পাতা:বিশ্বকোষ একবিংশ খণ্ড.djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সনাতন গোস্বামী [ s8० ] সনাতন গোস্বামী সনাতন আর মনের ভাব গোপন করিতে পারিলেন না । তিনি সুলতানের সমক্ষে এইরূপ স্পষ্টভাবে উত্তর দিয়াছিলেন— “সনাতন কহে নহে আম হৈতে কাম । আর একজন দিয়া কর সমাধান ॥* সনাতনের এই উত্তরে গোঁড়াধিপ অত্যন্ত ক্রদ্ধ হইলেন, এবং ভয় প্রদর্শনপূৰ্ব্বক ভৎসনা সহকারে বলিতে লাগিলেন— “তোমার বড় ভাই করে দম্য ব্যবহার। জীব বহু মারি কৈল চাকলা ছারখার ॥ হেথা তুমি কৈলা মোর রাজকাৰ্য্য নাশ । সনাতন বিনীতভাবে বলিলেন, আপনার যাহা ইচ্ছা করিতে পারেন। সনাতনের স্বাধীন উত্তর গুনিয়া হুসেন আরও ক্রুদ্ধ হইলেন। কিন্তু তাহার মনের প্রকৃত ভাব এই ছিল যে, সনাতনের স্থায় উপযুক্ত কৰ্ম্মচারীকে তিনি কোন ক্রমেই ছাড়িয়া দিতে পারেন না। সনাতনের মন্ত্রণায় তাহার রাজ্যের যথেষ্ট উন্নতি হইয়াছিল, রাজকাৰ্য্যে ও যুদ্ধবিগ্ৰহাদির ব্যবহারে সনতনের মন্ত্রণ অতুল্য ও অমুল্য। ভয় দেখাইলে সনাতনের মনের ভাব পরিবর্তন হইতে পারে এই আশায় হুসেন শাহ সনাতনকে বন্দী করিলেন । এই সময়ে সনাতনের মনের ভাবজ্ঞাপক একটী পল পদকল্পতরুতে লিথিত হইয়াছে “রূপের বৈরাগ্যকালে সনাতন বন্দিশালে বিষাদ ভাবয়ে মনে মনে । রূপেরে করুণা করি, ত্ৰাণ কৈলা গৌরহরি মো অধমে না কৈলা স্মরণে ॥ cभन्न कार्यप्झारु पttण হাতে গলে পায় বান্ধে রাখিয়াছে কারাগারে ফেলি । আপন করুণাপাশে দড় করি ধরি কেশে চরণ নিকটে লহ তুলি । পশ্চাতে অগাধ জল, দুই পাশে দাবানল সম্মুখে সাধিল ব্যাধ বাণ । কাতরে হরিণী ডাকে পড়িয়৷ বিষম পাকে এই বায় কর পরিত্রাণ ॥ জগাই মাধাই হেলে বাসুদেবে অজামিলে অনায়াসে করিলে উদ্ধার । এ দুঃখসমুদ্র ঘোরে উদ্ধার করুহ মোরে তোমা বিনে নাহি হেন আর ॥ হেন কালে একঞ্জনে অলখিতে সনাতনে পত্রী দিল রূপের লিখন । এ রাধা বল্লতদাসে মনে হৈল আশ্বাসে পঐী দিলা করিয়৷ গোপন - চৈতন্যচরিতামৃতেও এই পত্রের কথা লিখিত আছে। ফলতঃ এই পত্র পাইয়া সনাভন বন্ধনমুক্তির উপায়ে প্রবৃত্ত হইলেন। চৈতন্যচরিতামৃতের ভাষাতেই তাহ প্রকাশ করা যাইতেছে— “পত্নী পাইয়া সনাতন আনন্দিত্ত হৈলা । যবনরক্ষক পাশ কহিতে লাগিলা ॥ তুমি এক জিন্দ পীর মহা ভাগ্যবান। কিতাব কোরাণ শাস্ত্রে আছে তোমার জ্ঞান ॥ এক বনি ছাড়ে যদি নিজ ধৰ্ম্ম দেখিয়া । সংসার হৈতে মুক্তি তারে করেন গোসাঞী ॥ পূৰ্ব্বে তোমার আমি করিয়াছি উপকার। তুমি আমা ছাড়ি কর প্রত্যুপকার ॥ পাচ সহস্র মুদ্র দ্বিব কর অঙ্গীকার । পুণ্য অর্থ দুই লাভ হইবে তোমার ॥” ইহ শুনিয়া রক্ষকের মন কিঞ্চিৎ দ্রব হইল বটে, কিন্তু সে বলিল, আপনাকে ছাড়িয়া দিতে পারি,কিন্তু রাজদণ্ডের ভয় বলবৎ রহিয়াছে। সনাতন তাহাকে বুঝাইয়া দিলেন, রাজা দক্ষিণে গিয়াছেন ফিরিয়া আসিতে বিলম্বও আছে। সনাতন তাছাকে সময়ে উচিত বুদ্ধি প্রদান কল্পিবেন ও উপস্থিত সাতহাজার মুদ্র প্রদান করিলেন । ইহাতে যবনরক্ষক সন্মত হইয়। সনাতনকে ছাড়িয়া দিল । সনাতন মুক্তি পাইলেন এবং ঈশান নামক একটা ভৃত্যকে লইয়া ঐগৌরাঙ্গের উদ্দেশুে শ্ৰীবৃন্দাবন অভিমুখে ধাবিত হইলেন । সনাতন বনজঙ্গল ও পর্বতময় পথে অনশনে ও অনাহারে গমন করিতে লাগলেন। একটা পাহাড়ে উপস্থিত হইলে এক দসু্যর ছলনায় পড়িয়া সনাতনের প্রাণশষ্ট হইবার উপক্রম হইয়াছিল। ঈশান বৃন্দাবনযাত্রার পূৰ্ব্বে আটট মোহর সঙ্গে লইয়াছিল। সনাতন ইহা জানিতেন না । মোহর আটট দস্থ্যর হাতে প্রদান করিয়া সনাতন নিস্কৃতি পাইলেন। ঈশান সাতট মোহর দান করিয়াছিল, একটী মোহর সঙ্গে রাখিয়াছিল । সনাতন ঈশানকে বলিলেন, তুমি অর্থ লইয়া আমার সহিত আসিয়াছ, আর আমার সছিত যাওয়ার তোমার প্রয়োজন নাই। মোহরটা লইয়া তুমি চলিয়া যাও। ঈশান দুঃখিত চিত্ত্বে বিদায় লইল । সনাতন হাজিপুরে উপস্থিত হইলেন। শ্ৰীকান্ত হাজিপুরে হুসেন শাহের অশ্বক্রয় করিতেন। ঐকাস্ত সনাতনের ভগিনীপতি। শ্ৰীকান্ত টাঙ্গীর উপর হইতে দেখিতে পাইলেন, অতি সাধারণ বস্ত্র গায়ে দিয়া মলিন বেশে সনাতন আগমন করিতেছেন। অকস্মাৎ এবম্বিধ ব্যাপার দেখিয়া তিনি বিস্ময়বিহবলান্তঃকরণে সনাতনকে ধরিতে অগ্রসর হইলেন, ষখা ভক্তমাল গ্রন্থে—