পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- নল । [ ७०१ ] मल স্ত্রীর উচিত নহে। শুমাস্ত্রী পতিকর্তৃক সংকৃত বা অসংস্কৃতাই হউক, তাহাকে রাজ্যভ্রষ্ট ব্যসনাতুর দেখিয় তাহার প্রতি ক্রোধ করা উচিত নহে। পান এই প্রত্যুত্তর দময়ীর নিকট বলিলে, দময়ষ্ট্র স্থির করিলেন, ইনি নল ভিন্ন আর কেহ মহেন। তখন নলকে আনিবার জন্ত এক অদ্ভুত উপায় উস্তবন করিলেন। তখন তিনি সুদেবকে ডাকাইয়া কছিলেন, তুমি শীঘ্র অযোধানগরে যাইয়া ঋতুপর্ণ রাজাকে সংবাদ দাও যে, দময়ী পুনৰ্ব্বার স্বয়ম্বরের অভিলাষ করিয়াছেন, আগামী কল্য স্বয়ম্বর হইবে। রাজা ঋতুপর্ণ এই সংবাদ পাইয়া বিদর্ভদেশে গমনের উদ্যোগ করতে লাগিলেন, বাহুক ভিন্ন কেহই ছিল না, যে এক দিনে বিদর্ভনগরে গমন করিতে পারে। বাহুক এই সংবাদ শুনিলেন, তাহার হৃদর বিদীর্ণ হইয়া গেল। তখন রাজা ঋতুপর্ণ বাহুক ও বাঞ্চে কে লইয়৷ শীঘ্ৰগামী রথে অযোধ্যানগরে প্রস্থান করিলেন । প্লথ দ্রুতগতিতে চলিতে লাগিল, পথিমধ্যে রাজা ঋতুপর্ণ নলকে অক্ষবিজ্ঞান শিক্ষা দিলেন, তখন কলি নলের হৃদয় হইতে নির্গত হইয়া বিষ বমন করিতে লাগিল । নল তাহকে শাপ দিতে যাইলে কলি নলের শরণাগত হইলেন এবং কহিলেন, রাজন্‌! যে তোমার নাম শরণ করবে, তাহার আর কলির ভয় থাকিবে না। তখন নল কলিমুক্ত হইলেন। রাজা ঋতুপর্ণ সায়ং সময়ে বিদর্ভদেশে উপস্থিত হইলেন। নল এই নগরে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, নগরে উৎসবের কোন চিহ্ন নাই । দময়ন্তী তখন কেশিনী নামে একজন সর্থীকে বাছকের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। কেশিনী তাহাকে নানারূপ প্রশ্ন করিতে লাগিলেন, তাহাতে র্তাহার সন্দেহ ক্রমেই বাড়িতে লাগিল, তখন কেশিনী যাইয়া সকল বৃত্তান্ত দময়ন্তীসমীপে বলিল। দ্য ইহা শুনিয়া কেশিনীকে মাতৃসমীপে প্রেরণ করিয়া বলিয়া পাঠাইলেন, মাতঃ ! আমি বাহুককে নল মনে করিয়া বহুতর রূপে পরীক্ষা করিলাম, কিন্তু কেবল তাহার রূপের প্রতি আমার এক সংশয় আছে, অতএব আমার ইচ্ছ, আমি স্বয়ং তাহাকে পরীক্ষা করি। পিতার জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাত সারেই হউক, হয় তাহাকে অন্তঃপুরে আসিতে, না হয় আমাকে তাহার নিকট যাইতে অনুমতি দিন। রাস্ত্রী বিদর্ডরাজের নিকট দময়ন্তীর কথা জানাইলেন ; রাজা ভীম চুহিতার অভিপ্রায়ে অনুজ্ঞা করিলেন। দময়ন্তী মাতার আদেশ লইয়া নলকে আপন আলয়ে আনাইলেন। নল দময়ন্তীকে সহসা দেখিয়া শোক ও দুঃখে আকুল হইলে তাহার নয়নযুগল অশ্রতে প্লাবিত হইল। দ্যয়ন্তীও ততোধিক শোকে মুহমান হইয়া কহিলেন, ‘বাহুক ! তুমি কি পূর্বে এমন কোন ধৰ্ম্মজ্ঞ পুরুষকে দেখিয়াছ, যে কানন -r- *rমধ্যে নিত্রিতা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া গমন করিয়াছে, পুণ্যশ্লোক নল ব্যতীত কোন ব্যক্তি শ্রমমোহিত প্রিয়তম ভাৰ্য্যাকে মিরপরাধে বিজন ঘনে পরিত্যাগ করিয়া গমন করিতে পারে ? আমি বাল্যকালাবধি সেই মহীপালের নিকট কি অপরাধ করিয়াছিলাম যে, তিনি জামাকে কাননে নিয়াপ্ত দেখিয়া পরিত্যাগপূর্বক গমন করিয়াছেন ? আমি পূর্বে সাক্ষাৎ দেবগণকে পরিত্যাগ করিয়া যাহাকে বরণ করিয়াছি— দময়ন্তী এই সকল বলিতে বলিতে তাহার অশ্রদ্বারা বাক্যরোধ হইল। নল তখন নিতান্ত কাতর হইয়া কছিলেন, ভীরু ! আমার যে রাজ্য নষ্ট হয়, এবং আমি যে তোমাকে পরিত্যাগ করি, এ সকল আমি করি নাই, কলি করিয়াছে। পাপ কলি এখন আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, তাহাতেই আমি তোমার নিকট অলিয়াছি, কিন্তু তুমি যেরূপ অমুস্ত্রত ও অতুরক্ত-পতিকে পরিত্যাগপূর্বক অন্তকে বরণ করিতে উষ্ঠত হইয়াছ, অন্ত নারী কখন কি এতাদৃশ করিতে পারে ? দময়স্তী নলের এইরূপ পরিদেবিত বাক্য শুনিয়া কঁাপিতে কঁাপিতে কৃতাঞ্জলিপুটে কহিলেন, নিষখুনাথ ! যে স্থলে আমি দেবগণকে উপেক্ষা করিয়া আপনাকে বরণ করিয়াছি, সে স্থলে আমাকে দোষ দেওয়া উচিত নহে। আপনাকে পাইবার জন্য ব্রাহ্মণের মছুক্ত গাথা সকল গান করিয়া সকল দিকে ভ্রমণ করিয়াছিলেন। অনস্তর পর্ণাদ কোশলানগরীতে আপনাকে পাইয়াছিলেন, আপনি মুদ্ভুক্ত গাথার প্রত্যুত্তর দিয়াছিলেন, আমি আপনাকে আনিবার জন্য এই অদ্ভুত উপায় উদ্ভাবন করিয়াছি। যেহেতু এই পৃথিবীতে আপনি বার্তীত কেহ অশ্ব চালাইয়া একদিনে শতযোজন গমন করিতে সমর্থ হন না। আমি মনেও কখন অসৎকৰ্ম্ম করি নাই। বায়ু, সুৰ্য্য ও অগ্নি ইহার সকলেই সাক্ষী। এই তিন দেবতা ত্ৰৈলোক্য সকল ধারণ করিয়া আছেন, হয় ইহারা যথার্থ বলুন, না হয়, আমাকে পরিত্যাগ করুন। বায়ু তখন অন্তরীক্ষ হইতে কছিলেন, নল ! আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, দময়ন্তী মনেও কখন অসৎকৰ্ম্ম করে নাই, এই তিন বৎসর আমরা ইহাকে রক্ষা করিয়াছি, তোমাকে লাভ করিবার নিমিত্তই ইনি এই উপায় অবলম্বন করিয়াছেন। এই সময় স্বৰ্গ হইতে পুষ্পবৃষ্টি হইতে লাগিল। দেবদুন্দুভি সকল নিনাদিত হইল। নল তখন কর্কোটককে স্মরণ করিয়া বস্ত্র দ্বারা শরীর আচ্ছাদন করিবামাত্রই স্বকীয় রূপ প্রাপ্ত হইলেন। দময়ন্তী তখন নলের পদতলে পতিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন । এই সংবাদ চারিদিকে প্রচারিত হইল। নিষধাধিপতি নল তিন বৎসরকাল এইরূপে কষ্ট ড়োগ করিয়া ভাৰ্য্যার সহিত মিলিত হইলেন।