পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নল [ ७ তখন অতি সাবধানে দময়ীর মস্তক ভূতলে রক্ষা করিলেন এবং দময়ন্তীর এই দুর্দশ দেখিয়া, নল নিতান্ত অবসর হইয়া মোদন করিতে লাগিলেন। একবার দময়ন্তীকে পরিত্যাগ করিয়া কিছু দূরে গমন করেন, আবার বাকুলের স্তায় রোদন করিতে করিতে প্রত্যাবৃত্ত হন। তখন নল হৃদয়কে কিছু দৃঢ় করিয়া কহিলেন, দময়ন্তি ! তুমি নিতান্ত পতিপরায়ণ, এইজন্ত তোমাকে আদিত্যগণ, বসুগণ, রুদ্রগণ, মরুদগণ ও অশ্বিনীকুমারদ্বয় রক্ষা করুন। নলের বুদ্ধি কলিকর্তৃক অপহৃত হওয়ায় তিনি অতুলনীয় প্রিয়তম ভাৰ্য্যাকে পরিত্যাগ করিয়া গমন করিলেন, খানিক দূর গিয়া আবার আসিলেন, এইরূপ তিনি বারংবার যাতায়াত করিতে লাগিলেন। তাহার হৃদয় যেন দ্বিধা হইয়৷ গেল। কিছুতেই হৃদয়কে দৃঢ় করিতে পারিতেছেন না। কলি তখন হৃদয়ে বিশেষরূপে আবিষ্ট হওয়ায় নলের বুদ্ধি লোপ পাইল, তখন নল জনশূন্ত কাননে অৰ্দ্ধনগ্ন প্রণয়িনী ভাৰ্য্যাকে নিদ্রিতাবস্থায় পরিত্যাগ করিয়া করুণ-বিলাপ করিতে করিতে তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। নল গমন করিলে দময়ীর কালনিদ্রা ভঙ্গ হইল। তখন সতী নলকে না দেখিতে পাইয়া করুণ ভাবে রোদন করিতে লাগিলেন, তাহার এই রোদনে পশুপক্ষীও যেন রোরুদ্যমান হইল । দময়ন্তী ইহার অনেক পরে সুবাহনগরে উপস্থিত হন, সেইখানে রাজগৃহে কিছুদিন স্বৈরিন্ধীর বেশে অবস্থান করেন। বিদর্ভাধিপতি তীম কাৰ্য্যকুশল ব্রাহ্মণদিগকে ইহাদের অমুসন্ধানের নিমিত্ত দেশে দেশে প্রেরণ করিলেন। মুদেব সুবাহনগরে আসিয়া দময়ন্তীর সন্ধান পাইলেন। তাহার পর দময়ন্তী ভাসভবনে আনীত হইলেন । নরপতি নল দময় স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া গহন বন মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, ভয়ানক দাবদাহ হইতেছে এবং সেই প্ৰজলিত দাবানল মধ্যে ‘হে নল ! হে পুণ্যশ্লোক ! শীঘ্ৰ আগমন কর, এইরূপ শব্দ উত্থিত হইতেছে। নল তখন ‘ভয় নাই’ এইরূপে অভয় দিয়া সেই প্রজ্বলিত অগ্নির মধ্যে প্রবেশ করিয়া একটী মহানাগকে দেখিতে পাইলেন। নাগ নলকে দেখিয়া কহিল, রাজন! নারদের শাপে আমার একপাদও চলিবার সামর্থ নাই, সত্বর আমাকে রক্ষা করুন। আমার নাম ককোটক, আমি আপনার মঙ্গলবিধান করিব। কৰ্কেটিক এই কথা বলিয়া অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ হইল। নল তাহাকে লইয়া দাবানলরহিত স্থলে গমন করিলেন। তখন কৰ্কেটিক নলকে কহিল, মহারাজ ! আপনি কতিপয় পদ গমন করুন। যেমন নল দশম [ و چ ---T ৰায় পদ মিঃক্ষেপ করিয়াছেন, তামনি কর্কেটিক তাহাকে দংশন করিলেন। কর্কেটিক দংশন করিবামাত্র নলের রূপ তিরো е 0 নল হিত হুইল। মূল নিজের এই বিরূপাবস্থা দেখিয় বিন্মিত হইলেন। কর্কোটক তখন নলকে কহিলেন, রাজন্‌! লোকে আপনাকে না জানিতে পারে, এই জন্মই আমি দংশন করিয়া প্রকৃতরূপ তিরোহিত করিলাম। আপনি যাহার" এই কষ্ট ভোগ করিতেছেন, লে মদীয় বিষে সস্তুপ্ত হইয়া আপনার শরীরে অবস্থান করিবে। আমার প্রসাদে আপনার দংষ্ট্র, শত্র ও বেদবিদ হইতে ভয় থাকিবে না। আপনি অস্থাই এখান হইতে অযোধ্যানগরে ঋতুপর্ণ রাজার মালয়ে গমন করুন, এবং তথায় । বাহক নামে সারথি হইয়া অবস্থান করুন। রাজা ঋতুপর্ণ দুতবিদ্যবিশারদ, তাহার নিকট দৃতিবিদ্যা অবগত হইলে অগপনার মঙ্গল হইবে, তখন পত্নী ও পুত্রাদির সহিত সম্মিলিত হইবেন। যখন আপনার নিজরূপ লাভ করিতে ইচ্ছা হইবে, তখন আমার প্রদত্ত এই বস্ত্রযুগল আচ্ছাদন করিবেন, তাহ হইলে আপনার পূৰ্ব্বের মত রূপ হইবে। কর্কেটিক ইহ। বলিয়া বস্ত্রদ্বয় প্রদান করিয়া স্বস্থানে গমন করিলেন। রাজা নল দশ দিনে অযোধ্যানগরে উপস্থিত হইয়া রাজা ঋতুপর্ণের সারথাকার্যে নিযুক্ত হইলেন। ক্রমে ক্রমে রাজার সহিত তাহার সৌহৃদ্য জন্মিল। কিন্তু নল দময়ন্তীবিরহিত হইয়। সৰ্ব্বদাই অতি বিমর্ষ ভাবে অবস্থান করিতে লাগিলেন, তিনি প্রতিদিন সায়ংকালে এই শ্লোকটী পড়িয়া শয়ন করিতেন। “কছু সা স্কুৎপিপাসার্তা শ্রান্ত শেতে তপস্বিনী। স্মরী তস্ত মন্দস্ত কং বা সাদ্যোপতিষ্ঠতে৷” (ভারত বনপ•৭৬অ-) ‘সেই তপস্বিনী শ্রান্ত ও ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হইয়া সেই মূঢ়কে স্মরণপূর্বক কোথায় শয়ন করিয়া আছে, এবং কাহারই বা উপাসনা করিতেছে।” দময়ন্তী পিতৃভবনে যাইয়া নলকে অন্বেষণ করিবার জন্ত মাতৃসমীপে নিবেদন করিলে, ভীমমহিষী নৃপতিকে বলির চারিদিকে কার্যাকুশল ব্রাহ্মণদিগকে পাঠাইলেন। দময়ন্ত্রী-কথিত কএকটী গাথা তাহারা পাঠ করিতে করিতে নানাস্থান পর্যটন করিলেন, কিন্তু কেহই নলের অনুসন্ধান পাইল না। পর্ণাদ নামে এক ব্রাহ্মণ নলাম্বেষণে অযোধ্যানগরে গমন করেন, তথায় ঋতুপর্ণের বাহুক নামে এক সারথি ইহার গাথা শুনিয়া দীর্ঘশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া কহিলেন, পতিপরায়পা কুলস্ত্রীরা বিষমাবস্থা প্রাপ্ত হইলেও আপনি আপনাকে রক্ষা করে, এই কারণে তাহার স্বৰ্গ লাভ হইয়া থাকে। পতি যদি কোন বিপদাপন্ন হইয়া তাহাকে ত্যাগ করে, তাহা হইলে তাহার প্রতি ক্ৰোধ করা উচিত নছে। ষে ব্যক্তি প্রাণরক্ষার জন্য চেষ্টা করিয়াও পক্ষিগণ কর্তৃক হৃতবন্ত্র হইয়া নানাবিধ মানসিক পীড়ায় দগ্ধ হয়, তাহার প্রতি ক্রোধ কৱ, কাম