পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশ (১৩শ ও ১৪শ শতাঁদে অবস্থ) [ ৪৩৭ ] বঙ্গদেশ (খৃঃ ১৪শ শতাব্দে অবস্থা ) সর্দারগণের পরম্পর বিদ্বেষ ও বাঙ্গালার মসনদ-লাভের আকাঙ্ক্ষা পরম্পরের জাতীয়তাকে শক্রতায় পরিণত করিয়াছিল। সুলতানগণের গুপ্তহত্যাই সেই বৈজাত্য পরিণতির মুখ্য কারণ। পক্ষাকরে উপরোক্ত মুসলমান সর্দারগণ বা তদধীন সেনাবৃন্দ যুদ্ধবিষ্ঠাবিশারদ ওঁ অৰ্থগৃদ্ধ ছিলেন। তাহার নিরীহ ধৰ্ম্মভীরু বঙ্গবাসীর গন্ধ-শোষণ করিয়া, অথবা কৌশলপূৰ্ব্বক তাহাদের ভূসম্পত্তি প্রভৃতি বাজেয়াপ্ত করিয়া আপনাদের উদর পূর্ণ করিতেছিলেন ; কিন্তু অর্থহানিনিবন্ধন উপস্থিত দরিদ্রতা হিন্দুর অঙ্গভূষণ হইলেও জাতীয় চিরন্তন গৌরব বিদ্যাভূষণ হিন্দুদিগকে পরিত্যাগ করে নাই ; নবদ্বীপের তাৎকালিক বিস্কা-গৌরব জগতে অবিদিত ছিল না। সেই বিদ্যাবলে হিন্দুগণ মুসলমান সুলতানগণের পরামর্শ, দাতা বা মন্ত্রী হইতেন। সেই মেশামিশিতে হিন্দু ও মুসলমান সমাজে অনেক সাময়িক বিপ্লব সমুপস্থিত হইয়াছিল। প্রায় খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাদের পূৰ্ব্বে মুসলমান আধিপত্য বিস্তৃত হইলেও সে সময় বস্তুতঃ পক্ষে পূৰ্ব্ববঙ্গে হিন্দু সমাজের উপর ব্রাহ্মণগণের অসাধারণ কর্তৃত্ব ছিল। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, রাঢ়ীয় কুলীন ব্রাহ্মণগণ বঙ্গের সুবিস্তৃত শাক্ত সমাজের মন্ত্র গুরুপদে অধিষ্ঠিত হইয়াছিলেন, তাহাদের হস্তে সমাজের নেতৃত্ব ও ধৰ্ম্মনৈতিক কর্তৃত্ব ছিল । সুতরাং এরূপ ব্রাহ্মণকে ং স্তগত কবিতে পারিলে রাজ্যশাসনের অনেকট সুবিধা হইতে পারে, তাল মুসলমান রাজপুরুষগণ বিলক্ষণ বুঝিতেন, কিন্তু সাধারণতঃ পশ্চিমাগত মুসলমানগণ বাঙ্গালীদিগকে ঘোর শত্র মনে করিতেন, হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সদ্ভাব ও প্রতি স্থাপনের পক্ষে এ কারণে প্রথমতঃ যথেষ্ট অসুবিধা ঘটিয়াছিল। যতদিন দিল্লীশ্বরের অধীনে মুসলমান নবাবগণ বঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশ শাসন করিতে ছিলেন, ততদিন হিন্দু ও মুসলমান মধ্যে পরম্পরে প্রতি ও সহানুভূতি জন্মিতে পারে নাই, কিন্তু যখন বঙ্গের মুসলমান শাসনকৰ্ত্তারা দিল্লীশ্বরের প্রভাব অগ্রাহ করিয়া স্বাধীন হইবার চেষ্টা করিতে ছিলেন, তখন হইতেই বঙ্গবাসীর সাহায্য আবশুক হইয়া পড়িয়াছিল। ৭৩৯ হিজির সনে ( ১৩৪৮ খৃষ্টাব্দে ) হিন্দু-মুসলমানের মিলন হইল। এই বর্ষে কথর উদ্দীন মুজঃফর মুবারক শাহ দিল্লীশ্বরকে অমান্ত এবং পূৰ্ব্ববঙ্গের প্রধান প্রধান হিন্দু জমিদার-সাহায্যে সুবর্ণগ্রাম অধিকার করিয়া স্বাধীনতা অবলম্বন করেন। তাহার অব্যবহিত পরেই লক্ষ্মণাবতীতে শামসউদ্দীনের প্রাধান্ত, বহুসংখ্যক বাঙ্গালীকর্তৃক জলপথে ফখর উদ্দীনকে আক্রমণপূর্বক সুবর্ণগ্রাম অধিকার, শামস উদ্দীন ইলয়াসকে শাসনোদেশে সম্রাটু ফিরোজ শাহের বঙ্গে আগমন প্রভৃতি ঘটনাপ্রসঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের মেশামিশির যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় । XVII

  • > *

মুবারক যাহাদের আমুকুল্যে স্বাধীন হইলেন, তাহাদিগকে উপযুক্ত খেলাত ও জায়গীর দিয়া সন্মানিত করেন, কিন্তু এ সম্ভাব স্থায়ী হয় নাই। তিনি স্বজাতীয় ওমরাহগণের পরামর্শে অল্প দিন পরেই হিন্দু সামন্তবর্গকে অবজ্ঞা করিতে লাগিলেন। সেই কারণে অত্যর কাল মধ্যেই তাহার অধঃপাতের স্বত্রপাত হইল। তাহারই অভু্যদয়কালে পশ্চিম বরে শাম্স্ ਦੋਂ ইলাস তাঁহারই নীতির অনুসরণ করিয়া হিন্দু জমিদারগণেব সাহায্যে আপনার সৌভাগ্যপথ প্রশস্ত করিবার অবসর খুজিতে ছিলেন। মুবারকের হিন্দু বিদ্বেষেব পরিচয় পাইবা মাত্র তিনি স্বদল বলে বাঙ্গালী নৌসেনাগণের সাহায্যে মুবারককে আক্রমণ ও সুবর্ণগ্রাম দখল করিয়া লইলেন। তৎপূর্কেই দিল্লীর সম্রাটু ফিরোজ শাহ গিয়াসউদ্দীনকে দমন করিবার জন্ত সসৈন্তে রাঢ়দেশে আগমন করেন। এ সময় পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু জমিদারবর্গ অনেকেই ফিরোজ শাহের পক্ষ অবলম্বন করেন, ও দিকে পূৰ্ব্ব বঙ্গের অনেক সন্ধান্ত হিন্দু জমিদারবর্গ ও পূৰ্ব্ব বঙ্গের বাঙ্গালীবীরগণ ইলিয়াসের পক্ষ হইয়া সমাটের বিকদ্ধে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইলেন। দিল্লীশ্বরের সহিত যখন বঙ্গাধিপের ঘোবতর যুদ্ধ উপস্থিত হয়, তখন সহদেব নামে এক জন বাঙ্গালী বীর বঙ্গাধিপের সেনাপতি হইয়া ঘোরতর যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তিনি এক লক্ষ ৮০ হাজার বাঙ্গালীর সহিত রণক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন করেন । বাঙ্গালী বীরগণের ভীষণ পরিণাম দর্শন করিয়া শামসুদ্দীন দিল্লীশ্বরেব সহিত সন্ধি করিতে বাধ্য হন ; পশ্চিম বঙ্গ হইতে শামসুদ্দীন যখন পুৰ্ব্ব বঙ্গে আসিলেন, সে সময় বহু , জমিদার তাহার পৃষ্ঠপোষক হইয়াছিলেন, তিনি ও ফখর উদ্দীন মুবারকের স্তায় তাহার পক্ষীয় হিন্দুবীরগণকে উপাধিদানে সম্মানিত করিয়াছিলেন । রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদিগের প্রধান কুলগ্রন্থ ধ্রুবানন্দের মহাবংশ হইতে জানিতে পারি, চট্টবংশাবতংশ কুলীনপ্রবর দ্যাকরপৌত্র মহাধনী মনোহরের পুত্ৰ দুৰ্যোধন “বঙ্গভূষণ" উপাধি এবং মুবারকের পক্ষীয় হিন্দু জমিদারবর্গকে পরাস্ত করায় পুতিতুগুবংশীয় প্রসিদ্ধ কুলীন চক্ৰপাণি “রাজজয়ী” উপাধি লাভ করিয়াছিলেন, এইরূপ অন্য জাতীয় বীরগণও উপাধি পাইয়াছিলেন । দিল্লীশ্বর ফিরোজ শাহ র্যাহাদের নিকট সাহায্য পাইয়াছিলেন, তাহদের মধ্যে সাগরীয়ার মহাধনী ও কবিকঙ্কণ উপাধিধারী উদয়ন এবং তাহার মুরারি, মাধব প্রভৃতি সপ্ত বীরপুত্রের নাম উল্লেখযোগ্য। দিল্লীশ্বর প্রত্যাগমন কালে রাঢ়ীয় বীরদিগকেও উপযুক্ত মৰ্যাদাদানে সন্মানিত করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে রাঢ়ীয় কুলীনগ্রর স্বদর্শনপুত্র বিকৰ্ত্তন চট্ট "রাজা” উপাধি এবং মনোহর বঙ্গভূষণের পৌত্র ঐরাম “খান” উপাধি