পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নক্ষত্র { ويم8b ] নক্ষত্রে

দেখা যায় না। গ্যালিলিও ইছাদের অস্তিত্ব আবিষ্কার করিয়াছিলেন এবং ইছাদের সাহায্যে নক্ষত্রের বার্ষিক লম্বন (Yearly parallax) অবধারণ করিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। তাহার অনেক কাল পরে ব্রাডলী, সাস্কেলীন, এবং মেয়ার সাহেব যুক্ত তারার ব্যাপারে মনোযোগ প্রদান করিয়াছিলেন ; কিন্তু কাৰ্য্যতঃ কিছুই হয় নাই। অবশেষে হর্শেল সাহেব দীর্ঘকালবাপী পর্যালোচনা দ্বার, ইহাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে অপুৰ্ব্ব সিদ্ধান্ত উদ্ভাবন করিয়াছেন। ইভ, সেভারি, এস্কি, সাউথ, এবং হশেল এই কয়জনে মিলিত হইয়া উত্তমাশা অন্তরীপে চারি বৎসর কাল অনুসন্ধান দ্বারা দক্ষিণ গোলকাৰ্বে ৬• • • যুক্ত তারা এবং বহুতার আবিষ্কার করেন। উহাদের অধিকাংশই দুইটর যোগে গঠিত ; কিন্তু অনেকগুলি আবার তিনটী, চারিট, এমন কি পাঁচটা লইয়াও গঠিত হইয়াছে। এই সকল যুক্ততারার মধ্যে দূরত্ব কখনই অধিক দেখা যায় না। ঐ দুরত্ব ১ হইতে ৩২ এর অধিক নহে। ইট তারা পরম্পরের নিকটবৰ্ত্ত হইয়াছে দেখা গেলেই যে তাঁহাদিগকে যুক্ততার বলিতে হইবে এমত নহে। প্রকৃত যুক্ততারা গুলিতে, ছুইটী তারা কেবল যে পরস্পরের নিকটবর্তী হয়, তাহা নহে, তাহারা পরস্পরের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করে। প্রথম পরিমাণের তারাদিগের মধ্যে প্রত্যেক ষষ্ঠ তারাটী বহুতারা। এতদপেক্ষ ক্ষুদ্র তারাগুলির মধ্যে বহুতারার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বিরল। কোন কোন স্থলে একটা তার অন্য গুলি অপেক্ষ অনেক বৃহত্তর ; যেমন কালপুরুষের অন্তর্গত রিগেল (বটুভূদ্রি ) । কিন্তু সচরাচর যুক্ততারাগুলির জ্যোতিঃ প্রায়ই সমান। অধিকাংশস্থলে যুক্ততারাগুলি একই বর্ণের ; কিন্তু সমুদয়ের এক-পঞ্চমাংশের মধ্যে বর্ণভেদ দেখিতে পাওয়া যায় । ২০ বৎসর পর্যালোচনার পর ১৮০৩ খৃষ্টাব্দে হর্শেল সাহেব মত প্রকাশ করেন যে, যুক্ততারাগুলি পরস্পর সংস্কৃষ্ট দুই বা ততোধিক তারামণ্ডল, উহার নিয়মিত কক্ষাবৃত্তে সাধারণ ভারকেন্ত্রের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করে। সৌরজগতে গতির যে নিয়ম প্রবর্তিত আছে, উহাদিগের মধ্যেও সেই নিয়মের প্রচলন দেখা যায়, এবং উহাদের কক্ষাবৃত্ত দীৰ্ঘবৃত্তাকৃতি (Elliptical ) । অতএব এই সকল দূরবর্তী জড়মগুল মহাত্মা নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ-সম্বন্ধীয় নিয়মের বশবৰ্ত্তী । উহাদের মধ্যে আবার অনেক গুলির প্রদক্ষিণের সময় মোটামুটি নিরূপিত হইয়াছে। হার্কিউলিসের অন্তর্গত একটি তারার প্রদক্ষিণের সময় ৩০ বৎসর। ইহাই সৰ্ব্বাপেক্ষ কম । অক্সান্ত গুলির প্রদক্ষিণের সময় একশত বৎসর বলিয়া অবধারিত হইছে। যে সকল স্থলে লম্বন জানা আছে, সেখানে কক্ষাবৃত্তের আয়তন নিরূপণ করিতে পারা যায়। এই উপায়ে জ্যোতিৰ্ব্বিদ পণ্ডিতেরা অবধারণ করিয়াছেন যে রাজহংস ( Cygnus ) নক্ষত্রের অন্তর্গত ৬১ সংখৰু যুক্ততায়ার পরস্পরের চতুর্দিকে যে কক্ষাবৃত্ত আছে, তাহ আয়তনে স্বর্ঘ্যের চতুর্দিকে নেপচুণের যে কক্ষাবৃত্ত আছে তাহ অপেক্ষ অনেক বড়। এইরূপ পরিভ্রমণবশতঃ পূর্বে যে সকল তারাকে একক দেখা যাইত, অধুনা তাহাদের অনেককেই যুক্ত দেখা যায়। হেলিসাহেব নিৰ্দ্ধারণ করিয়াছেন যে তারাগণের প্রকৃত গতি অন্ত এক প্রকার। একটা তারা ভিন্ন ভিন্ন দিকে সরিয়া নড়িয়া যায়। এ কারণপ্রযুক্ত নক্ষত্রগণের আকৃতি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হইতেছে । হাম্বোণ্ট বলেন, দক্ষিণ দিকৃস্থ ক্রশ নক্ষত্র চিরকাল ঠিক বর্তমান আকৃতিবিশিষ্ট থাকিবে না ; কারণ যে চারিটি তার লইয়া উক্ত নক্ষত্র গঠিত হইয়াছে, তাহারা ভিন্ন তিন্ন মার্গে অসমান বেগে ভ্রমণ করিতেছে। উহা সম্পূর্ণরূপে ভগ্ন হইয়া যাইতে কত সহস্ৰ বৎসর লাগিবে, তাহা গণনা করা যায় না। জ্যোতিঃশাস্ত্রে যেরূপ লিখিত আছে, তাহার বিষয় পৰ্য্যলোচনা করিয়া দেখা যাউক । স্বৰ্য উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন গতিতে আকাশমণ্ডলে পরিভ্রমণ করেন । এই ছুইটী সীমা বা রেখার মধ্যে পৃথিবীর যে অংশ পতিত হয়, তাহার নাম মধ্যখণ্ড। এই খণ্ডে দ্বাদশরাশি ও তাহার অন্তর্গত ১০১৬ট নক্ষত্র দেখিতে পাওয়া যায়। গগনমণ্ডলের উত্তরে যে অংশ তাহাকে উত্তরখণ্ড, তাহার মধ্যে ৩৫ রাশি অর্থাৎ পুঞ্জ ও তদন্তগত ১৪৫৬ নক্ষত্র ও দক্ষিণদিকে যে খণ্ড তাহার নাম দক্ষিণথগু, তাহার মধ্যে ৪৬ রাশি ও তদন্তর্গত ৯৯৫ নক্ষত্র অবস্থিত আছে, ইহ পাশ্চাত্য জ্যোতিৰ্ব্বিগণ স্থির করিয়াছেন। ঐ মধ্যখণ্ডে যে সকল নক্ষত্র আছে, তাহাদিগের মধ্যে কতকগুলি লইয়া এক একটী আকৃতি কল্পনাপূর্বক পুরাকালে জ্যোতিৰ্ব্বিদ পণ্ডিতগণ দ্বাদশ রাশি বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। বিষুবরেখার উত্তরদিকে মেষাদি ৬ট রাশি ও দক্ষিণদিকে তুলা প্রভৃতি ৬ট রাশি তির্যাক ভাবে অবস্থিত আছে। গগনমগুলে এই তিন খণ্ডে যে সকল নক্ষত্রের বিষয় বলা হইয়াছে, তাহা ভিন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্রসহকারে বিস্তর নক্ষত্র দৃষ্টিগোচর হইয় থাকে। ভারতবর্ষীয় জ্যোতিৰ্ব্বিদগণ উত্তর ও দক্ষিণ খণ্ডে যে সকল স্নাশি ও নক্ষত্র আছে, তাহার কোন উল্লেখ করেন নাই, এই জন্তু কোন জ্যোতিগ্রন্থে সেই সকল রাশি বা নক্ষত্রের নাম পাওয়া যায় না ।