পাতা:বিশ্বকোষ পঞ্চম খণ্ড.djvu/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• . গঙ্গাপুর [ ১৫৯ ] গঙ্গাপুর --- o রাজু একটা সমতল অধিত্যক, সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ৪৬৬ হস্ত উচ্চ। মধ্যে পাহাড় ও উচ্চ গিরিশৃঙ্গ দেখিতে পাওয়া যায়। ছোটনাগপুরের উচ্চ ভূমি হইতে গাঙ্গপুরের ভূমি ক্রমশঃ চালু হইয়া আসিয়াছে। দক্ষিণে মহারায়পৰ্ব্বতশ্রেণী । এই পৰ্ব্বতের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাকে ভূইন প্রভৃতি জাতিগণ বিশেধ ভক্তি করে । পৰ্ব্বতের নিম্নভাগে একটা সর বা কুঞ্জবন আছে। উহাতে লোকে পূজা দিয়া আসে। গাঙ্গপুরের পাহাড়ের মধ্যে মউ নামক পাহাড় ১২৯০ হাত, নদিরাষীর ৯৭০ হাত, বিলপাহাড়ী ৮৮৮ হাত ও সাতপাহাড়ী ৯৯৪ হতে উচ্চ । গাঙ্গপুরে কএকটী নদীও আছে। ইব নামক নদী যশপুর হইতে বাহির হইরা সম্বলপুরে গিয়া মহানদীতে মিশিয়াছে । লোহারডাঙ্গ৷ হইতে শঙ্খনদী ও সিংহভূম হইতে দক্ষিণে কোয়েল নদী আসিয়া গাঙ্গপুরে পূৰ্ব্বভাগে মিশিয়া ব্রাহ্মণী নামধারণ করিয়া কটকজেলার মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইয়াছে । যে স্থানে কোয়েল ও শাখা মিশিয়াছে, তাহ অতি রমণীয় স্থান। প্রবাদ আছে, এই স্থানে মহর্ষি পরাশরের সহিত মৎস্তগন্ধার মিলন হয়। বর্ষাকালে এই সকল নদী দিয়া নৌকাদি গমনাগমন করে । ইব নদীর বালুক মধ্যে সময় সময় হীরকখণ্ড ও স্বর্ণকণা পাওয়া যায়। ঝোড়াগও জাতি বালুকধৌত করিয়া স্বর্ণ বাহির করিয়া থাকে । গাঙ্গপুরের দক্ষিণ হিঙ্গির প্রদেশে পাথুরে কয়লার স্তর দেখা গিয়াছে, কিন্তু এ পর্য্যন্ত তাহ খনন করা হয় নাই। রাচি হইতে সম্বলপুরে যাইবার পথে স্থানে স্থানে চুণাপাথর দেখিতে পাওয়া যায়। হিঙ্গির বিতাগে শালবন আছে । এই বন হইতে শালকাঠ কাটিয়া মহানদী দিয়া অনায়াসে আনা যাইতে পারে। জঙ্গলের মধ্যে লাক্ষা, তসর, রেশম, রজন, খয়ের প্রভৃতি পাওয়া গিয়া থাকে । এতদ্ব্যতীত নানাপ্রকার গাছগাছড়া ও ঔষধ পাওয়া যায়। বঙ্গভূমি ব্যতীত অনেকস্থান পতিত রহিয়াছে, তাহাতে কেহ শস্ত উৎপাদন করে না । বন মধ্যে ব্যাস্ত্র, চিতাবাঘ, নেকড়েবাঘ, বন্যকুকুর, বাইসন ও মহিষ প্রভৃতি অনেক দেখা যায়। বর্ষাকালে নদীতে সপের কিছু আধিক্য হয়। স্থাটিয়া নদী পার হইবার সময় নাকি এই সকল সৰ্প লোকের পা জড়াইয়া ধরে, পরে তাহাকে ডুবাইয়া দিয়া মস্তকের স্থত তক্ষণ করে । গাজপুরের ভূমি উৰ্ব্বর। ইব নদীর উপত্যক। বিশেষ শস্তশালী। এখানে চাউল, ইক্ষু, সরিষা, তিসি ও তামাক জন্মিয় থাকে। তামাক অল্প জন্মে, কিন্তু যাহা হয়, তাছ অতি উৎকৃষ্ট ইক্ষু প্রচুর, গুড়ও উৎকৃষ্ট । অনেক গাওতিয়াদিগকে তাহার জন্য বিঘা দূরের লোকে এই গুড় আদর করিয়া লইয়া যায়। দেশে দ্রব্যাদি সুলভ। কৃষকদিগের অবস্থাও ভুলি। এখানকার রাজা ও জমিদারগণ প্রজাদিগকে প্রথম তিনবৎসর বিনা খাজানায় বাস করিতে দেন । তাহার পর বাৎসরিক ১llo টাকা করিয়া খাজান দিতে হয় । অনেক জমি চাকরাণ বিলি আছে। জমির দখলের জন্য সৈনিকবৃত্তি করিতে হইত, কিছু কিছু খাজানাও দিতে হইত। এখন খাজানাও দিতে হয়, চাকরিও করিতে হয় । রাজা যখন কোথাও গমন করেন, গ্রামের মণ্ডলগণ নায়করূপে ও সাধারণ প্রজা পাইকরূপে র্তাহার সহিত গমন করে । এই সময়ে কতক লোক বন্দুক ও কতক টাঙ্গি ও তীর ধন্থক লইয়া চলে। দ্রব্যাদি মহাৰ্ঘ হওয়াতে পূৰ্ব্বে যে হারে খাজানা রাওয়া হইত, এখন অন্যান্যবাবে প্রজাকে পূৰ্ব্বহারের প্রায় দ্বিগুণ দিতে হয় । কিন্তু লোকে তাহাকে থাজান বৃদ্ধি বলিয়া মনে করে না । থfজানার হিসাব স্বতন্ত্র থাকে । অন্যান্স বাবে যাহা দিতে হয়, তাহাকে ‘মাঙ্গন’ বলিয়া থাকে। পাইকগণ নায়ককে থাজান দেয় । আয় একপ্রকার প্রজা আছে, তাহাদিগকে গাওতিয়া কহে । ইহাদিগকে রাজসরকারে কোন কৰ্ম্ম করিতে হয় না । তিন হইতে পাচবৎসরের জন্য ইহাদিগের সহিত বন্দোবস্ত করিতে হয়। ইহারা গ্রামকে গ্ৰাম লইয়া প্রজা বিলি করে । কতক জমি 'বগরা’ বা লাখেরাজ করিয়া নিজের রাখে। রাইয়াতদিগের নিকট হইতে খাজানার টীকা আদায় হইয়া বরং লাভ হইয়া থাকে। মিয়াদ ফুরাইলে নূতন পাট্টা লইবার সময় গাওতিয়াকে সেলামী স্বরূপ কিছু টাকা দিতে হয়। গাওতিয়াগণের সহিত সাধারণ প্রজার অপর কোন সম্বন্ধ নাই। তবে গাওতিয়াগণের যে বগরা বা লাখেরাজ জমি থাকে, তাহার অর্ণবাদের জন্ত প্রজাকে সাহায্য করিতে হয়। যে জমিতে ফসল হয়, প্রতি তিন আন। খাজান দিতে হয় । এই বিঘার পরিমাণ জমির দৈর্ঘ্যপ্রস্ত মাপ করিয়া হয় না। বীজ বোন হইলে তাহ দেখিয়া একটা আন্দাজ করিয়া লওয়া হর । জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ উপলক্ষে রাজবাটীতে মাঙ্গন দিতে হর। গাওতিয়াগণ প্রায়ই ব্রাহ্মণ, গোয়াল, তেলি বা আগরিয়াজাতীয় লোক । গাঙ্গপুরের স্থানে স্থানে গ্রাম্যদেবতা আছেন। তাছাদের পূজার জন্য পুরোহিত আছেন। উহার কালো, বৈগা, জাকয় অথবা পাহন নামে অভিহিত। তাছার প্রায়ই অনার্ষ্য জাতীয় লোক । সম্মানে গাওতিয়া বা