পাতা:বিশ্বকোষ নবম খণ্ড.djvu/৬২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবকৃষ্ণ - করিতেন এবং ভালবাসিতেন। এ সময়ে নবকৃষ্ণ যদিও ইংরাজের . প্রসাদে প্রভূত ক্ষমতাশালী এবং বিপুল অর্থশালী হইয়া উঠিয়াছিলেন, কিন্তু হিন্দুসমাজে ততটা প্রতিপত্তি লাভ করিতে পারেন নাই। তখনও মুসলমান-সমাজে মহম্মদ রেজার্থী মুখপাত্র এবং হিন্দুসমাজে মহারাজ নন্দকুমার শীর্ষস্বরূপ বর্তমান। তখনও হিদুর জাতিমালা-বাছুর নলকুমারের হস্তে। তখনও আপামর সাধারণে সামাজিক বিষয়ে নন্দকুমারের শরণাপন্ন হইয়া থাকে, কাজেই দেশের আভ্যন্তরীণ প্রভূত। তখনও নন্দকুমারের একচেটিয়া রহিয়াছে। ইহার উপর তখনও নবকৃষ্ণের ভূসম্পত্তি কিছুই নাই, নওয়াপাড়া নামে সামান্ত একটু মহাল তাহার ছিল মাত্র ; সুতরাং নগদ অর্থে অতুল ধনী হইয়াও নবকৃষ্ণ দেশীয় লোকের নিকট একটা বিশেষ সন্মান দাবী করিতে পারিতেন না। রাজকীয় ক্ষমতা তাহার যথেষ্ট ছিল, প্রভুত্ব-লোলুপ ইংরাজ কোম্পানীকে তিনি ইচ্ছা মত করাগ্রে ঘুরাইতে ফিরাইতে পারিতেন, নবাব সরকারেও ইচ্ছা করিলে অনেক স্ব ও কু ব্যাপার বাধাইতে পারিতেন, কিন্তু তাহার স্বদেশীয়ের সমাজে স্বশ্রেণীতে তখন তাহার কিছু প্রতিপত্তি ছিল না। মাতৃশ্ৰাদ্ধের আয়োজনে তাহার নিজের এই ক্ষমতার অভাব বিশেষরূপে হৃদয়ঙ্গম হইল। যদিও তিনি রাজ্যের সমস্ত রাজ, মহারাজ ও জমীদারবর্গকে স্বালয়ে উপস্থিত করিতে পারিয়াছিলেন, তবুও তিনি আপনাকে সামাজিক সম্মানে অনেকটা বঞ্চিত, তাহ প্রাণে প্রাণে বুঝিতে পারিয়াছিলেন। সে সময়ে কৌলীন্য-মৰ্যাদার পূর্ণ আদরের সময়। সেই সময় তাহার ন্যায় একজন নুতন অভুখিত মৌলিক কায়স্থের মাতৃশ্ৰাদ্ধের স্তায় সামাজিক ব্যাপারে ওরূপ বিপুল আয়োজন করিতে হইলে যে কিরূপ বিনয় ও হীনতা স্বীকার করিতে হইয়াছিল, তাহ তৎকালের সামাজিক ব্যাপারের ব্যবস্থা র্যাহারা জানেন, র্তাহারাই অকুমান করিতে পারিবেন। যাহা হউক মাতৃশ্ৰাদ্ধের পর হইতে নবকৃষ্ণ সামাজিক প্রভূত লাভে সচেষ্ট হইলেন । এই চেষ্টার মুখপাতে মহারাজ নন্দকুমারের প্রতি তাহার দৃষ্টি পড়িল । তিনি দেখিলেন আব্রাহ্মণ-চণ্ডাল সকল সমাজই নন্দকুমারের হস্তে। তাহার উপর নন্দকুমারের রাজনৈতিক ক্ষমতাও তাহা অপেক্ষা যে বড় অল্প ছিল তাহাও নহে। নবকৃষ্ণ দেখিলেন এই নন্দকুমারকে কোনরূপে খৰ্ব্ব করিতে না পারিলে তাহার উদ্দেশু সিদ্ধ হইবে না ; সুতরাং তিনি সেই চেষ্টায় পরোক্ষভাবে নিযুক্ত হইলেন। উদীয়মান ইংরাজ-প্রভুত্ব ‘ঙাহার মুষ্টির মধ্যে, সুতরাং তাহার আর চিন্তা কি ? এই সময়ে নৃঙ্গকুমারের ভাগ্যচক্রও ফিরিতেছিল। ইংরাজের [ ৬২২ ] নবকৃষ্ণ - سه তাহার প্রতি কখন তুষ্ট কখন রুষ্ট হইতেছিলেন। ভেরেলেইও ক্লাইবের স্থায় প্রথমতঃ নন্দকুমারকে প্রতির চক্ষে দেখিতেন, শেষে তাহার শত্রুপক্ষের উত্তেজনায় বিরক্ত হইয় পড়েন। সুকৌশলী নবকৃষ্ণ এই শুভ অবসর ত্যাগ করিতে পারিলেন না । ভেরেলেষ্ট যাহাতে পুনরায় নন্দকুমারকে অনুগ্রহ করিতে না পারেন, তাহার প্রতি দৃষ্টি রাখিলেন । ইহা হইতেই নন্দকুমার-নবকৃষ্ণ বিবাদ স্বচিত হয়। 毒 এই সময় আরও এক ঘটনা ঘটে, তাহাতে ঐ বিবাদ দৃঢ়ীভূত হয় ও নন্দকুমারের সমধিক হানি ঘটে। নবকৃষ্ণ এ সময় বিপুল ক্ষমতাশালী হইয়াছিলেন। ক্ষমতা হইলেই লোকের কিছু না কিছু অত্যাচারবৃত্তি স্ফরিত হয় ; মহারাজ নন্দকুমারের চরিত্রেও সে কলঙ্ক স্পর্শিয়া ছিল । নবকৃষ্ণেরও সেই দোষ ঘটিল। অনেকে তাহার অত্যাচারে উৎপীড়িত ইংরাজের আদালতে র্তাহার নামে নানাপ্রকার অভিযোগ করিতে লাগিল। অবশু ঐ সকল অভিযোগ সম্বন্ধে সপক্ষে বিপক্ষে অনেক প্রবাদ ও প্রমাণ আছে। কেবল প্রবাদ হইলে তাহার উল্লেখ না করিলেও চলিত ; কিন্তু যখন দেখা যাইতেছে যে, তখন ইংরাজ আদালতের কাগজপত্রে তাহার বিরুদ্ধে ঐ সকল অভিযোগের উল্লেখ আছে, তখন কেবল প্রবাদ বলিয়৷ উড়াইয়া দিতে পারা যায় না। ঐ সকল অপরাধের জন্য তিনি ইংরাজ আদালতে রীতিমত অভিযুক্ত হইয়াছিলেন। তখনকার মেয়র-কোর্টের জনৈক জজ তাহা কতক কতক ছাপাইয়া গিয়াছেন। এই মুদ্রিত কাগজপত্র হইতে নবকৃষ্ণের টুইটা গুরুতর অপরাধের বিবরণ উদ্ধৃত হইল। এরূপ উদ্ধারের উদ্দেশু কেবল নবকৃষ্ণের দোষাদোষ অমুসন্ধান নহে, ইতিহাসের পবিত্রতা-রক্ষা ও সত্যাবধারণ মাত্র। তখন কলিকাতায় একপ্রকার সেশন আদালত ছিল । ইহা বৎসরে চারিবার বসিত, এইজন্য ইহাকে কোর্ট অফ cost totă Goa (Court of Quarter Sessions) fore, এই আদালতে কলিকাতার গবর্ণর প্রধান বিচারপভি ও আর তিনজন কাউন্সিলের সদস্ত বিচারক নিযুক্ত হইতেন। এখানে বিচারে সহায়তার জন্য সেরিফকর্তৃক জুরী নিযুক্ত হইত। ১৭৬৭ খৃষ্টাব্দের ৪ঠা মার্চ তারিখে (বাং ১১৬৩ সালের চৈত্র মাসে ) গোকুল সোণার নামে এক ব্যক্তি নবকৃষ্ণের নামে উক্ত আদালতের গ্রাও জুরির নিকট অভিযোগ করে। উক্ত অভিযোগপত্র প্রথামত কোন জষ্টিস অফ দি পিসের সমক্ষে শপথ করিয়া দাখিল করা হয় নাই বলিয়া গবর্ণর উহাকে জমীদারী আদালতে বিচারার্থ অৰ্পণ করেন। তখন ফৌজদারী বিচারের জন্তু জমীদারী কাছারী নামে