পাতা:বিশ্বকোষ একাদশ খণ্ড.djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাবনা ভাগে পাবনা জেলা অবস্থিত। এই দুই নদীই এই জেলায় প্রধান । গঙ্গা এথানে পদ্মানামে এবং ব্রহ্মপুত্র যমুনা নামে খ্যাত। পদ্মার প্রধান শাখা ইছামতী পাবনাসছরের মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইয়া ব্ৰহ্মপুত্রের শাখা হরাসাগরের সহিত মিলিত হইয়াছে। এতদ্ব্যতীত অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী, বিল ও খাল আছে। বিলের মধ্যে সোনাপাতিল বিল, চলনবিল ও ঘুঘুদূহ বিলই সৰ্ব্বাপেক্ষী বৃহৎ । এপানে অনেক গুলি বাধ ও কৃত্রিম ঘাট আছে । ৰধীকালে এখানে নৌকা ভিন্ন আর কিছুতেই যাতায়াত করা যায় না। এই জেলার পশ্চিমপ্রাস্তস্থিত সারাঘাট ব্যতীত চার কোথায়ও লৌহবস্থা নাই। পাবনা প্রথমতঃ রাজশাহী জেলার অস্তভুক্ত ছিল। ইহা রাণীভবtণীর জমিদারীর একাংশ মাত্র । কালক্রমে যখন সেই সুবিস্তৃত জমিদারীর অনেকাংশ নিলাম হইয়া যায়, তখন পাবনা রাজশাহী হইতে স্বতন্ত্র হয়। ১৮৩২ খৃষ্টাব্যে ইহা নুতন জেলায় পরিণত হইয়। একজন জয়েণ্ট মাজিষ্ট্রেট ও একজন ডেপুটী কালেক্টরের অধীনে থাকে। ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে পূর্ণক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন মাজিষ্ট্রেটু কালেক্টর এই জেলার ভার প্রাপ্ত , হন । বর্তমান সময়ে এখানে একজন সেসন জজ, একজন মাঞ্জিষ্ট্রেটু কালেক্টর, দুইজন ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট, একজন সবজজ, মুন্সেফ, একজন জেলার পুলীশের প্রধান সাহেব কৰ্ম্মচারী এবং একজন সিবিলসার্জন থাকেন। এখানকার সেসনজজই বগুড়ার দায়রার কার্য্য সম্পন্ন করেন । এখানে একটা মধ্যবৰ্ত্তী জেল অাছে। ১৮৪৫ খৃষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত হয়। তদবধি সিরাজগঞ্জের ক্রমশঃ শ্ৰীবৃদ্ধি হইয়। বর্তমান সময়ে ইহা জেলার সর্বপ্রধান স্থান হইয়া উঠিয়াছে। এই জেলার পুৰ্ব্ব সীমার অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। ১৮৬২ খৃষ্টাবো কুষ্টিয়া মহকুমা পাবন হইতে পৃথক্ করিয়া নদীয়া জেলার অস্তভুক্ত করা হয়। ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে পাংশা থান৷ ফরিদপুরের গোয়ালন্দ মহকুমার এবং কুমারখালী থানা কুষ্টিয়া মহকুমার অধীন হওয়ায় এখন পদ্মানদী এই জেলার সম্পূর্ণ দক্ষিণ সীমা হইয়াছে। এই জেলার প্রধান নগরগুলি নদীর তীরে অবস্থিত । ইহার মধ্যে যমুনাতীরবর্তী সিরাজগঞ্জ পাটব্যবসায়ে বাঙ্গালদেশের মধ্যে প্রধান । এখানে প্রতিবৎসর প্রায় দুই লক্ষ মণ পাটের আমদানী হয় । সিরাজগঞ্জের পরই শাহজাদপুর, পাবন, বেলকুটি ও উল্লাপাড়া বাণিজ্য বিষয়ে শ্রেষ্ঠ । এই সমস্ত স্থানে পাটের আমদানিই বেশী। পাট ব্যতীত তামাক, সরিষা, তিল, তিসি, চাউল, হরিদ্র, অাম এবং চামড়ার আমদানী হইয়া পাকে । [ ২৩৬ ] পাবনা তণ্ডুলই এই জেলার অধিবাসিগণের প্রধান খাদ্য । চাউলের মধ্যে আমন ও মাউস প্রধান । এতদ্ভিন্ন বরণ, তরালোটা প্রভৃতি ছয় প্রকার ধান্ত এবং মটর, পাট, কলাই, হরিদ্র। প্রভৃতি গ্রচুর পরিমাণে জন্মে। • পাবনার কাপড় সুপ্রসিদ্ধ। পাবনা লহর ও তাহার সাত মাইল পূৰ্ব্ববর্তী দোগাৰ্ছীগ্রামে অনেক তত্ত্ববায়ের বাস ছিল । তাহার এক সময়ে সুন্দর সুন্দর বস্ত্রবয়ন করিতে পারিত । এক একজোড়। কাপড় ১৮ হইতে ২-২ পর্যাস্ত মূল্যে বিক্রীত হইত। কিন্তু এখন মার্ধেষ্ঠরের কল্যাণে এবং দেশীয় লোকের রুচিবিপর্যায়ে এই কাপড়ের উপযুক্তরূপ কাটুতি না হওয়ায় তস্তুবায়গণ নিরুৎসাহ হইয়া আর উৎকৃষ্ট বস্ত্রবয়ন করে না । অনেকে বস্ত্রবয়ন কাৰ্য্য একবারে পরিত্যাগ করিয়াছে এবং তৎসঙ্গে তাহীদের দুরবস্থারও একশেষ হইয়াছে। এখন এই জেলার জেলার অল্পমূল্যের বস্ত্রবয়ন করিতে আরম্ভ করিয়াছে, পরিধেয় বস্ত্র ভিন্ন নানাপ্রকার ছিট, লেপের থেtল প্রভৃতিও তাহার। প্রস্তুত করিতেছে । পাবনা মুসলমানপ্রধান জেলা। এখানে হিন্দু অপেক্ষ মুসলমানের সংখ্যাই বেশী । ১৮৯১ সালের লোকগণনায় এইরূপ নির্দিষ্ট হইয়াছে—হিন্দু ৭৪৪৪, মুসলমান ৯.১৪, দেশীয় খৃষ্টান ২৭, বৌদ্ধ ১। মুসলমানদের সংখ্যা অনেক বেশ্য হইলেও তাহারা সকল বিষয়েই হিন্দুদিগের অপেক্ষা নিকৃষ্ট । এখানকার অধিবাসিগণ শাস্তুস্বভাব। ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে এখানে একবার প্রজাবিদ্রোহ হয়। এই সময় যখন সিরাজগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত যুজফশাহী পরগণ রাণীভবানীর জমিদারী হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া কলিকাতার দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের, ঢাকার বন্দ্যোপাধ্যায়দিগের, স্থলের পাকড়াসীদের, শলপের সন্ন্যালদের এবং পোরজানার ভাদুড়ীদের হস্তে যায়, তখন করবৃদ্ধিকারণ জমীদার ও প্রজায় মনোমালিন্ত ঘটে। প্রজারা আদালতে এই করবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মোকদ্দমা চালাইল । অবশেষে তাহার। সকলে প্রতিজ্ঞা করিল যে, যদি দলবদ্ধ হইয়া জমিদারের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইতে হয়, তাহাও করিতে হইবে, কিন্তু বঙ্কিত হারে খাজান কিছুতেই দেওয়া হইবে না। ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে জুলাইমাসে সমস্ত পরগণায় এই গোগযোগ বিস্তৃত হয় এবং স্থানে স্থানে শাস্তিভঙ্গ ঘটে। এই গোলযোগ নিবারণ করিবার জন্ত একদল পুলিশ প্রহরী প্রেরিত হয় এবং ৩৯২ জন বিদ্রোহী প্রজা ধৃত হুইয়া মাসে । ইহাদের অনেকেই কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইয়াছিল । তদবধি এখানে অীর কোন গোলযোগ হয় নাই । এই জেলার বরগাইত বা বরগাদার বলিয়া একশ্রেণীর