পাতা:বিশ্বকোষ দশম খণ্ড.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারদ [ ২৯ ] নারদ বেদবাস নারদকে সমাগত দেখিয়া পাদ্যাদি দিয়া তাহার পূজা করিলেন । তখন নারদ ব্যাসদেবকে কহিলেন, তুমি মহাভারতবর্ণন ও পরব্রহ্মের স্বরূপ অবগত হইয়া বৃথা কিজান্ত থিয় হইতেছ? তাহাতে ব্যাসদেব কহিলেন, আমার মন কিছুতেই তৃপ্তি লাভ করিতেছে না। এই কথা শুনিয়া নারদ করিলেন, তুমি ভগবানের নিৰ্ম্মল যশ বৰ্ণন কর নাই, এই জন্ত তোমার এইরূপ অবসাদ জন্মিয়াছে । ভগবানের নিৰ্ম্মল যশ বর্ণন করিলে এই অবসাদ দূর হইবে । আমার পূর্বজন্মবিবরণ জ্ঞাত হইলে এই সংশয় নিরাকৃত হইবে। আমার পুর্বজন্মবৃত্তান্ত বর্ণন করিতেছি, অবহিত চিত্তে শ্রবণ কর,— আমি পুৰ্ব্বকল্পে অর্থাৎ গতজন্মে কোন বেদবাদি-ব্ৰাহ্মণদিগের এক দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলাম। বর্ষাকালে যোগিগণ চারিমাসকাল একত্র অবস্থান করতেন, তখন আমার মাত৷ র্তাহীদের শুশ্রষার নিমিত্ত আমাকে নিয়োগ করেন। আমি বালচাপলা, ক্রীড়া ও লোভাদি পরিশূন্ত হইয়া সৰ্ব্বদা ঋষিগণের অনুবর্তী.থাকিতাম । ঋষিগণ যদিও সমদৰ্শী ছিলেন, তথাচ র্তাহারা আমার প্রতি বিশেষ কৃপাপরবশ হইয়াছিলেন । আমি একবার তাছাদের আস্তোয় তাহাদিগের ভিক্ষাপাত্রসংলগ্ন উচ্ছিষ্টান্ন ভোজন করি, তাঁহাতে আমার পাপমোচন হয় । ঋষিদের উচ্ছিষ্ট ভোজনে প্রবৃত্ত হইলে পর ক্রমে আমার চিত্তশুদ্ধি হইল এবং তাছাদের ধৰ্ম্মে আমার রুচি জন্মিল । তাহার প্রতিদিন হরিকথা গান করিতেন, তাহীদের সেই সকল মনোহর কথা শুনিতে পাইতাম । শ্রদ্ধাপুৰ্ব্বক প্রত্যেক পদ শ্রবণ করাতে শ্ৰীকৃষ্ণে অামার অতিশয় রতি হইল। ভগবানে আমার শ্রদ্ধা জন্মিলে তৎক্ষণাৎ আমার অপ্রতিহত মতি আবির্ভূত তুইল। আমি সেই মতি দ্বারাই প্রপঞ্চাতীত পরব্রহ্মস্বরূপ আত্মাতে স্বকীয় অবিদ্যা দ্বারা যে এই স্থল ও স্বগদেহ কল্পিত হইয়াছে, ইহ জানিতে পারিলাম। এই প্রকারে শরৎ ও বর্ষ। এই দুই ঋতু সায়ং প্রাতঃ ও মধ্যাহ্ন এই ত্রিকালে মহাত্মা মুনিগণ কর্তৃক সংকীর্ত্যমান হরির নিৰ্ম্মল যশ বিশিষ্টরূপে শ্রবণ করাতে আমার মনে রক্তস্তমোনাশিনী দৃঢ়ভক্তি উদিত হয় । আমি এইরূপে ভক্তিসম্পন্ন, বিনয়যুক্ত, নিষ্পাপ, শ্রদ্ধাম্বিত এবং সংযতেন্দ্রিয় ছষ্টয়া ঐ যোগিদের অর্গত হইয়া থাকিলে বর্ষাবসানে যখন তাহায়া গমনোন্মুখ হইলেন, তখন তাহারা দীনবাৎসল্যগুণে .সাক্ষাৎ ভগবৎকর্তৃক কথিত যে গুহ জ্ঞান তাহা কৃপা করিয়৷ আমাকে উপদেশ করিলেন। ঐ জ্ঞানদ্বারা আমি স্মৃষ্টিসংহারাদি বিধানকর্তা ভগবান বামুদেবের মায়ামুভব জানিতে পারিয়াছি, তাহাতে জীব সকল ভগবৎপদ প্রাপ্ত হয়। সৰ্ব্বনিয়ন্ত পূর্ণস্বরূপ পরব্রহ্মে যে কৰ্ম্মাপর্ণ তাহাই আধ্যাক্সিকাদি তাপ রয়ের মহৌষধ । X আমার বিজ্ঞানোপদেশক বিপ্রগণ দূরদেশে গমন করিলে পর আমি নিরাশ্রয়ভাবে অবস্থান করিতে লাগিলাম। আমার জননী একপুত্র, তাহাতে তিনি স্ত্রীজাতি, আবার পরাধীন, সুতরাং আমার রক্ষণাবেক্ষণে ইচ্ছা থাকিলেও তাছাতে সমর্থ হইতেন না, তখন আমার বয়স পাঁচবৎসর মাত্র। একদা আমার মাতা রাত্রিযোগে গৃহ হইতে নির্গত হইলে পথিমধ্যে সর্পাঘাতে র্তাহার মৃত্যু হয় । আমি তাহার মৃত্যুকে ভগবানের অনুগ্রহ জানিয়া উত্তরদিকে প্রস্থান করিলাম । ঐ দিকের পথে ভ্রমণ করিতে করিতে নানাস্থান অতিক্রম করিয়া এক নিবিড় অরণ্য প্রাপ্ত হইলাম। পরে অত্যন্ত শ্রান্তিবশতঃ বিকলেঞ্জিয় এবং ক্ষুধাতৃষ্ণায় ব্যাকুল হওয়াতে একত্ত্বদে স্নান ও জলপান করিয়া কিঞ্চিৎ সুস্থ হইলাম। তদনন্তর সেই নিৰ্জ্জনবন মধ্যে একটা অশ্বখবৃক্ষের মূলে উপবিষ্ট হইয় গুরুমুথে যেরূপ শ্রবণ করিয়াছিলাম, বুদ্ধিদ্বারা আপনার হৃদয়স্থ পরমাত্মাকে সেইরূপে চিন্তা করিতে লাগিলাম। ভক্তিবশীভূত চিত্ত দ্বারা ভগবান হরির চরণারবিন ধ্যান করাতে ও উৎকণ্ঠাবশতঃ আমার লোচনায় অশ্রুজলে পরিপূর্ণ হইল, ক্রমশঃ হৃদয়ে হরি আসিয়া আবিভূত হইলেন। তাছার দর্শন পাইয়া আমার সমস্ত অঙ্গ পুলকে পরিপূর্ণ হইল। পরমাননাপ্রবাহে লীন হইয় আত্মা ও পরাত্মা উভয়কেই আর দেখিতে পাইলাম না। তখন আনন্দময় হওয়াতে ধ্যাত ও ধোয় এক হইয়াছিল। পরক্ষণই আর কিছুরই অনুভব হইল না। অনেকক্ষণ ভগবানের আর সেই রূপ দেখিতে না পাইয়া হৃদয় অতিশয় ব্যাকুল হইল। পুনৰ্ব্বার আবার মনঃসমাধান করিলাম, কিছুতেই আর ভগবদর্শন লাভ হইল না। নির্জনবনে বসিয়া ভগবদর্শনার্থ এইরূপে বারংবার যত্ন করিতে থাকিলে ঈশ্বর সুমধুরবাণী দ্বারা সাম্বন করিয়া আমাকে কহিলেন, নারদ ! এই জন্মে তুমি আর আমাকে দেখিতে পাইবে না, যেহেতু অবশেন্দ্রিয় কুযোগিগণ আমার দর্শন পায় না। তবে যে একবার তোমাকে আমার রূপ দেখাইলাম, সে কেবল আমার প্রতি তোমার অনুরাগ বৃদ্ধির স্থিত, কেননা অামাতে অনুরাগ জন্মিলে সাধুজন ক্রমশঃ কামক্রোধাদি পরিত্যাগ করিতে পারেন । বহুদিন ধরিয়া সাধুসেবা দ্বারা আমাতে তোমার বুদ্ধি দৃঢ় কর, তাঙ্গ হইলেই এই নিন্দনীয় লোক পরিত্যাগ করিয়া আমার পাশ্বদ হইতে পরিবে। আমাতে বুদ্ধি নিবন্ধ হইলে আর কখন তাহার বিচ্ছেদ হইবে না । আমার অনুগ্রহে প্রলয়ের পরেও তোমার স্মৃতি থাকিবে । ভগবান এইরূপ কহিয়া অন্তৰ্হিত হইলেন । অনস্তর আমিও লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া অনস্তস্বরূপ সেষ্ট ভগবানের গুহনাম উচ্চারণ ও তাহার শুভকৰ্ম্ম সকল স্মরণ