পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৬২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৰ্দ্ধমান [ ७७० l বৰ্দ্ধমান পুরাতত্ত্ব। মার্কণ্ডেয়পুরাণে এই বদ্ধমানের উল্লেখ আছে। জৈনদিগের মতে, মহাবীর বা বদ্ধমানস্বামী রাঢ়দেশের যে অংশে অসভ্য জাতির মধ্যে ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়াছিলেন, তাহার নামানুসারে সেই স্থােনই পরে বদ্ধমান নামে খ্যাত হয়। এখন বৰ্দ্ধমান মধ্যরাঢ় নামে খ্যাত। এই জেলায় এক সময়ে অনেক সুপ্রাচীন রাজবংশ রাজত্ব করিয়া গিয়াছেন এবং তাছাদের বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তি নানা স্থানে পড়িয়া আছে। সেরগড় পরগণার সিংহারণ নামে যে নদী আছে, এই নদীর তীরে লিংহপুর নামে একট প্রাচীন রাজধানী ছিল। এখানে সিংহবাহু নামে রাজা রাজত্ব করিতেন, সিংহপুর নগর ধ্বংস হইলে এই স্থান সিংহারণ্য নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই সিাহারণ্য হইতেই বর্তমান সিংহারণ নদীর নাম । করণ হইয়াছে। এই জেলায় সাতশৈকা পরগণা সপ্তশতী । ব্রাহ্মণগণেৱ আদি উপনিবেশ । এই জেলায় তাহারা যে সকল গ্রাম লাভ করেন, সেই সকল গ্রাম নাম হইতে সপ্তশতীদিগের বিভিন্ন গাঞি বা উপাধির স্বষ্টি হইয়াছে। গোঁড়াধিপ আদিশূর জয়ন্তের অভু্যদয়ের পূৰ্ব্বে এখানে সপ্তশতী ব্রাহ্মণগণেরই আধিপত্য ছিল । নারায়ণের ছন্দোগপরিশিষ্ট প্রকাশ হইতে জানিতে পারি যে, কোন কোন বাঢ়ীয় ব্রাহ্মণের পূর্বপুরুষ র্তাহাদেরই নিকট বহু কুলস্থান লাভ করিয়াছিলেন, তাহ হইতে কোন কোন রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণের গাঞি হইয়াছে । গৌড়ে পালরাজগণের আধি 'পত্য বিস্তৃত হইলে আদিশূরবংশীয় শূৱনরপতিগণ বহুকাল এই জেলায় রাজত্ব করিয়া গিয়াছেন, তাহারাও রাঢ়ীয়শ্রেণির ব্রাহ্মণগণকে এই জেলায় বহু শাসনগ্রাম দান করিয়াছিলেন, সেই সকল গ্রাম হইতেই রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণগণের পূৰ্ব্বপুরুষগণের বহুতর গাঞি নাম হইয়াছে। পালরাজগণ যে সময়ে বারেন্দ্রে বৌদ্ধধৰ্ম্মপ্রচারে উদ্যত ছিলেন, সেই সময়ে রাঢ়দেশে শূবনরপতিগণ এখানকার বৌদ্ধসমাজকে হস্তগত করিবার জন্ত আবশুক মত শৈব ও শাক্তধৰ্ম্ম প্রচাব করিতেছিলেন । গৌড়ে বৌদ্ধাধিকারকালে এথানকার ঢেকুর নামক স্থানে সোমঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষ নামে একজন শাক্ত নৃপতি অতিশয় প্রবল হইয়াছিলেন। তাহার প্রতিষ্ঠিত খামরূপার গড়ই এক্ষণে সেনপাহাড়ী গড় নামে পরিচিত। ইহার ন্যায় প্রাচীন দুর্গ এ প্রদেশে আর নাই । গৌড়েশ্বর তাহার নিকট কএক বার পরাস্ত হইয়াছিলেন। অবশেষে ধৰ্ম্মের সেবক লাউসেনের নিকট তিনি পরাজিত হন । ইছাই ঘোষের গড়েব ভগ্নাবশেষ আজও সেনপাহাড়ীতে পড়িয়া আছে । এই জেলার অন্তর্গত বর্তমান ভুরশুটু পরগণার ভূরিশ্ৰেষ্ঠ নামে একটা সমৃদ্ধিশালী নগরী ছিল। এখানে খৃষ্টীয় ৯ম শতাব্দী পৰ্য্যন্ত কায়স্থ নৃপতিগণ রাজত্ব করিয়া গিয়াছেন। এখনকার পাণ্ডুয়া হিন্দু ও মুসলমান উভয় রাজগণের সময়েই প্রসিদ্ধ ছিল। সেনবংশীয় রাজাদিগের মধ্যে বিজয়সেন এখানে ৰিজয়পুর নামে একট নগর প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। - এখানে বহুদিন হইতেই মুসলমান সংস্রব হইয়াছিল । মেমারির উত্তরপশ্চিমে বহা বা শ্ৰীকৃষ্ণনগর নামক গ্রামে সৈয়দ জলাল উদ্দীন তাত্রিজী কিছুকাল অবস্থান করিয়াছিলেন । ৬৪২ হিজরী বা ১২৪৪-৪৫ খৃষ্টাব্দে পাণ্ডুয়ায় তাহার মৃত্যু হয়। উক্ত শ্ৰীকৃষ্ণনগরে জলাল উদ্দীনের নামানুসারে মাদ্রাসা-ইজলালিয়া নামে একটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত আছে। বৰ্দ্ধমান জেলায় নানা স্থানে প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। ছুটিপুর পরগণায় মেমারি ষ্টেসনের দক্ষিণে কুলীনগ্রামের নিকট অনেক প্রাচীন গড়ের ভগ্নাবশেষ পড়িয়া আছে। আজমতশাহী পরগণায় ভাটাকুল গ্রামের নিকট রামচন্দ্রগড় এবং অজয়নদের নিকট শেরগড় পরগণায় রাপাগঞ্জের উত্তরে আরও কএকটা গড় দৃষ্ট হয়। বদ্ধমান সহরেই প্রসিদ্ধ বহরম সঙ্কা নামক প্রসিদ্ধ মুসলমান কবির গোরস্থান দৃষ্ট হয়, এই গোরস্থান ঠিক দুর্গের মত । আগ্রী হইতে সিংহলে যাত্রাকালে কবিবর ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে বদ্ধমানেই প্রাণত্যাগ করেন। ঐ বর্ষে মুসলমান ইতিহাসে, বদ্ধমানের প্রথম উল্লেখ দৃষ্ট হয়। রাজমহলে দাউদ খানের পরাজয় ও মৃত্যু ঘটলে আকবরের সৈন্তগণ বদ্ধমানে আসিয়া দাউদের পরিবারবর্গকে আক্রমণ করেন। তৎপরে দশ বর্ষ কাল দাউদের পুত্র কুতলু থান এই বদ্ধমানে মোগলবিরুদ্ধে ঘোরতর সমরানল প্ৰজলিত করেন । [ কুতলু খা দেখ। ] তাহার কবরের নিকট নুরজাহানের স্বামী সের আফগান ও বঙ্গের শাসনকৰ্ত্ত কুতৰ উদনের সমাধিমন্দির দৃষ্ট হয়। দিল্লীশ্বরের আদেশে কুতব উদ্দীন্ নূরজাহানকে দিল্লীতে পাঠাইবার জন্ত সের আফগানের সহিত যুদ্ধ করেন। বদ্ধমান ষ্ট্রেসনের দক্ষিণে স্বাধীনপুর নামক গ্রামে যেখানে উভয় বীরে যুদ্ধ হইয়াছিল, আজও সকলেই সেই স্থান দেখাইয়া থাকেন। ১৬২৪ খৃষ্টাব্দে শাহজাদা খুরম্ (পরে শাহজৰান্‌) বৰ্দ্ধমান দুর্গ ও সহর জয় করিয়া দিল্লীর শাসনভুক্ত করেন। বাদশাহ অরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম্‌ উসসান ১৬৯৭ হইতে ১৭০৪ খৃষ্টাদ মধ্যে বদ্ধমানে একটি সুন্দর মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করাইয়া ছিলেন, আজও সেটি দেপিবার জিনিস । বৰ্ত্তমান বর্জমাল-রাজবংশ । পঞ্জাব-প্রদেশান্তর্গত লাহোর নগরস্থ কোটলি মহল্লা-নিবাসী সঙ্গম রায়, বৰ্দ্ধমান রাজবংশের আদি পুরুষ । খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাদের শেষভাগে সঙ্গম রায় সপরিবারে জগন্নাথ দর্শনোদেশে