পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশ ( মোগল-শাসন ) [ 88ના ] বঙ্গদেশ ( মোগল-শাসন ) এই বিপদের দিনে, সম্রাট অকৃবর শাহ বহুসৈন্ত এবং শাসনকৰ্ত্ত, জায়গীরদার ও জমিদারদিগের প্রতি আদেশ দিয়া স্বাজ টোডরমল্লকে বাঙ্গাল ও বেহারের শাসনকর্তা করিয়া পাঠাইলেন। তখন বাঙ্গাল ও বেহার বিদ্রোহি শক্রসস্কুল। বিদ্রোহিদল বাঙ্গালার মোগলাধিকার উৎসন্ন করিতে যত্নশীল। কাজেই হিন্দুরাজগণ হিন্দুর পক্ষাবলম্বন করিলেন। টোডরমল্প হিন্দু জমিদারদিগকে হস্তগত করিয়! তাছাদের সাহায্যে বিদ্রোহীদিগের রসদ বন্ধ করিয়া দিলেন। পরে তিনি মুঙ্গের ও ভাগলপুর হইতে বিদ্রোহিদিগকে বেহারে তাড়াইয়া লইয়া চলিলেন। খাদ্যাভাবে বিদ্রোহিদল বিশেষ কষ্টে পড়িল । এই সময়ে ককেশ লানবংশীয় পাঠান সর্দার বাবা খাঁর মৃত্যু হয় । বিদ্রোহিদল তাহাতে ভগ্নমনোরথ হইয় পড়ে । এদিকে মসুমকাবুলী সদলে বেহারে আসিলেন । ককেশ লান সর্দার জেবৰাবন্দী খাবাসপুর হইতে র্তাড়ায় স্বদলে প্রত্যাবৃত্ত হইলেন। আরচ, বাহাদুর পাটনা আক্রমণের সুযোগ দেখিতে লাগিলেন। রাজা টোডরমল্প সংবাদ পাইবা মাত্র তাহদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করিলেন। ১৫৮৭ খৃষ্টাব্দে রাজা সদলে হাজিপুরে আসিয়া ছাউনী করিলেন এবং উজীর শাহ মনস্থরের দুৰ্ব্ব্যবহারের কথা সম্রাটুকে জানাইলেন । তদনুসারে সম্রাট, আজিম খাঁ। মীর্জাকোই নামক একজন ওমরাহকে বেহারের শাসনকর্তা করিয়া পাঠাইয়া দেন । . এই সময়ে বাসী ও প্রয়াগের শাসনকর্তা রাজদ্রোহী হইলে টোডরমল্ল শাহবাজ থাকে তাহদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন । শাহবাজ খী ঝাসী ও প্রয়াগের বিদ্রোহ দমন করিয়া অযোধ্যার বিদ্রোহ শাস্তি করিলেন । ১৫৮১ খৃষ্টাব্দে অযোধ্যার শাসনকর্তা মসুম ফেরুণ জুদি রাজ্যচ্যুত ও সপরিবারে বন্দী হন। তাহার সমুদায় সম্পত্তি রাজকোষে সংগৃহীত হয়। এইরূপে বিদ্রোহের অনেকটা শাস্তি হইল বটে, কিন্তু বাঙ্গালায় প্রকৃত শাস্তি স্থাপিত হইল না । মুসলমান সেনাপতিদিগের সহিত হিন্দুরাজ টোডরমল্লের মনের মিল না হওয়ায় বড়ই বিত্ৰাট ঘটতে লাগিল। আজিম খাঁ বেহারে আসিয়া সমুদায় অবস্থা অবগত হইলেন। তিনি বিদ্রোহিদলকে বশে আনিতে না পারিয়া ১৫৮২ খৃষ্টাৰে আগ্রায় সম্রাটের সহিত এ বিষয়ে পরামর্শ করিতে গেলেন। তথায় স্থির হইল যে, রাজা টোডরমল্পের স্থানে আজিম খাকেই বাঙ্গালার শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হউক। তদনুসারে তিনি খান আজিম নাম গ্রহণ করিয়া বাঙ্গাল, বেহার ও উড়িষ্যার মুৰাদার হইয়া আসিলেন। রাজা টোডরমল্প বেহার হইতে প্রত্যাগমন করিয়া মোগলসাম্রাজ্যের একটা রাজস্বহিসাব প্রস্তুত করেন। উহার নাম “ওয়াশীল তুমার জমা ।” ইহাতে বঙ্গভূমি ১৮ট সরকারে ও ৬৮২ মহলে ; ৰেহার প্রদেশ ৭ট সরকারে ও ২• • পরগণায় এবং উড়িষ্যা ৫ট সরকারে ও ৯৯টা পরগণায় বিভক্ত হইয়াছিল। তৎকালে বাঙ্গালার রাজস্ব ১.৬৮৪৯৪৪ টাকা, বেহারের se৪৭৯৮৪ এবং উড়িষ্যার ৪২৬৮৩৩০ টাকা ধার্ঘ্য হয়। { টোডরমল্প দেখ। ] খান আজিম মীজ কোঙ্কা ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে বাঙ্গালায় আসিয়াই বিদ্রোহী জায়গীরদারদিগের পরম্পরের মধ্যে বিবাদ বাধাইলেন । মকুম কাবুলী স্বীয় অধীনস্থ সেনাদল কর্তৃক পরিত্যক্ত হওয়ায় দেশীয় জমিদারের অধীনে আশ্রয় ভিক্ষা করিতে ৰাধ্য হইলেন । এইরূপে একে একে সকল বিদ্রোহনেতাই মোগল সর্দারের হস্তগত হইল । ৯৯% হিজিরায় খান আজিম তাড়া নগরী অধিকার করিলেন। এতদিনে এই ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের শাস্তি হইল। মোগল জায়গীরদারদিগের এই বিদ্রোহের সময়ে পাঠানের আফগান কতলুথার কর্তৃত্বাধীনে সমবেত হইয়া সমুদায় উড়িষ্যার ও দামোদর নদ পর্য্যস্ত বাঙ্গালা অধিকার করিল। আজিমের আদেশে ফরিদ উদ্দীন বোখারি কতলু থাকে দমনার্থ অগ্রসর হন। কতলু থ' পরাজিত হইয়া বন মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই সময়ে সম্রাটের আদেশে খান আজিমকে বাঙ্গালা ত্যাগ করিয়া আগ্রায় আসিতে হয়; সুতরাং বাঙ্গালার বিদ্রোহাবস্থার বিশেষ কোন পরিবর্তম সাধিত হয় নাই । আগ্রায় উপনীত হইয়াই থান আজিমকে মোগল-সাম্রাজ্যের সৈনাপত্য গ্রহণ করিতে হইল ; কাজেই সম্রাট আকবর শাহ শাহবাজ থা কম্বোকে ৰহসংখ্যক সেনা ও মুসলমান সর্দারগণসহ বাঙ্গালায় পাঠাইতে বাধ্য হইলেন। সম্রাটের আদেশ মত শাহবাজ ঘোড়াঘাটে ককেশলানবংশীয় বিদ্রোহী পাঠানদিগকে বিপৰ্য্যস্ত করিলেন। বিজয়ী মোগল সেনা ক্রমশঃ অগ্রসর হইয়া ব্ৰহ্মপুত্রতীর পর্য্যস্ত উত্তরবঙ্গ মোগলাধিকারভুক্ত করিল। এই সংবাদে হৃষ্টচিত্ত হইয়া সম্রাটু শাহবাজকেই বাঙ্গালার শাসনকর্তা করিয়াছিলেন। রাজ্যপরিচালনভার স্বন্ধে লইয়া শাহবাজ বড়ই বিস্তুত হইয়া পড়িলেন। তিনি ককেশলা ও অন্তান্ত বিদ্রোহীদিগকে দমন করা অথবা তাহদের জায়গীর বাজেয়াপ্ত করা একরূপ অসম্ভব বোধ করিলেন । অবশেষে তিনি বাধ্য হইয়াই তাহাদিগকে স্ব স্ব অধিকৃত সম্পত্তি নিৰ্ব্বিবাদে ভোগ করিতে আদেশ দিলেন। জাফগান সর্দার কতলু খণর সহিত তাহার একটী সন্ধি হইল, তাহাতে তিনি তাহাদিগকে উড়িষ্যা প্রদেশে রাজত্ব করিতে অনুমতি দিলেন। কথা রহিল, পাঠানগণ বাঙ্গালী পরিত্যাগ করিয়া বাইবে, আর বাদাল আক্রমণ কৰিম।