পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৫৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ণলিপি তিনি সকল ধৰ্ম্মের মূল গুহ ব্রাহ্ম ধৰ্ম্ম ( বেদর্যস্ত ) ব্রাহ্মণদর্শিত মার্গানুসারে শাখাদি উপায় অবলম্বনপূর্বক সাধারণকে উপদেশ করিয়াছিলেন। (৫।৬ অঃ ) ব্ৰহ্মাবর্তে ব্রহ্মর্ষিগণের সভায় তিনি ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন। (৫৪৷১৬-১৯ ) রাজর্ষি ভরত এই ঋষভ দেবের পুত্র। র্তাহ হইতেই ভারতবর্ষের নামকরণ। তিনি ব্ৰহ্মাক্ষর জপ করিতেন। ( el৮১১ ) মহাভারতে লিখিত আছে— “ইত্যেতে চতুরো বর্ণা যেষাং ব্রাহ্মী সরস্বতী। বিহিত ব্ৰহ্মণ পূৰ্ব্বং লোভাত্বজ্ঞানতাং গতা: ॥” - ( শাস্তিপৰ্ব্ব ১৮৮১৫ ) ব্রাহ্মণ হইতেই বর্ণান্তর প্রাপ্ত চারি বর্ণেরই ব্রাহ্মী ভাষা পূৰ্ব্বকালে ব্ৰহ্মা কর্তৃক নির্দিষ্ট হইয়াছে। উদ্ধত প্রমাণ হইতে বেশ বুঝা যাইতেছে যে, ব্ৰহ্ম শব্দের অর্থ বেদ, ব্রাহ্মী অর্থ বৈদিকী। ঋষভদেবই সম্ভবতঃ ব্ৰহ্মবিষ্ঠার জন্ত লিপিকৌশল উদ্ভাবন করেন। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, ব্রাহ্মী লিপি বলিলে পুরাকালে বৈদিকী লিপিই বুঝাইত। বেদ যে লিপিবদ্ধ হইত, তাহ পূৰ্ব্বেই প্রমাণিত হইয়াছে। ঋষভদেবই সম্ভবতঃ ব্রহ্মবিদ্যাশিক্ষার উপযোগী ব্রাহ্মী লিপি প্রচার করেন, হয়ত সেই জন্যই তিনি ৮ম অংশাবতার বলিয়া পরিচিত হইয়াছেন। ব্রহ্মাবৰ্ত্তে এই লিপি প্রথম আবিষ্কৃত হয় বলিয়া ব্রাহ্মীলিপি নাম হইলেও হইতে পারে। বেদসঙ্কলনকালে বেদব্যাস এই লিপি ব্যবহার করিয়াছিলেন বলিয়া, তিনিও লিপি প্রচারক বলিয়া গণ্য হইতে পারেন। যাহা হউক, ব্রাহ্মীলিপিই ভারতীয় আৰ্য্যগণের আদিলিপি, এই ব্রাহ্মীলিপি হইতেই ভারতীয় সকল লিপির উৎপত্তি । ডাক্তার বুহ লর অশোকলিপিকেই ব্রাহ্মীলিপি বলিয়া ধরিয়াছেন। কিন্তু আমরা তাহ নিঃসন্দেহে স্বীকার করিতে পারিলাম না। অশোকের সময়েই ভারতে ৬৪ প্রকার লিপি প্রচলিত ছিল। তৎকালে পাটলিপুত্রে তাহার রাজধানী। এরূপ স্থলে তাহার অনুশাসনগুলিকে মাগধ-ব্রাহ্মীলিপি বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রদেশ হইতে যে সকল অশোকলিপি বাহির হইয়াছে, তাহার বর্ণ ও শব্দযোজনা অবিকল একরূপ নহে । বেহারের বরাবরের গিরিলিপিতে ‘অনপিতম্! আবার দাক্ষিণাত্যের স্তস্তলিপিতে অনপায়সতি ও উত্তর-পশ্চিমপ্রদেশের স্তম্ভপিলিতে আনাপিসতি পাঠ দৃষ্ট হয়। দক্ষিণদেশীয় লিপিতে এতারিস ও অনথেস্থ, কিন্তু উত্তরদেশীয় লিপিতে এতাদিস ও অণথেস্থ এই বর্ণবিপৰ্য্যয় দেখা যায়। এ ছাড়া দক্ষিণদেশীয় ও উত্তরদেশীয় লিপির মধ্যেও ব্যঞ্জনের হত যুক্ত আকার ও ইকারের প্রভেদ দেখা যায়। ইহাতে es বর্ণলিপি সহজেই মনে হইবে যে, দেশভেদে যেমন ভাষার সামান্ত ভেদ ছিল, বর্ণলিপিরও সেইরূপ সামান্ত ইতরবিশেষ ছিল। ইহাতে মনে হয় যে, অশোকের পূৰ্ব্বে তদনুরূপ এক প্রকার লিপি ছিল। বর্ণযোজনার পার্থক্য, প্রয়োগ ও রীতি অনুসারে এক ব্রাহ্মী লিপি হইতে সকল দেশীয় লিপির উৎপত্তি ঘটে । এখন পর্য্যস্ত ভারতে যত প্রকার লিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তন্মধ্যে কপিলবাস্ত্র (বর্তমান পিপ রাবী ) গ্রামের বৌদ্ধলিপিই সৰ্ব্বপ্রাচীন। এই লিপিখানি প্রায় ৪৫০ খৃষ্টপূৰ্ব্বাদের অর্থাৎ ২৩৫০ বর্ষের পূর্বতন। এই লিপির সহিত এথানকার অশোকলিপির অক্ষরের পার্থক্য নাই। সুতরাং স্বীকার করিতে হইবে যে, আড়াই হাজার বর্ষ পূৰ্ব্বে ব্রাহ্মী লিপিরই পরিণাম মগধলিপি প্রচলিত ছিল। উক্ত লিপির পূর্ববৰ্ত্তী লিপি এ পর্যন্ত সাধারণে প্রচারিত না হওয়ায় গ্রত্নতত্ববিদগণের বিশ্বাস যে, অশোকই প্রথম অনুশাসন প্রচাবের বন্দোবস্ত করেন, তৎপূৰ্ব্বে এরূপ অনুশাসনপ্রচারের ব্যবস্থা ছিল না ; এরূপ বিশ্বাসের মূল নাই। যতদিন পিপ রাবার বৌদ্ধলিপি আবিষ্কৃত হয় নাই, ততদিন পুরাবিদগণের এরূপ বিশ্বাস ছিল বটে, কিন্তু এখন তঁহাদের সে বিশ্বাস দূর হইয়াছে। অশোকাবদান প্রভৃতি বহুতব প্রাচীন বৌদ্ধগ্রন্থ হইতে জানা যায় যে, অশোক ৮৪• • • ধৰ্ম্মরাজিক প্রতিষ্ঠিত করেন, কিন্তু এখন তন্মধ্যে ২৫৷২৬টী মাত্র বিদ্যমান। এরূপ স্থলে মনে করিয়া দেখুন, তৎপুৰ্ব্ববৰ্ত্ত কীৰ্ত্তি গুলির কি পরিণাম ! সে দিনও বারাণসীর পাশ্বস্থ সারনাথের ১০ হাত মৃত্ত্বিকার নিম্ন হইতে বহুতর প্রাচীন বৌদ্ধকীৰ্ত্তি, অশোকামুশাসন ও কনিষ্কের লিপি বাহির হইয়াছে। এরূপ অমুসন্ধান চলিলে বহু নিম্ন ভূগর্ড হইতেও যে প্রাচীনতর লিপি বাহির হইতে না পারে, এমন নহে। শত শত বার ভূকম্পে প্রাকৃতিক বিপৰ্য্যয়ে লক্ষ লক্ষ সুপ্রাচীন ভারতীয় কীৰ্ত্তি ভূগর্ডশায়ী হইয়াছে, কে তাহার ইয়ত্ত করিবে ? যখন ৮৪ হাজার অশোককীৰ্ত্তির মধ্যে মাত্র ২৩।২৫ট পাওয়া যাইতেছে, তখন সহজেই অমুমেয় যে, তৎপূৰ্ব্বেকার কত লক্ষ লক্ষ কীপ্তি বিলুপ্ত ! সুতরাং পিপ রাবার বৌদ্ধলিপিব পুৰ্ব্বতন কোন শিলালিপি এ পর্য্যন্ত বাহির হয় নাই বলিয়া এমন আমবা মনে করিব না যে, তৎপূৰ্ব্বে রাজকীয় শাসনলিপির প্রচলন ছিল না । - ভারতীয় ধৰ্ম্মশাস্ত্রগুলি অধিকাংশই যে বৌদ্ধযুগের পূর্ববৰ্বী, তাহা আমরা স্বীকার করিতে পারি। [ মৃতি শব্দে বিস্তৃত বিবরণ দ্রষ্টব্য ] যাজ্ঞবল্কা, বশিষ্ঠ, ব্যাস, বৃহস্পতি, কাত্যায়ন প্রভৃতি ধৰ্ম্মশাস্ত্রকারগণ সকলেই রাজলেখা ও রাজামুশাসনলিপির উল্লেখ করিয়াছেন ।