰ্ম্মবীজ বপন করিয়াছিলেন। এই পৌত্তলিকমিশ্রিত বৌদ্ধধৰ্ম্ম মূলধৰ্ম্মের সহিত মিলিত হইয়া লামা (রম) বা ব্ৰহ্মধৰ্ম্ম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করিল। তিববতীয় ভাষায় লা-ম শব্দে পরম পুরুষ বুঝায় ; বুদ্ধই পরম পুরুষ অর্থাৎ যাহার মহীয়সী শক্তিপ্রভাবে অপকৰ্ম্ম ভূতগণও বশীভূত হইয়া সাধারণের মঙ্গলার্থে প্রণোদিত হইয়াছিল। সেই পরম-পুরুষাৰ্থ ক্রমে শ্রেষ্ঠ মঠাধ্যক্ষ উপাধ্যায় মাত্রে ও বৌদ্ধযতি সাধারণে আরোপিত হইল। গুরু পদ্মসম্ভবের নিকট বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রকৃত মৰ্ম্ম ও প্রভাব অবগত হইয়া এবং তিব্বতীয় প্রাচীন ভৌতিক ক্রিয়াকাগুগুলিতে তাহার সবিশেষ আস্থা দেখিয়া রাজা থি-স্রোঙ:দেৎসন তৎপ্রবর্তিত লামা বা শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্মের পক্ষপাতী হন। তাহারই । আগ্রহে এবং উৎসাহে ৭৪৯ খৃষ্টাব্দে তিব্বতের সম-যাস্ নগরে প্রথম বৌদ্ধমঠ প্রতিষ্ঠিত হইল। উহা মগধের ওদওপুরীর সুপ্রসিদ্ধ বৌদ্ধমঠের অমুকরণে নিৰ্ম্মিত হয়, স্বয়ং পদ্মসম্ভব ঐ মঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন । যতিবর শাস্তুরক্ষিত প্রতিষ্ঠাকাৰ্য্যে গুরুর যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছিলেন। ঐ মঠেই প্রথমে লামাসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা হয় এবং শাস্তরক্ষিত তথাকার প্রথম আচাৰ্য্য বা উপাধ্যায় হইয়া ত্রয়োদশ বর্ষকাল অসীম পরিশ্রমে ধৰ্ম্মকাৰ্য্য পরিচালন করিয়াছিলেন । তিনি এক্ষণে লামাসমাজে আচাৰ্য্যৰোধিসম্বরূপে পূজিত। প্রসিদ্ধ বৌদ্ধাচাৰ্য শারিপুত্র, আনন,