পাতা:বিশ্বকোষ দ্বাবিংশ খণ্ড.djvu/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিন্দীভাষা জানিয়া হিন্দুস্থানী-সংজ্ঞায় অভিহিত করেন। ঐ হিন্দুস্থানীরা তৎকালে যে ভাযায় কথাবাৰ্ত্ত কচিত, তাছাই হিন্দী বা হিন্দুস্থানী ভাষা । বর্তমান সময়ে ঐ হিন্দিভাবা * অপরাপর ভাষা সকল হইতে পুষ্টকলেবর হষ্টয়া হিন্দুস্থানের জাতীয় ভাষার গৌরববৰ্দ্ধন করিয়াছে । সমগ্র ভারতকে হিন্দুস্থান বলিয়। গ্রহণ করা সব্বতোভা৭ে তষ্ঠায় । মুসলমানগণ ভারতের ষে ক্ষেত্রে প্রথম প্রতিপত্তিবিস্তার করিয়া প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন এবং তথাকার ষে সকল জাতির সহিত তাহারা অধিক সংশ্রবে আসিয় ছিলেন, তদেশীয়েরই পক্ষে হিন্দুস্থান এবং তথাকার অধিবাসিবর্গ প্রকৃতিই হিন্দুস্থানী অভিধানের যোগ্য। বর্তমান সময়ে হিন্দুস্থানের যে যে অংশে হিন্দীভাষা প্রচলিত, তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে স্পষ্টই পঞ্জাব প্রাস্ত হইতে গঙ্গা ও যমুনার সমগ্ৰ উপত্যকাদেশ অনুসরণ করিয়া পূৰ্ব্বাঞ্চলে কোশনদীতট পর্যন্ত ষে বিস্তীর্ণ ভূভাগ তাছাই হিন্দুস্থানীদিগের বাসভূমি । রাজপুতনা ও মধ্য প্রদেশের ন্তরাংশ এবং বর্তমান বেহারপ্রদেশের কতকাংশও হিন্দুস্থানের অস্তভুক্ত । যদিও নিমবঙ্গে এক্ষণে হিন্দীভাষার বহু প্ৰচলন চষ্টয়াছে, তথাপি উহ। হিন্দুস্থান বলিয়া পরিগণিত নহে ; পঞ্জাবপ্রদেশে ভিন্নরূপ ভাষা প্রচলিত থাকায় উহা মুসলমানের নিকট অধুনা হিন্দুস্থান বলিয়া আখ্যাত হয় না প্রাচীনকালে হিনীভাযার বিশেষ প্রসার ছিল বলিয়া বোধ হয় না । তৎকালে উহ। তদেশের অধিবাগিবর্গের ব্যবহৃত ভাষারূপেই ব্যবহৃত হইত। অন্তঃপুরচারিণী হিন্দুস্থানী রমণীগণই এষ্ট সরল ও অমিশ্র ভাষার আশ্রয়স্থল ছিল । কোমল বাক্যসম্পদৃষ্ট ঐ ভাষার প্রধান অবলম্বন। তৎকালে হিন্দী ভাষার মধ্যে ষে হ একট কঠোর ও শ্রুতিকটু শব্দের প্রয়োগ দেখা যাইত, তাহা বহির্দেশে নানা দেশীয় ও নানা সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কজনিত এবং পুরুষগণ কর্তৃকই অন্তঃপুর-সমানীত। হিন্দুস্থানী রমণীগণ যে বৈদেশিকের কোন সংশ্রব রাথিতেন না, ইহ। স্বতঃসিদ্ধ। এষ্ট কারণেই প্রকৃত হিন্দীভাষা অতিকোমল হষ্টয় পড়িয়াছিল এবং তাছা ক্রমে রেখতি, জেনানী বোলি বা অfউরৎ-কী-বোলি পভৃতি সংজ্ঞায় অভিহিত হয় স্থানভেদে এবং ভিন্ন দেশীয় বৈদেশিকদিগের সংশ্রব হেতু পুরুষমহলে হিন্দীভাষা ষে বিশেষ ভাৰে পুষ্টি লাভ করিয়াছিল, তাহা আমরা হিন্দুস্থানের বিভিন্ন অংশে প্রচারিত গ্রন্থাদি হইতে জানিতে পারি। বেহার অঞ্চল হিন্দী ভাষার পূর্বপ্রান্ত । । এথানকার কথিত হিন্দীভাষা অনেকাংশে মাগধিলক্ষণাক্র্যস্ত, এই জন্ত উহা মগাই নামেও কথিত। সুদূর পশ্চিম হইতে আরবী ও হিন্দু-আচাৰ্য্যগণ এদেশে আগমন করিয়া হিন্দীভাষার উপর ه ه با ] হিন্দীভাষা যে অন্তোষ্ঠ প্রভাব-বিস্তার করিয়াছেন, তাহ সহজেই অমুcময় । স্থানীয় ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতগণ হিন্দীভাযার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নানাবিধ সংস্কৃত ভাষাগত শব্দামু প্রাস সংযোজনা করিয়া স্থানীয় হিনীভাযার বিশেষ উৎকর্ষসাধন করিয়াছেন । এইরূপে অদ্যান্ত প্রধানতম স্থানীয় কেন্দ্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে আমরা বুঝিতে পারি ষে, স্থানীয় হিন্দীভাষায় বৈদেশিক শব্দমালা সংক্রামিত হইয়াছে। ব্রজভূমির নিকটবর্তী মহানগরী মথুরা ঐরূপ একটা কেন্দ্রস্থল, এখানকার হিন্দীভাষায় ব্রজবুলিরই প্রাধান্ত পরিলক্ষিত হয় । দিল্লী ও লক্ষেী রাজধানীতে মুসলমানের প্রভাব ও পারস্তভাষায় অধিক প্রচলন হেতু তথাকার হিন্দী পারসিক শব্দের যতদূর প্রাদুর্ভাব ঘটিয়াছে, আগ্র নগরীতে তাদৃশ শব্দ প্ররোগ পরিদৃষ্ট হয় না। অযোধ্য প্রদেশে দেশীয় রাজার অধীনে রাজকাৰ্য্য ও শিক্ষাপ্রণালী পরিচালিত হওয়ায় সেথানকার ছিন্দী ভাষায় কোনরূপ বৈদেশিক শব্দ প্রবেশলাভ করে নাই । ব্রাহ্মণনিষেবিত পবিত্র কাশীধামের হিন্দীভাবায়ও তাদৃশ উর্দু, বা পারসিক শঞ্চচ্ছটা মই, বরং এখানকার ভাষায় অধক পরিমাণে সংস্কৃত শন্ধের প্রাধান্ত পরিদৃষ্ট হইয়া থাকে । জয়পুর, যোধপুর, বিকালের প্রভূত রাজপুতনার অন্তর্গত রাজ্যসমুহে যে হিন্দীভাষা প্রচলিত, তাহ মারবাড়ের দেশীয় ভাষাসমাশ্রিত ; এই কারণে ডই মারবাড়ী হিন্দী নামেও পরিচিত । উপরি উক্ত স্থানগত হিন্দী ভাষার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যালোচনা করিলে বর্তমানে হিন্দী ভাষাকে চারিট বিভিন্ন অংশে বিভাগ করা যার। দিল্লীর সন্নিহিত প্রদেশে উর্দু, হিন্দী, রাজপুতনার মারবাড়ী হিন্দী, মধ্য ভাগে আদি বা মূল হিন্দী (সংস্কৃতমূলক হিন্দী ) এবং পুৰ্ব্বাঞ্চলে বেহারী হিনী । এই সকল শ্রেণীর হিন্দী ভাষাতেই আদিরসের বিলক্ষণ প্রতাব দৃষ্ট হয়। মুখের বিষয়, বর্তমান যুগে মুশিক্ষার গুণে সে অশ্লীলোক্তির স্রোত এখন আর তাদৃশ প্রবল ভাবে প্রবাহিত নহে। কাজরী, জাতসার, গল্পগুচ্ছ, কিংবদন্তী, সাধু সঙ্গীত, নাটকাদি ও প্রহেলিকাদি তাছার স্থান অধিকার করিয়াছে। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে ধৰ্ম্মপ্রবর্তক মহাপুরুষ কবীর প্রাকুভূত হন। তাহার শাখী ও শবদ নামক নৈতিক ও শ্লেষ্মাত্মক কাব্যগাথা সাধারণের চিত্তশ্ৰোত ভিন্ন দিকে ফিরাইয়া দিতে সমর্থ হয়। এই সময়ে হিন্দুস্থানী কবি নাজিরও স্বীয় সুললিতও সুভাষিত পদাবলী দ্বারা হিন্দীভাযাকে উন্নতির সোপানে সংস্থাপন করিতে সফলকাম হইয়াছিলেন। আমরা হিন্দী-সাহিত্য-প্রসঙ্গে ইহার যথাসম্ভব জালোচনা করিব । আলোচনা দ্বারা আমরা যতদূর অবগত হইতে পারিয়াছি