পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গদেশ (প্রাকৃতিক দৃশ্য)
[৩৯১]
বঙ্গদেশ (নদীমালা)

করিতেছে। উত্তরে হিমাচলশিখর ক্রমোচ্চ শৃঙ্গমালায় সমারোহিত হইয়া যেন একটী অভিনব দৃশ্যপট উন্মোচিত করিয়া দিতেছে। সেই তুষারমণ্ডিত শিখরশিরে অরুণকিরণ প্রতিফলিত হইয়া তুষারধবল পর্ব্বতসানু একটী জ্যোতির্ম্ময় হৈমস্তূপে পর্য্যবসিত হইয়াছে। দিবাভাগে কখন তাহা সূর্য্যকিরণে সমুদ্ভাসিত হইয়া দিগন্ত আলোকে পূর্ণ করিতেছে, কখন বা গাঢ় কুজ্ঝটিকায় সমাচ্ছাদিত থাকিয়া অপূর্ব্ব মেঘমালার ন্যায় নিশ্চল দণ্ডায়মান রহিয়াছে। ঐ পর্ব্বতগাত্র বিধৌত করিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনীসমূহ প্রখর গতিতে সমতল উপত্যকা প্রান্তরে অবতীর্ণ হইয়া পরস্পরের সংযোগে পুষ্টকলেবর হইয়া এক একটী প্রকৃষ্ট জলধারা রূপে প্রবাহিত হইতেছে। উক্ত নদীমালার মধ্যে হিমপাদনিঃসৃত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রই এখানকার প্রধান প্রবাহ। অপরগুলি তাহারই শাখা বা খাল মাত্র। [গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র দেখ।]

 এই নদীমালাই বাঙ্গালার শোভা ও শস্য-সমৃদ্ধির একমাত্র কারণ। হিমালয়পৃষ্ঠ, অথবা উত্তর বঙ্গের উচ্চস্থানসমূহ বিধৌত করিয়া এই নদীমালা নিম্নবঙ্গের নিম্নভূমিতে একটী মৃদ্‌স্তর আনিয়া সঞ্চয় করিয়া থাকে। ঐ স্তরের উর্ব্বরতাশক্তি এতাদৃশ অধিক যে, যে স্থলে ঐরূপ স্তর সঞ্চিত হয়, তথায় পর্য্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার শস্য উৎপন্ন হইয়া থাকে। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের উত্তর উপত্যকা খণ্ড এবং নিমবঙ্গের সমতল প্রান্তর এইরূপে নদীজালে সমাচ্ছন্ন হওয়ায় শস্যক্ষেত্রসমূহে জলদানের বিশেষ সুবিধা ঘটিয়াছে। কখন কখন ঐ নদী সকল বন্যাবিতাড়িত হইয়া উভয় তীরবর্ত্তী গ্রামসমূহ জলমগ্ন করিয়া ফেলে, তাহাতে ভূপৃষ্ঠে এক প্রকার পলি পড়ে। ঐ পলিও শস্যোৎপাদনের বিশেষ উপযোগী। অনেক সময় থাল কাটিয়া নানা স্থানে ও বিল প্রভৃতিতে জল আনিয়া চাসবাসের ব্যবস্থা হইয়া থাকে। উচ্চ ভূমিতে কূপ বা পুষ্করিণ্যাদি খনন দ্বারাও কৃষিকার্য্য সম্পন্ন হয়। এই সকল কৃষিক্ষেত্রে মধ্যে মধ্যে ক্ষুদ্র পল্লী, গণ্ডগ্রাম, নগর বা বাণিজ্যপ্রধান বন্দরসমূহ বিরাজিত। নগর সন্নিধানে নগরবাসিগণের স্বহস্তরোপিত পুষ্পোদ্যান, অথবা ফলবৃক্ষাদি পরিশোভিত উপবনসমূহ ও তন্মধ্যস্থ অট্টালিকাদি স্থানীয় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতেছে। গঙ্গাদি নদীতীরবর্ত্তী গ্রাম বা নগরসমূহ, বিশেষতঃ স্নানের ঘাটে দেবমন্দিরাদি প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া দেশবাসীর ধর্ম্মপ্রাণতার ও স্থাপত্যশিল্পের পরিচয় প্রদান করিতেছে। গ্রাম-মধ্য বা পার্শ্বস্থ এই সকল অট্টালিকা বা মন্দির শ্যামল গ্রাম্য বৈচিত্র্যের একাগ্রতা ভঙ্গ করিয়া দিতেছে। কোথাও কোথাও ভগ্নমন্দির বা প্রাচীন প্রাসাদাদি বিধ্বস্ত হইয়া জঙ্গলপূর্ণ স্তূপরাশিতে পরিণত হইয়াছে। ঐ সকল প্রাচীন কীর্ত্তিনিদর্শন
প্রত্নতত্ত্ববিদের আলোচনার জিনিস। পার্ব্বত্য বনমালায়। ঐ সকল স্তূপোপরি গঠিত জঙ্গলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিশেষ বিকাশ না থাকিলেও তাহাতে ৰিভিন্ন জাতীয় হিংস্ৰ জীবের বাস ঘটয়াছে। এই সকল বনরাজির অদূরেও ভিন্ন দৃশ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাম বিদ্যমান আছে। বাস্তবিকপক্ষে বাঙ্গালার বিভিন্ন নদীবর্ত্তী গ্রাম বা নগরসমূহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এতই বৈষম্য দৃষ্ট হয়, যে সকল স্থানই যেন নবভূষায় সজ্জিত হইয়া দর্শকের চিত্ত আকর্ষণে প্রয়াস পাইতেছে।  এই বাঙ্গালা প্রদেশে যতগুলি নদী বা শাখা নদী দেখা যায়, তন্মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র প্রধান। ঘর্ঘরা, শোণ, গণ্ডক, কুশী, তিস্তা, ভাগীরথী, (জলঙ্গী-সঙ্গমে হুগলী নদী নামে অধুনা খ্যাত), দামোদর, রূপনারায়ণ ও মহানদী প্রভৃতি অপর কয়টী নদী অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র হইলেও প্রধান বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। এতদ্ভিন্ন অনেকগুলি শাখা নদী, অথবা নদীর অংশ বিশেষ বিভিন্ন নামে পরিচিত আছে। যথা—অজয়, আলংখালী, অমানৎ, আঁধারমাণিক, আড়িয়াল-খাঁ, আড়পাঙ্গাসী, আঠারবাঁকা, আত্রাই (আত্রেয়ী), ঔরঙ্গা, বদুদোনা, বাগ্‌দা, বাগ্‌দেবী খাল, বাঘখালি, বাঘমতী, বৈটাঘাটা খাল, বৈতরণী, বক্রেশ্বর, বক্রা, বলবীরা, বলেশ্বর বা হরিংঘাটা, বানর, বনাস, বঙ্গদূনী, বঙ্গালী, বাণগঙ্গা, বাঙ্গারা, বাঁকা, বড়ফেনী, বরাকর, বড়কুলিয়া, বড়াল, বড়ানাই, বারাসিয়া, বর্ণার, বরুয়া, বাটী, বয়া, বেঙ্গা, বেণী, বেতনা বা বুধহাটা, ভদ্রা বা হরিহর, ভৈরব, ভার্গবী, ভোলা, ভোলারী, ভোলী, ভুরেঙ্গী, বিদ্যাধরী, বিজয়গঙ্গ, বিঞ্জাই, বিরূপা, বিষখালী, ব্রাহ্মণী, বুড়ো ধর্লা, বড়তিস্তা, বুড়ামন্ত্রেশ্বর, বড়বলঙ্গ, বুড়ীগণ্ডক, বুড়ীগঙ্গা, বুড়ীগঙ্গী, বুড়ীশ্বর, ছাইমা, চলৌনী, চন্দনা, চাদখাঁলী, চেক্‌নাই, চেঙ্গা, ছিরামতী, ছোটতিস্তা, চিংড়ী, চিতা, চিত্রা, চূর্ণী, ডাকাতিয়া, দাঁক, দুৰ্গাবতী, দাউস, দয়া, দেলুটী, দেও, ধাধার, ধলেশ্বরী, ধলকিশোর বা দ্বারকেশ্বর, ধামড়া, ধনাই, ধনার্জি, ধনৌতী, ধাপা, ধর্ণা, ধর্ত্তা, ঢাউস, ধোবা বা কাওনদী, ধেরেম, ধূষণা, ডিম্‌ড়া, দুধকুমার, দুধুয়া, দুলাই, গর্ভেশ্বরী, গদাধর, গলঘসিয়া, গণ্ডকী, গণ্ডার, গাঙ্গনী বা কালিয়া, গাংড়ী, গড়াই বা গোড়ুই, ঘাঘর, গাজীখালী, ঘোড়াখালি, ঘুগ্‌রী, গোমতী, গুমানী, গুয়াসুবা, গুজরিয়া, গুড়, হলহার, হল্‌দা, হলদী, হাঁচা-কাটাখাল, হাঙ্গরা, হাঁলী, হনূ, হারোয়া, হারাবর্তী, হরসাগর, হাড়ভাঙ্গা, হবোরা, হাতিয়া, ইব্, ইছামতী, ইজ্‌বী, জয়খাল, জলধক্‌কা, যমুনা, যমনী, জামবাড়ী, ঝপঝপিয়া, ঝরাহী, ঝিকিয়া, ঝিনাই, যৌবনেশ্বরী, কপোতাক্ষ, কালাকুশী, কালাই, কালানদী, করতোয়া, কালীগঙ্গা, কালীগাছী, কালীকুণ্ড, কালিন্দী, কালজানী, কমলা, কাণানদী, কাঞ্চী, কাংসা, কঙ্কাই, কাক্‌ড়া,