পাতা:বিশ্বকোষ একবিংশ খণ্ড.djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সনাতন গোস্বামী কেবল সনাতনের অতুল পাণ্ডিত্য অথবা রাজকাৰ্য্যে তাঙ্কার অনন্তসাধারণ দক্ষতা, তাছার প্রসিদ্ধির কারণ নহে। তিনি শ্ৰীমন্মহাপ্ৰভু গৌরাঙ্গদেবের প্রধানতম পার্বদ ছিলেন। ইহাই তাহার ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধির প্রধানতম কারণ। যে দিবস সনাতন শ্ৰীগৌরাঙ্গের মুশীতল পদচ্ছায়া প্রাপ্ত হইলেন, সেই দিন হইতেই এই মহাপ্রভাবশীল রাজপুরুষের হৃদয়ে এক বিশাল পরিবর্তন ঘটিল, বিষয়-ব্যাপারে আর তাহার আস্থা রহিল নী, রাজকাৰ্য্যে ক্রমশঃই তাহার চিত্ত শিথিল হইয়া পড়িতে লাগিল। মুসলমান সরকারে চাকুরী করিতে পূৰ্ব্বেও সনাতনের ইচ্ছা ছিল না । তিনি ভয়ে ও দায়ে পড়িয়া কাৰ্য্য স্বীকার করিয়াছিলেন। যথা ভক্তিরত্নাকরে— "সনাতন রূপ মহামন্ত্ৰী সৰ্ব্বাংশেতে। শুনিলেন রাজা শিষ্ট লোকের মুখেতে ॥ গৌড়রাজ যবনের অনেক অধিকার । সনাতন-রূপে আনি দিলা রাজ্যভার ॥ স্নেচ্ছের ভয়ে বিষয় করিলা অঙ্গীকার। এই দুই প্রভাবে রাজ্য বৃদ্ধি হৈল তার ॥” এই সময়ে হুসেন শাহ সনাতনকে সাকরমল্লিক উপাধি গ্ৰদান করেন। যথা ভক্তমালে-- “দবীরখাস আর সাকরমল্লিক । প্রভাবেতে এ দুহার খেতাব অধিক ॥* যাহা হউক, সনাতনের হৃদয় ক্রমেই বৈরাগ্যের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল, কি প্রকারে ঐচৈতন্তের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া তাপিত প্রাণ শীতল করিবেন, ধৰ্ম্মপিপাসা চরিতার্থ করিবেন, তিনি কেবল দিবসযামিনী তাহাই চিন্তা করিতে লাগিলেন। এই অবস্থায় রাজকাৰ্য্যে শিথিলতা অবশুম্ভাবী। এই সময়ে পাণ সনাতনকে হুসেন শাহ ভৎ সনা করিয়া বলিয়া ছিলেন— “তোমার বড় ভাই করে দম্য ব্যবহার। জীব বহু মারি কৈল চাকলা ছারখার । ছেথ তুমি কৈলা মোর সৰ্ব্ব কাৰ্য্যনাশ ।” সনাতন শ্ৰীগৌরাঙ্গের চরণাশ্রয় করিবার জন্ত সততই চেষ্টা করিতে ছিলেন। সময়ে সময়ে তিনি শ্ৰীগৌরাঙ্গদেবের নিকট পত্র লিখিতেন। নিজের অনবসরের কথা নিবেদন করিতেন । মহাপ্ৰভু কোন সময়ে সনাতনকে একটী প্লোকে উত্তর প্রধান করেন, সে শ্লোকটী এই— পরব্যসনিনী নারী ব্যগ্রাপি গৃহকৰ্ম্মস্থ । তদেবাম্বাদয়ত্যস্তনবসঙ্গরসায়নমূ ॥” ইহার অর্থ এই যে, কুলবতী রমণী পরপুরুষে আকৃষ্ট হইলে লে যেমন গৃহকৰ্ম্মে ব্যগ্ৰ থাকিলেও মনে মনে নিরস্তরই নবসঙ্গের [ ১৩৭ ] সনাতন গোস্বামী রসাস্বাদন করে, সেইরূপ বিষয়ে ব্যাপৃত থাকিয়াও শ্ৰীভগবানের সঙ্গমুখ আস্বাদন করিবে । সনাতনের প্রতি মহাপ্রভূর অনুগ্রহ সঞ্চার হইল। তিনি বৃন্দাবনে গমনকালে রামকেলি গ্রামে উপস্থিত হইলেন । রামকেলি মালদহ জেলায় অবস্থিত। এখনও রামকেলি বিদ্যমান ; এখনও এখানে বৈষ্ণৰ মহোৎসবাদি সম্পন্ন হয় । বঙ্গে সনাতন গোস্বামিদের ৪ট স্থানে আবাসের কথা শুনা যায়, যথা নৈহাট, বাকল চন্দ্রস্বীপ, ফতেয়াবাদ ও রামকেলি। সনাতন ও তদখুঞ্জগণ অধিকাংশ সময়ে এই রামকেলিতেই অবস্থান করিতেন। এই বাসভবনটা ভজনের উপযোগি-ভাবে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। তাছার বৃন্দাবনের পুণ্যস্মৃতি উদ্দীপনার জন্ত শুামকুও ও রাধাকুগু নামক সরসী যুগল উৎখাত করিয়াছিলেন। তাছাদের উদ্যোগে বৃন্দারণ্যের স্থানে স্থানে ঐকৃষ্ণলীলার বিবিধ শ্ৰীমূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সকল স্থানের বিবরণ ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে এইরূপ লিখিত আছে—

  • গৌড়ে রামকেলি গ্রামে করিলেন বাস। ঐশ্বৰ্য্যের সীমা অতি অদ্ভুত বিলাস । ইন্দ্ৰসম সনাতন-রূপের সতীতে । আইসে শাস্ত্রজ্ঞগণ নানাদেশ হৈতে ॥ গায়ক বাদক নৰ্ত্তকাদি কবিগণ । সৰ্ব্বদেশী সকলে নিযুক্ত সৰ্ব্বজন ॥ নিরন্তর করেন অনেক অর্থ ব্যয় । কোন ক্রমে কারু অসম্মান নাহি হয় ॥ সদা সৰ্ব্বশাস্ত্র চেষ্টা করে দুই জন । অনায়াসে করে দোহে থগুন স্থাপন ॥ দ্যায়সুত্রব্যাখ্যা নিজকৃত যে করয়। সনাতন-রূপ শুনিলে সে দূর হয়। ঐছে সবে সৰ্ব্ব প্রকারেতে দৃঢ় হৈয়া । সনাতন রূপ গুণ গায় মুখ পাঞl || সৰ্ব্বত্র ব্যাপিল এ দোহার গুণগান । কর্ণাট দেশাদি হৈতে আইল বিপ্রগণ ॥ সনাতন নিজ দেশস্থ ব্রাহ্মণে । বাসস্থানে দিলা সবে গঙ্গা সন্নিধানে ॥ ভট্টগোষ্ঠী বাসে “ভট্টবাট” নাম গ্রাম । সকলে শাস্ত্রজ্ঞ সৰ্ব্বমতে অনুপাম ॥ রামকেলি গ্রামের সকল বিপ্ৰ লৈয় । ব্যবহার-কাৰ্য্য সব সাধে হর্ষ হৈঞা ॥ বৈষ্ণব-সম্প্রদায়গণে রূপসনাতন । যেরূপ অাদরে তাহ না হয় বর্ণন ॥ ৯