পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নকুল প্রভৃতি পাখী টানিয়া বাহির করিবার চেষ্টা করে। যেখানে বহুসংখ্যক নেউলের বাস, সেখানে হাস মুরগী প্রভৃতির ডিম রক্ষা করা বড় কষ্টকর। ইহারা ডিম খাইতে বড় ভালবাসে। ‘সাপে নেউলে চিরশত্রুত, এ প্রবাদ ভারতের ও যবদ্বীপের সৰ্ব্বত্রই প্রসিদ্ধ। এ দেশের অনেকেরই বিশ্বাস, সাপে নেউলে দেখা হইলেই বিবাদ বাধে। নেউলকে সাপে কামড়াইলে নেউল তৎক্ষণাৎ নিকটবৰ্ত্তী ঝোপে গিয়া ঔষধ খাইয়া আসে, তাই সপ-দংশনে নেউলের কোন ক্ষতি হয় না। মরাঠীদিগের বিশ্বাস, নকুলী বা মঙ্গুস্বেল নামে একপ্রকার লতা আছে, তাহার মূলই সৰ্প-বিষহরণে সমর্থ। কিন্তু জের্ডন প্রভৃতি অধুনাতন প্রাণিতত্ত্ববিৎগণ এ প্রবাদ বিশ্বাস করেন না । তাহদের বিশ্বাস, নেউলের কঠিন চৰ্ম্মে সহসা সপবিষ প্রবেশ করিতে পারেন, সেইজন্ত সৰ্পদংশনে সহজে ইহাদের কিছু হয় না। সাপে নেউলে যুদ্ধ বাধিলে অধিকাংশ স্থলে নেউলই জয়ী হয় ও সাপ মরিয়া যায়। কিন্তু নেউলেরা সহজে সাপের সহিত বিরোধে প্রবৃত্ত হইতে চায় না । গোখুরা প্রভৃতি বিষধর সম্মুখে পড়িলে প্রথমতঃ পাশ কাটাইবার চেষ্ট করে। তবে যদি কোন রকমে সরিতে না পারে ও সপকবলে পতিত হয়, তাহা হইলে মহাবিক্রমে সর্পকে আক্রমণ করে। মহাবিষধর সর্পও নকুলের কৌশলে পরাস্ত ও নিহত হয় । এদেশে বহুদিন হইতে সকলের বিশ্বাস, নেউল ডিঙ্গাইয়া গেলে সপ দ্বিথগু হইয় পড়ে। এ বিশ্বাসের কথা অথৰ্ব্ববেদেও আছে— “যথা নকুলো বিচ্ছিষ্ঠ সংদধাত্যহিং পুনঃ ।” (অথৰ্ব্ব ৬১৩৯৫ । ) তবে যদি কোন প্রকারে সপের বিষ নকুলের চৰ্ম্মভেদ করিয়া চৰ্ম্ম মধ্যে প্রবিষ্ট হয়, তাহ হইলে আর তাহার রক্ষা নাই। আরিষ্টটল লিখিয়াছেন,—মহাবিষধর সপের সহিত দেখা সাক্ষাৎ হইলে যতক্ষণ আর কোন নেউল আসিয়া উপস্থিত না হয়, ততক্ষণ শক্রকে আক্রমণ করে না। বিষ যাহাঁতে শরীরে প্রবেশ করিতে না পারে, তজ্জন্ত নেউলেরা আক্রমণের পূর্বে জলে ডুব দিয়া সৰ্ব্বাঙ্গে ভাল করিয়া কাদা মাখিয় লয়। এদেশে যেমন সাপে নেউলে বিরোধের কথা প্রচলিত, প্লিনির গ্রন্থে কুম্ভীর ও নেউল সম্বন্ধে বড় এক আশ্চৰ্য্য কথা লিপিবদ্ধ আছে । প্লিনি লিখিয়াছেন, কুম্ভীর যখন মুখ মেলিয়া নিদ্র যায়, নেউল শাণিত অস্ত্রের ন্যায় তীব্রবেগে কুম্ভীরের মুখ দিয়া কণ্ঠমধ্যে প্রবেশ করিয়া নাড়ীভুড়ি চিবাইয়া বাহির করে। কিন্তু এখনকার প্রাণিতত্ত্ববিদগণ প্লিনির এ কথায় কিছুমাত্র আস্থা করেন না । তবে এই মাত্র জানা গিয়াছে, যেখানে বহু কুম্ভীরের বাস, সেখানে বহু সংখ্যক নেউলও বাস করে। ইহারা বিশেষ সতর্কতার সহিত কুম্ভীরের ডিম্ব বাহির করিয়া [ 8૧ાના ] নকুল ভক্ষণ করে। তাহাজের এই শক্রতানিবন্ধন কুম্ভীরের সংখ৷ বৃদ্ধি হইতে পারে না। নেউল ইন্দুরেরও মহাশত্র। এক একটা নেউল শত শত ইন্দুর মারিয়া তাহাদের রক্তপান করে। বেনেট সাহেব দেখিয়া লিথিয়াছেন, একটী ছোট ঘরের মধ্যে একটা নেউল দেড় মিনিটের মধ্যে ১২টা বড় বড় ধাড়ী ইন্দুর মারিয়া ছিল । মহাভারতেও মকুলের আহার ইদুরের কথা আছে— s “সৱৈঃ সৰা হি জীবন্তি তুৰ্ব্বলৈবলবত্তরাঃ । নকুলে মুষিকানক্তি বিড়ালো নকুলস্তথা ॥” (ভারত ১২৫২- ) পুৰ্ব্বকালে মিসরবাসীরা নেউলের পূজা করিত। নেউল মরিলে তাহাকে একটী পবিত্র পেটিকা মধ্যে আবদ্ধ করিয়া রাথিত। গৃহপালিত বিড়ালের প্রতি যেমন যত্ন, মিশরবাসীরা তদপেক্ষা নকুলের অধিক যত্ন লইত ; ইহাদিগকে দুধ মাছ দিয়া পুষিত এবং কেহ নকুল বিনাশ করিলে রাজদ্বারে তাহার দণ্ড হইত। মিসরের ষ্ঠায় ভারতেও নকুলহত্যা নিষেধ ছিল মনুসংহিতায় লিখিত আছে, নকুলহত্যা করিলে শূদ্রহত্যার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয় । ( মনু ১১।১৩। ) মহুসংহিতার একস্থানে আছে, ঘৃত অপহরণ করিলে নকুলযোনিতে জন্ম হয় । ( মন্ত্র ১২৬২ । ) বৈদ্যক মতে নেউলের মাংসের গুণ—পিচ্ছিল, বাতনাশক, শ্লেষ্মা ও পিত্তবৰ্দ্ধক । ( রাজনি” ) এই জন্তু পুষিলে বিড়ালাদির মত সহজেই পোষ মানে । নানা স্থানে পোষা নেউল পাওয়া যায়। নেউল পুষিলে গৃহে সৰ্প বা ইদুরের উৎপাত থাকে না । ২ মহাদেব, শিব । “যুধিষ্ঠিরস্ত যা কন্যা নকুলেন বিবাহিতা । পূজিতা সহদেবেন সী কন্ঠ বরদা ভবেৎ।।" (বিদগ্ধমুখম” ) ৩ পাণ্ডুরাজের চতুর্থ পুত্র, এই পুত্র মাত্রীর গর্ভে অশ্বিনীকুমারদ্বয় হইতে জন্মে। ইহার বিষয় মহাভারতে এইরূপ আছে, পাণ্ডু শাপগ্ৰস্ত হইয়া যে সমর পত্নীদ্বয়ের সহিত বনে অবস্থান করিতেছিলেন, সেই সময় কুন্তী স্বীয় বরপ্রভাবে তিনটী পুত্র প্রসব করেন, মাত্রী কুন্তীর পুত্র হইতে দেখিয়া নিজের যাহাতে পুত্র হর, এই জন্য পাণ্ডুর নিকট প্রার্থন করেন, পাণ্ডু ইহা শুনিয়া কুন্তীকে অনুরোধ করেন। কুন্তী তখন মাদ্রীকে কহিলেন, ‘তুমি একটী তোমার অভিলষিত দেবতাকে স্মরণ কর।” মাদ্রী ভাবিয়া অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে স্মরণ করিলেন। এই অশ্বিনীকুমারদ্বয় হইতে মাত্রীর যমজ পুত্র হয়, জ্যেষ্ঠ নকুল, কনিষ্ঠ সহদেব। নকুল অশ্বিনীকুমার হইতে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া অতিশয় রূপবান ছিলেন।