পাতা:বিশ্বকোষ ত্রয়োদশ খণ্ড.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মসমাজ [ বের পূরণ হইতে লাগিল। রামমোহন রায় একটা সংক্ষিপ্ত | উপাসনা-পদ্ধতি রচনা করিয়া ছিলেন। শ্রতিপাঠ, স্তোত্র | ও প্রার্থনাদির দ্বারা তাহার কলেবর পরিবদ্ধিত করা | হইল। তৎপরে শ্রুতি ও স্মৃতিগ্রন্থসমূহ হইতে সারসঙ্কলনপুৰ্ব্বক একধানি ব্রাহ্মধৰ্ম্মগ্রন্থ রচিত হইয়াছিল। সেই গ্রন্থের সংস্কৃতমন্ত্ৰসকলের সুবোধ বাঙ্গালায় অসুবাদ ও ব্যাখ্যা করিয়া দেওয়া হইল। ভারতের প্রাচীন ব্রহ্মবাদী ঋষিগণ ব্রহ্মবিষয়ক যে সকল মহামন্ত্র নিত্য পাঠ করিতেন, এত কালের পর সেই সকল শ্রীতিবাক্য সজ্জনদিগের গোচর হইল এবং অর্থবোধ সহকারে নিত্যপাঠ হইতে লাগিল। হৃদয়ের সস্তৃপ্তিকর এবং গৃহীজনের সর্বমঙ্গলকর সন্নীতির বচনাবলী গৃহে গৃহে ধ্বনি ত হইতে লাগিল । বঙ্গদেশের বিদ্বদ্ম গুলী প্রাচীন ঋষি দিগের আশীৰ্ব্বাদসহকৃত জ্ঞানালোক প্রাপ্ত হইয়। ঐহিক ও পাররিক পরম মঙ্গলের সাধনায় প্রবৃত্ত হইলেন। পরস্তু এখন ও দেবেন্দ্রনাথের সব্বতোভাবে পরিতৃপ্তি জন্মগ না । তিনি দেখিলেন, বহুলোক তর্কপ্রিয়, তাছাদের মধ্যে প্রেম নাই, ধৰ্ম্মসাধনায় সমুচিত নিষ্ঠ নাই ; সুতরাং যোগধৰ্ম্মেয় ও বিশেষ চচ্চা হইতে পারিতেছে না । এই সকল লক্ষণ দেখিয়া তিনি নিগূঢ় ধৰ্ম্মচিন্তায় প্রবৃত্ত হইলেন । কলিকাতায় তাহার চিত্ত সমাধান হইল না। তিনি হিমালয়প্রদেশে প্রস্থান করিলেন । দুই বৎসর হিমাচল প্রস্থে ভ্রমণ করিয়া দেবেন্দ্রনাথ গৃহাভিমৃখে ফিরিলেন। ১৭৮০ পকে তিনি কলিকাতায় প্রত্যাগত হইয়া ব্ৰাহ্মধৰ্ম্মানুরাগী আর এক উৎসাহী যুবকদলকে সন্দশন করিলেন। এই যুবকবৃন্দের নেতা শ্রীমৎকেশবচন্দ্র সেন। প্রযুক্ত কেশবচন্দ্র সেন মহাশয়ের প্রচারিত নববিধানসমাজের বিবরণ যথাস্থানে লিখিত হইয়াছে। ১৭৮১ শক হষ্টতে ১৭৮৬ শক পর্য্যস্ত তিনি ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে থাকিয়া ইহার যে মহোন্নতি সাধন করিয়াছেন, ত্রাহ্মসমাজের ইতিবৃত্ত্বে তাছাই উল্লেখ যোগ্য । নববিধান-সমাজ দ্বার ব্রাহ্মসমাজের যে উপকার সাধিত হইয়াছে, তাহাও পরিশেষে প্রদশিত হইবে কেশবচন্দ্র সেন ও নববিধান দেখ ] কেশবচঞ্জের পিতামহ y রামকমল সেন একজন লন্ধপ্রতিষ্ঠ বিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছিলেন। রামমোহন রায়ের প্রতিবেঞ্জ ও প্রতিদ্বন্দী উইলসন সাহেবের সহিত তাহার বিশেষ বন্ধুতা ছিল। রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে ধৰ্ম্ম-সভা স্বাপিত হইলে রামকমল সেই সভার একজন প্রধান নেতা মধ্যে পরিগণিত হইয়াছিলেন। পরস্তু বিধাতার বিচিত্রবিধানে সেই রামকমলের পৌত্র “ধৃষ্টান” কুসংস্কার হইতে রক্ষা পাই [۹ میلا ব্রাহ্মসমাজ লেন এবং রামমোহন রায়ের প্রতিষ্ঠিত সভার প্রতিষ্ঠা বহু গুণে বৃদ্ধি কfরয় দিলেন। প্রথম বয়সে তিনি এক সুপণ্ডিত পাদ্রির নিকট বিশেষ নিপুণতার সহিত খৃষ্টধৰ্ম্ম গ্ৰন্থ বাইবেল পাঠ করেন। রামমোহন রায়ের সঙ্কলিত খৃষ্টীয় উপদেশ পাঠ করিয়া তিনি রামমোহন রায়কে খৃষ্টধৰ্ম্মান্থরক্ত জ্ঞান করিয়াছিলেন । অনেক আলোচনার পর তাছার সে সংস্কার অপগত হইয়াfছল । তদনন্তর তিনি ব্রাহ্মধৰ্ম্মের মৰ্ম্ম বুঝিয়া প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর পুৰ্ব্বক ব্রাহ্মসমাজের সভ্য শ্রেণীভুক্ত হয়েন। অতঃপর শ্ৰীমদুদেবেন্দ্রনাথের সহিত কেশবচঞ্জের সম্মিলন হয় । অচিরকাল মধ্যে এই মিলন এক অপুৰ্ব্ব ও অতুলনীয় সোঁহাঙ্গে পরিণত छ्ं ध्रiछ्८ि ।। প্রীমদ দেবেন্দ্রনাথের হৃদয় ঈশ্বরপ্রেমে গদগদ । কেশবচঞ্জের ও তা হাই । উভয়ের সম্মিলন ও সেীহাপবদ্ধনের ইহাই কারণ। দেবেন্দ্রনাথ অদ্বৈতমত ভালবাসেন না । তিনি জ্ঞানী ভক্ত রাম প্রসাদের দ্যায় বহু প্রকারে তত্ত্বসংস্থাপন করিয়াছিলেন। কেশবচন্দ্র তাহাই সৰ্ব্বলোকের গ্রহণীয় করিয়৷ তুলিলেন। উভয়ে মিলিয়া এক ব্রহ্মবিদ্যালয় খুলিলেন । দেবেন্দ্রনাথ ওজস্বল সুস্বাঞ্জ সাধু ভাষায় এবং কেশবচক্র হৃদয়গ্রাহী তেজস্কর ইংরাজী ভাষায় এই বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্রকে উপদেশ দিতেন। কেবল এইস্থানে কেন ? ঘরে বাহিয়ে সৰ্ব্বদা জ্ঞান ও ধৰ্ম্মের চর্চা হইত। এবপ্লকালে ‘সত্যং জ্ঞানমনস্তং পরমেশ্বরের প্রেম ও পবিত্রতার এবং মসুয্যের ভ্রাতৃভাবের শিক্ষা ও ব্যাখ্যা, আলোচনা ও প্রচারে কেশবচন্দ্র ও দেবেন্দ্রনাথ আপনারা ও যেমন মাতিয়া উঠিলেন, তাহাদের শ্রোতা এবং সহচর বর্গও তেমনি সৰ্ব্বাংশে তাহাদের সমধৰ্ম্মী হইলেন। একপ্রাণতার বিস্তার সহকারে ব্রাহ্মধৰ্ম্মের প্রচার হইতে লাগিল। ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচারের নিমিত্ত কতকগুলি লোক ধন, মান, প্রাণ পৰ্য্যস্ত বিসর্জন ধরিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইলেন । ১৭৮৫ শক পর্যস্ত এই ভাবেই কাটিয়া যায়। খ্ৰীমদুদেবেন্দ্রনাথ এই সময়কে ব্রাহ্মসমাজের বসন্তকাল বলেন। তাহার উক্তি এই –“এ সময়ে হৃদয়ের প্রীতি-কুসুম লষ্ট। হৃদয়েশ্বরকে অর্চনা করিয়া ব্ৰাহ্মমাত্রেই কৃতাৰ্থ কষ্টয়াছিলেন।” দেবেঞ্জনাথ এই স্বদিনের অবসানে "গ্রীষ্মকালের প্রখর রৌদ্র ও বঞ্জাবাত” সহ করিতে করিতে পূৰ্ব্বোক্ত বসন্তের মলয়নিল স্মরণ করিয়াছিলেন । আমরাও ব্রাহ্মসমাজের ইতিবৃত্তের সেই অংশে আসিয়া পড়িয়াছি। ব্ৰাহ্মসমাজ সম্পর্কে এই বসন্ত ও গ্রীষ্মকালের লক্ষণ