পাতা:বিশ্বকোষ দশম খণ্ড.djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাস্তিক কহে । বেদাপ্রামীণাবাদী, যাহার বেদের প্রামাণ্য স্বীকার কয়ে না, হিন্দুশাস্ত্র মতে, তাহারাও নাস্তিকপদবাচ্য। “যোইবমন্তেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রয়াজিঃ । স সাধুভিবহিষ্কার্ষে নাস্তিকোবেদনিন্দক ॥” (মন্ত্র ২১১) যে সকল দ্বিজ হেতুশাস্ত্র অর্থাৎ তর্কবিদ্যাকে আশ্রয় করিয়া ধৰ্ম্মের মূল স্বরূপ বেদ ও শ্রুতিকে অমান্ত করে, সেই সকল বেদনিক নাস্তিক পদবাচ্য। ইহাদের সহিত যজননাঙ্গনদান প্রতিগ্রহাদি কোন বিষয়েই শিষ্টসমাজ কোনরূপ সম্পর্ক রাখিবেন না । নাস্তিক শব্দের পর্যায়—বার্হস্পত্য, চার্কাক ও লৌকায়তিক । ( ছেমচ” ) ইহা ৬ প্রকার—মাধ্যমিক, যোগাচার, সোঁত্রান্ত্রিক, বৈভাযিক, চাৰ্কাক ও দিগম্বর । চাৰ্কাক, বৌদ্ধ ও জৈনকেই হিন্দুশাস্ত্রকারগণ নাস্তিক বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । সাংখ্যাদি দর্শনে নাস্তিক মত খণ্ডন স্থলে বৌদ্ধদিগের মতই খণ্ডিত হইয়াছে। নাস্তিকগণ প্রত্যক্ষমাত্র প্রমাণ স্বীকার করেন, প্রত্যক্ষাতিরিক্ত অন্তু কোন প্রকার প্রমাণ স্বীকার করেন না এবং ইহাদের মতে বেদও প্রামাণ্য নহে। ইহারা যে অনুমান ভিন্ন মন্ত প্রমাণ স্বীকার করেন না, তাহ প্রায় সকল দর্শনেই খণ্ডিত হইয়াছে । চার্লাকের মতে—আত্মা বা পরকাল কিছুই নাই, এই মতে স্থূলদেহই আত্মা, দেহনাশের সহিতই আত্মার নাশ হইয়া থাকে। চা পাক বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করা দুরের কথা, বরং নিন্দাচ্চলে বলিয়াছেন, ভগু, ধূৰ্ত্ত ও রাক্ষস এই ত্ৰিবিধ লোক একত্র হইয়া বেদ রচনা করিয়াছে। অশ্বমেধযজ্ঞে যজমানপত্নী অশ্বশ: গ্রহণ করিবে, ইত্যাদি বিষয় ভণ্ডের রচিত, স্বৰ্গনরকাদি ধূৰ্ত্ত প্রণীত এবং মদ্যমাংসাদির বিষয় নিশাচরকল্পিত । এই মত প্রতিপাদন করিয়া চার্কাক নাস্তিক নামে অভিহিত হইয়াছেন । [ চাপাক দেথ । ] যাহারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে না, তাহীরাই নাস্তিক এই বুৎপত্তি অনুসারে চাৰ্ব্বাকই প্রকৃত নাস্তিক পদবাচ্য । সৰ্ব্বদর্শনসংগ্রহকার মাধ্যমিক, যোগাচার, সোঁত্রান্তিক ও বৈভাষিক এই চারি শ্রেণীর বৌদ্ধকেই নাস্তিক বলিগ অভিহিত করিয়াছেন। বাস্তবিক পক্ষে ইছারা নাস্তিক কি না তাহ নির্ণয় কুরী অতি দুরূহ। জগৎকৃষ্ট, কি অনাদি, ঈশ্বর আছেন কি না, | এবং আত্মা আছে কিন, বেন্ধের এ সকল গুঢ়রহস্তের আলোচনা করেন না। ইহার এইরূপ প্রতিপাদন করেন যে যাং আছে, তাহ প্রত্যক্ষ, তাহাই স্বীকার করিয়া নাম [ ૧૯ ] নাস্তিক রূপের আলোচনাতেই বৌদ্ধদৰ্শন সমাপ্ত । এইমতে জগৎ চুঃখময়। হুঃখের কারণ কি, কি উপায়েই বা দুঃখের বিনপু হয়, এই সকল প্রশ্নের মীমাংসায় পরিপূর্ণ। কিন্তু বিশেষ করিয়া দেখিতে গেলে বৌদ্ধদৰ্শনের মৰ্ম্মে আত্মার স্বীকার দেখিতে পাওয়া যায়। ইহার অন্যান্ত দর্শনের মত কৰ্ম্ম ও কৰ্ম্মফল স্বীকার করিয়া থাকেন । কৰ্ম্ম ও বাসন৷ পুনর্জন্মের কারণ। বাসনার নিরাশ হইলে জন্ম হয় না, বাসনা থাকিলেই জন্ম হইবে। ইহারা আত্মা স্বীকার করেন না অথচ পুনর্জন্ম মানিয়া থাকেন। এই মত যেন বিরুদ্ধ বলিয়া বোধ হয় । কিন্তু আত্মা না থাকিলেও জীবপ্রবাহরূপে জন্ম জন্মান্তর থাকিতে পারে। এইজন্য আত্মা স্বীকার না করিলেও জন্মান্তর স্বীকারে বাধা ঘটেনা। ইহা প্রাচীন বৌদ্ধমত জানিতে হইবে। বেদান্তদর্শনে শঙ্করাচার্য বৌদ্ধমত খণ্ডনস্থলে লিখিয়াছেন, বুদ্ধদেব এক হইলেও তাহার শিষ্যগণের বুদ্ধিদোষে তদীয় মত অনেক প্রকার হইয়াছে, তাহার শিষ্যমধ্যে যে যেরূপ বুঝিয়াছিল সে সেইরূপ সিদ্ধান্তগ্রন্থ প্রস্তুত করেন। প্রথমতঃ ইহাদের মধ্যে তিন প্রকার বাদী দেখিতে পাওয়া যায়। কেহ কেহ সৰ্ব্বাস্তিত্ববাদী, কোন সম্প্রদায় কেবল মাত্র বিজ্ঞানাস্তিত্ববাদী, আবার অন্ত একদল সৰ্ব্ব শূন্তবাদী। যাহারা সৰ্ব্বাস্তিত্ববাদী, তাহারা বলে সব আছে, ঘটপটাদি বাহপদার্থও আছে, জ্ঞানাদি অন্তরের পদার্থও আছে, বাহিরে ভূত ও ভৌতিক, অস্তরে চিত্ত ও চৈত্ত । দ্বিতীয়দল বলেন, বাহিরে কিছুই নাই, সমস্তই অন্তরে। অন্তরে বিজ্ঞান আছে, তাহাই বাহিরের ষ্ঠায় প্রতীয়মান হয় । তৃতীয় দল বলেন, অন্তরের বিজ্ঞানও অসৎ । ইহাদের মতে ভূত ও রূপাদি গ্রাহক চক্ষু প্রভৃতি ভৌতিক। ভূত, পার্থিব, জলীয়, তৈজস ও বায়বীয় পরমাণু ভূতপদবাচ্য, ইহার যথাক্রমে থর, স্নেহ, উষ্ণ ও চঞ্চল স্বভাবীথিত । এষ্ট সকল পরমাণু পরস্পর সংঘাতপ্রাপ্ত হইয়া পরিদৃশুমান পৃথিব্যাদি উৎপাদন করিয়াছে। রূপ, বিজ্ঞান, বেদন, সংজ্ঞা ও সংস্কার এই পাঁচট স্কন্ধ। এ সকল অধ্যায় অর্থাৎ আস্তর। এ সকল সংহত ( মিলিত ) হইয়া সমুদয় আন্তর ব্যবহার নিৰ্ব্বাহ করিতেছে । ইহাদের মতে সংঘাতজনক সমস্ত পদার্থই অচেতন। পরমাণুও অচেতন, স্কন্ধও অচেতন। ভোগ করে, শাসন করে ও নিয়মন করে, এমন কোন স্থিরচেতন নাই যে, তৎপ্রভাবে ঐ সকল পরমাণু সংঙ্গত হইবে বিজ্ঞান ব্যতীত তাং রা কোন স্থির চেতন—অfত্মা ও ঈশ্বর মানেন না। তাহারা বলেন, পরমাণুর ও স্বন্ধ সকলের কর্তা ও অধ্যক্ষ নাই । তাহারা স্বতঃই প্রবৃত্ত হয়, l