পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোম পরবিত্তাদি দেখিয়া তাহা লইবার জন্ত হৃদয়ে যে অভিলাষ হয়, তাহাকে লোভ কহে । এই লোভ ব্ৰহ্মার অধর দেশ হইতে উৎপন্ন হইয়াছিল। “ক্রমধ্যভবৎ ক্রোধে লোভশ্চাধরসম্ভবঃ ” ( মৎস্তপু” ৩ অ’) গীতায় লিখিত আছে যে, নরকের তিনটী দ্বার, কাম, ক্রোধ ও লোভ, এইজন্ত সৰ্ব্বতোভাবে লোভ পরিহার করা কর্তব্য । পত্ৰিবিধং নরকম্ভেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ । কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তন্মাদেতত্ত্বয়ং ত্যজেৎ ॥” (গীতা ১৩অ•) জগতে একমাত্র লোভ হইতেই যত অনিষ্ট ঘটিয়া থাকে, লোভই পাপের প্রস্থতি, লোভ হইতেই ক্রোধ, কাম, মোহ ও নাশ হইয়া থাকে, অতএব একমাত্র লোভই পাপের কারণ, জগতের লোক লোভে পড়িয়া স্বামী, স্ত্রী, পুত্র ও সহোদর প্রভৃতিকে বিনাশ করিয়া থাকে। “লোভ: প্রতিষ্ঠা পাপস্ত প্রস্থতিলেভি এব চ। দ্বেষক্রোধাদিজনকে লোভ: পাপস্ত কারণম্ ॥ লোভাং ক্রোধঃ প্রভবতি লোভাং কাম; প্রজাস্থতে । লোভান্মোহশ নাশক লোভ: পাপস্ত কারণম্। লোভেন বুদ্ধিশ্চলতি লোভো জনয়তে তৃষাং । তৃষ্ণার্তে দুঃথমাপ্নোতি পরত্রেহ চ মানব: | মাতরং পিতরং পুত্ৰং ভ্রাতরং বা সুহৃত্তমম্। লোভাবিঃে নরো হস্তি স্বামিনং বা সহোদরম্ ॥” ইত্যাদি। (নানা পুরাণাদি নীতিশাস্ত্র ) লোভন ( ক্লী) লুভ-লুটু। ১ লোভ । ২ মাংস। (বৈদ্যকনি ) লোভনীয় (ত্রি) লুভ-অনীয়র। লোভার্হ, লোভের উপযুক্ত। লোভয়ান (ত্রি) লোভোদ্রেককারী। লোভা (দেশজ ) লোভী । লোভিন (ৰি) লোতোস্তান্ততি লোভ ইনি। লোভযুক্ত, বুদ্ধ। পর্যায়— গৰ্দ্ধন, লুব্ধ, অভিলাযুক, তৃষ্ণক, লোলুম্ভ, .লিপ (হেম ) লোভা (ত্রি) লুভ্যতে ইতি লুভ-যৎ । ১ লোভনীয়, লোভার্হ। (পুং ) ২ মুদ্রা (হেম ) ৩ হরিতাল। (বৈক্ষকনি• ) লোম [ লোমন ] (ক্লী) ১ লাঙ্গ,ল । ২ রোম। পৰ্য্যায়-তনুরূহ, শরীরস্থ কেশ । মনুষ্যদেহে এবং অন্যান্ত জীববিশেষের গাত্রচম্বোপরিস্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিবর হইতে যে সকল ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্বচ্যগ্র ও স্বশ্ন স্বল্প মজ্জাজ শারীর কেশ বিনির্গত হইতে দেখা যায়, তাহাই সাধারণতঃ লোম, রোম বা রোয় বলিয়া প্রচলিত। ত্বকের উপরিভাগে উৎপন্ন হওয়ায় ইহার অপর একটা নাম তনুরূহ বা তমুকটু হইয়াছে। যে বিবরে মূলদেশ রাথিরা এই সকল শরীরস্থ কেশচয় পরিবর্তিত হয়, তাহ লোমকূপ নামে কথিত । XVII br? t ઝ૧ ] লোম জীবদেহবিশেষে এই লোম বিভিন্ন প্রকার উৎপন্ন হইয় থাকে। শরীর বিভিন্ন অংশে অতি স্বল্প হইতে অপেক্ষাকৃত স্থলাকার ও বৃহদায়তন লোমরাজি বিরাজিত দেখা যায়। স্থান পার্থক্যানুসারে উহাদের বর্ণও ভিন্ন। বিশেষ করিয়া পৰ্য্যবেক্ষণ করিলে, মনুষ্য শরীরের মস্তক, বক্ষ, পৃষ্ঠ, উরু, পাদমূল প্রভূতি বিভিন্ন স্থানে ঘোর কৃষ্ণকুন্তল হইতে ক্রমে কৃষ্ণমিশ্র লোহিত ও লোহিতান্ত লোমরাজির সমাবেশ দৃষ্ট হইয়া থাকে। ঐ গুলি সাধারণতঃ কেশ বা কুন্তল, চুল, লোম, রোয় প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ পর্য্যায়ে সন্নিবদ্ধ। বিভিন্ন দেশীয় ভাষায়ও মাথার কেশ ও গাত্রলোমের পৃথক্ নাম নির্দিষ্ট হইয়াছে। মসুয্যের গাত্রলোম অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর হওয়ায় তাহ বিশেষ কোন কাজে আইসে না । মনুষ্য জাতির কেশচয় বিশেষতঃ রমণীকুলের আলুলায়িত কুন্তলাম দেশবিশেষে বিশেষ বিশেষ কার্য্যে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। উত্তর ভারতের সুপ্রাচীন প্রমাগতীর্থে পুরুষ ও রমণীগণের মস্তকমুগুনের বিধি আছে, ঐ সকল সুদীর্ঘ কেশচয় তথায় রক্ষিত ও বিক্রীত হইয়া থাকে। উহাতে দড়ি প্রভৃতি ব্যবহারোপযোগী নানা বস্তু প্রস্তুত হইতেছে । এতদ্দেশে “চুলের দড়ি” দিয়া বেণী বিনাইবার ব্যবস্থা দেখা যায়। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, রোমক কর্তৃক কার্থেজ নগরী অবরুদ্ধ হইলে কার্থেজনিবাসিনী বীরনারীগণ রাজধানী রক্ষা কামনায় স্ব স্ব শিরোভূষণ মুচিকণ কেশগুচ্ছ ছিন্ন করিয়া দড়ি প্রস্তুত করিয়াছিলেন । [ রোম-সাম্রাজ্য দেখ । ] শারীরিক রোমসংস্থান লক্ষ্য করিয়া চতুষ্পাদ পশুশ্রেণীকে আবার স্বল্পলোমা ও অতিলোম নামক দুইটী শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। তিব্বত দেশীয় ছাগ, ভেড়া, কাবুলী চুম্বা, চামরাগো (yak ) এবং আইবেক ও লাহুলের ৎসোকি নামক হরিণজাতির লোম পশম বলিয়া থ্যাত। কোন কোন দেশীয় কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি গৃহপালিত জন্তুর গাত্রে বহুল পরিমাণে লোম জন্মে। উষ্ণপ্রধান দেশের বন্ত ভয়কের এবং মুমেরু প্রদেশ ও শীতপ্রধানস্থানবাসী শ্বেতকায় ভল্ল কজাতির গাত্রেও পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে লোম হইয়া থাকে। মহিষ, বরাহ প্রভৃতি স্বল্পলোমা পশুর লোম বিশেষ কোন কার্য্যে আইসে না । বরাহের পৃষ্ঠদেশে দীর্ঘাকার খোচ খোচা এক প্রকার কঠিন লোম উৎপন্ন হয়, উহা “শূকরের কুঁচি” নামে প্রসিদ্ধ। উহাতে ব্রুস প্রভৃতি প্রস্তুত হইয়া থাকে। সিংহের মাথার কেশ বা জটাগুলি কেশর ; অশ্বের মস্তক ও গ্রীবাদেশস্থ বিলম্বিত কেশরাশি চুল, ফুট এবং পুচ্ছের কেশগুলি বালামুচি ; এতরি প্রায় অপর সকল পশুর গাত্রাবরণ চুলগুলি “বাল” বা রোম নামে পরিচিত ।