পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ [ २२ ] বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ সৰ্ব্বশক্তিমান, সমস্ত কল্যাণগুণের আকর, ধৰ্ম্মাধৰ্ম্মাশুিন্ত ; জীব তোহার বিপরীত । ভেদাভেদবাদ, দ্বৈতাদ্বৈতবাদ এবং অনেকাস্তবাদ বিশিষ্টা ঙ্গৈতবাদের নামান্তর মাত্র । এই মতের স্থল তাৎপৰ্য্য এই যে, | ব্ৰহ্ম একও বটেন এবং অনেক ও বটেন । বৃক্ষ যেরূপ অনেক শাখাযুক্ত, ব্রহ্মও সেইরূপ অনেক শক্তিজন্ত নানাবিধ কাৰ্যা স্মৃষ্টিযুক্ত । সুতরাং ব্রহ্মের একত্ব ও নানান্তু উভয়ই সত্য। বৃক্ষ যেরূপ বৃক্ষরূপে এৰু, শাখারূখে নানা, সমুদ্র যেরূপ সমুদ্ররূপে এক, ফেন তরঙ্গাদিরূপে নান, মৃত্ত্বিকা স্বেরূপ মুক্তিক রূপে এক, ঘট শরাবাদিরূপে নান, ব্ৰহ্মও সেইরূপ ব্রহ্মস্বরূপ এক, এবং জগন্ধপে নানা । জীব ব্রহ্ম হইতে অত্যন্ত ভিন্ন হইলেও ব্ৰহ্মভাব হইতে পারে না। উপনিষৎসমূহে কিন্তু জীবের ব্ৰহ্মভাব কথিত হইয়াছে। পক্ষান্তরে জীবও ব্রহ্মের অত্যন্ত অভেদ হইলে লৌকিক ও শাস্ত্রীয় সমস্ত ব্যবহার বিলুপ্ত হয়। কেননা সমস্ত ব্যবহারই ভেদসাপেক্ষ । লৌকিক প্রত্যক্ষাদি ব্যবহার, জ্ঞাতা, জ্ঞেয় এবং জ্ঞানসাধন ভিন্ন হইতে পারে না । ধৰ্ম্মমুষ্ঠানরূপ শাস্ত্রীয় ব্যবহার ও স্বর্গাদিফল, কৰ্ম্ম, কৰ্ত্তা, কৰ্ম্মসাধন .এবং কৰ্ম্মে অৰ্চনীয় দেবতা এই সকল ভেদ অপেক্ষা করে । তেলবুদ্ধিভিন্ন এ সকল ব্যবহার হইতে পারে না। অথচ এসকল ব্যবহারেরও অপলাপ করা যাইতে পারে না । জীব, জগৎ ও ব্রহ্মা অত্যন্ত ভিন্নও নহে, অত্যন্ত অভিন্ন ও নহে, কথঞ্চিং ভিন্ন এবং কথঞ্চি অভিন্ন । সুতরাং ব্ৰহ্ম এক এবং অনেক । তন্মধ্যে যখন একত্বাংশ জ্ঞান হয়, তখন মোক্ষ ব্যবহার এবং ভেদাংশ জ্ঞান হইলে লৌকিক ও বৈদিক ব্যবহার সিদ্ধ হইয়া থাকে । শৈবাচাৰ্য্য এবং অদ্বৈতবাদিগণ বলেন, এই যে বিশিষ্টাদ্বৈতমত অভিহিত হইল, ইহা নিতা স্তু অসঙ্গত। কারণ বস্তুদ্বগ্ন এককালে পরম্পর ভিন্ন ও অভিন্ন হইতে পারে না । কেননা ভেদ ও অভেদ পরম্পর বিরোধী। অভেদ কিনা ভেদের অভাব, ভেদ ও ভেদের অভাব এককালে এক বস্তুতে থাকী অসম্ভব । অথচ কাৰ্য্য কারণ যদি অভিন্ন হয়, তাহা হইলে জগৎ ব্রহ্মের অভিন্ন হইতে পারে। কিন্তু কাৰ্য্য ও কারণ অভিন্ন হইলে যেমন মৃত্তিকারূপে ঘট শরাবাদির এবং সুবর্ণরূপে কুণ্ডলমুকুটাদির একত্ব বলা হয়, সেইরূপ ঘট শরাবাদি ও কুগুলমুকুটাদিরূপেও একত্ব বলা হয় না কেন ? অর্থাৎ ঘট শরাবাদি ও,কুণ্ডল মুকুটাদিরূপে যেমন নানাত্ব বলা হয়, সেইরূপ ঐ রূপেই একত্ব ও বলা হয় না কেন ? কারণ মৃত্তিক ও ঘটশরাবাদি এবং সুবর্ণ ও কুণ্ডল মুকুটাদি অভিন্ন হইলে মৃত্ত্বিক সুবর্ণাদির ধৰ্ম্ম একত্ব ঘটশরাবাদি ও কুণ্ডল মুকুটাদিতে এবং অতএব l ঘটশরাবাদি ও কুণ্ডল মুকুটাদির क्षं-नानां মৃৎসুবর্ণাদিতে অবশ্যই আছে, ইহা অস্বীকার করিৰার উপায় নাই । কেননা কাৰ্য্য ও কারণ যখন এক ৰস্তু, তখন একত্ব ও নানাত্বধৰ্ম্মও অবশ্য কাৰ্য্য ও কারণগত হইবে । এই স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ে অধিক বলা অনাবশ্যক । - কোন কোন আচাৰ্য্য এই দোষ পরিহারের জন্ত অনুরূপ সিদ্ধাস্ত করিয়াছেন । তাহারী বলেন, ভেদ ও অভেদ অবস্থাভেদে অবস্থিত। অর্থাৎ অবস্থাভেদে একত্ব ও নানা উভয়ই সত্য । সংসারাবস্থায় নানাত্ব এবং মোক্ষাবস্থায় একত্ব। অর্থাৎ ংসারাবস্থায় জীব ও ব্রহ্ম ভিন্ন এবং লৌকিক ও শাস্ত্রীয় ব্যবহার সত্য । মোক্ষাবস্থায় জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন এবং তখন লৌকিক ও শাস্ত্রীয় সকল ব্যবহার নিবৃত্ত হয় । তাহাদের এই সিদ্ধান্তও সঙ্গত হয় না, কারণ ব্ৰহ্মাত্মভাববোধক শ্রুতিতে অবস্থাবিশেষের উল্লেখ নাই। জীবের অসংসারি ব্রহ্মভেদ সম্বাতন অর্থাৎ সৰ্ব্বদা বিদ্যমান, ইহাই শ্রতি দ্বারা অবগত হওয়া যায়। শ্রুতিতে উহt সিদ্ধের ন্যায় নির্দিষ্ট হইয়াছে । শ্রুতিবাক্যের অবস্থাবিশেষ অভিপ্রায় কল্পনা করা নিম্প্রমাণ । ‘তত্ত্বমসি’ এই শ্রীতিবোধিত জীবের ব্ৰহ্মভাব কোনরূপ প্রযত্ন বা টেষ্টসাধ্যরূপে নির্দিষ্ট হয় নাই । অসি’ এই পদ দ্বার স্বতঃসিদ্ধ অর্থের প্রজ্ঞাপন করা হইয়াছে মাত্র। অতএব যাহারা বলেন, জীবের ব্রহ্মভাব জ্ঞান-কৰ্ম্মসমুচ্চয়সাধ্য, তাহদের সিদ্ধান্তও সঙ্গত নহে। কারণ ছন্দোগ্য উপনিষদে উক্ত হইয়াছে যে, কোন ব্যক্তি তস্করসন্দেহে রাজপুরুষ কর্তৃক ধৃত হইলে এবং ধৃতব্যক্তি তাস্কৰ্য্যদোষ স্বীকার না করিলে যথtশাস্ত্র তপ্তপরশু দ্বারা তাহার পরীক্ষা করা হয় । ধৃতব্যক্তি বস্তুগত্য তস্কর হইলে তপ্তপরশু দ্বারা দগ্ধ ; সুতরাং রাজপুরুষ কর্তৃক বদ্ধ হয়। কেননা সে অনুতাভিসন্ধ মিথ্য অর্থাৎ কথা বলিয়াছে । সে বাস্তবিক তস্কর হইয়া ও বলিয়াছে যে, আমি তস্কর নহি । এই অমৃতাভিসন্ধিই তাহার বন্ধনের হেতু। পক্ষান্তরে খুতব্যক্তি বস্তুতঃ তস্কর না হইলে সে তপ্ত পরশুদ্বারা দগ্ধ হয় না, সুতরাং রাজপুরুষ কর্তৃক মুক্ত হয় । কেননা সে সত্যাভিসন্ধ, অর্থাৎ সে সত্য কথা বলিয়াছে, এই সত্যাভিসন্ধিই তাহার মুক্তির কারণ। সেইরূপ নানাত্মদর্শী অমৃতাভিসদ্ধ বলিয়া বন্ধ এবং একত্বদর্শী সত্যাভিসন্ধ বলিয়া মুক্ত হয় । এতদ্বfবা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, একত্ব সত্য, নানাত্ব মিথ্যা । কেননা একত্ব এবং মানব উভয় সত্য হইলে নানাত্বদশী অনৃতাভিসন্ধ হইতে পারে ন} । আরও বিৰেচ্য এই যে, একত্ব ও নানাত্ব উভয় সত্য হইলে একত্ব জ্ঞান দ্বারা নানাত্ব নিবৰ্ত্তিত হইতে পারে না । কারণ