অন্ত্যেষ্টি উঠিতে পারিত। গ্রিকৃর মৃতদেহকে স্নান করাইয়। সৰ্ব্বাঙ্গে সুগন্ধাদি মাথাইয়া দিতেন। তারার পর উত্তম বস্ত্ৰালঙ্কার, মাথায় ফুলের মালা, ফুলের মুকুট পরাইয়া তাহাকে নুতন শয্যায় শোয়াইয়। রাখিতেন। গ্রিকদের বৈতরণীর নাম ‘আচরণ নদ’ (২)। বৃদ্ধ চারণ দেবতা সেই নদের কর্ণধার। প্রেতাত্মারা সেইখানে গিয়া চারণ দেবতার হাতে এক একটী রূপার মুদ্রা দিলে তিনি তাহাদিগকে আচরণ নদ পার করিয়া দিতেন । কিন্তু পারের মূল্য দিতে না পারিলে দুর্ভাগ্য প্রেতাত্মারা জলের ধারে র্কাদিয়া কাদিয়া বেড়াইত। পাছে আচরণ নদের কাছে আসিয়া কোন বিঘ্ন ঘটে কিম্বা কার্কেরদ কুকুর প্রেতপুরির দ্বার ছাড়িয়া না দেয়, তজ্জন্ত গ্রিকদের স্ত্রীলোকের আসিয়া মৃতদেহের মুথে একটী রূপার মুদ্র এবং একথানি মধুর পিঠ রাথিয়া দিতেন । তাহার পর পুরমহিলার মৃতশব্যার চারিদিকে বসিয়া কঁদিতে থাকিতেন ; কঁদিতে কঁাদিতে আপনাদের বস্ত্র ও কেশ ছিড়িতেন । গ্রিকৃর মৃত্যুর দিনেই অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করিতেন না। তাহারা, তৃতীয় দিবসে মাটীর কফনের ভিতর শব রাখিয়া নগরের বহিরে তাহ পুতিয়া আসিতেন। গোরস্তানে গেলে সকলকেই স্নান করিতে হইত। স্নান না করিলে কেহ দেবালয়ে প্রবেশ করিতে পারিতেন ন। তৃতীয়, নবম এবং ত্রিংশং দিবসে পিণ্ডদান করা হইত। রোমকের মৃতদেহ পোড়াইতেন । আমরা সৎকারের পর স্নান করি এবং অগ্নিস্পর্শ করিয়া থাকি । রোমকের মৃতদেহ দাহ করিয়া জলস্পর্শ করিলে কিম্ব। অগ্নি মাড়াইলেই শুদ্ধ হইতেন । নবম দিবসে ইহঁাদের (২) থেম্প্রসিয়ার মধ্যে একটা আচরণ নদ আছে । ইহা আচাক্লসিয়া হ্রদের ভিতর দিয়া প্রবাহিত হইয়া আয়োনিয়ান সাগরে পড়িয়াছে। এলিস, প্রদেশেও আর একটা আচরণ নদ আছে। ইহার বর্তমান নাম সাকুটো। পেযেণীয়া বলেন যে, মহাকবি তোমর থেম্পু দিয়ার আচরণ নদেরই উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। আমাদের বৈতরণী নদীর জল দুর্গন্ধ এবং উষ্ণ, সৰ্ব্বদাই টগ বগ করিয়া ফুটিতেছে ; এবং তাহা শোণিত ও অস্থিকেশে পরিপূর্ণ। গ্রিকদের আচরণ নদের জল কৃষ্ণবর্ণ, fতক্ত এবং সর্বদাই তাহাতে বাস্প উঠিতেছে । * চারণ দেবতা নিরানন্দ, মুথে হাসি নাই ; সৰ্ব্বদাই তিনি শোকগম্ভীর ভাবে নিস্তন্ধ আছেন। মুখে ছিন্ন ভিন্ন দাড়ী বুলিতেছে, মাথার কেশ শুক্ল ; পরিধানের বস্ত্র মলিন ও জীর্ণ। ইটন্ধানের স্তন্তে চারণদেবতার হাতে হাতুড়ী আছে। { કર ] [ ৩২৫ ] অন্ত্যেষ্টি অশৌচান্ত হইত। সে কালে গ্রিক এবং রোমকের মৃতদেহকে যে রূপে সাজাইয়। পথে বাহির করিতেন, এখনও ভারতবর্ষের শিংগানী প্রভৃতি কোন কোন জাতি মৃতদেহকে উত্তম বেশ ভূষা পরাইয়া বাজনা বাজাইতে বাজাইতে পথ দিয়া চলিয়া যান। পূৰ্ব্বকালের মিশরবাসীদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয় কিছু অদ্ভুত রকম ছিল। তাহার মৃতদেহ পোড়াইয়া কিম্বা পুতিয়া নষ্ট করিতেন না । মান প্রকার মসলায় শরীর পাক করিয়া সৰ্ব্বঙ্গে কাপড় জড়াইয়া রাখিতেন। তাহাতে কোনখানের একটু মাংস ও গলিয়া যাইত না, একখানি হাড়ও খসিয়া পড়িত না । মিশরবাসীদের এই রূপ বিশ্বাস ছিল যে,--শরীর, আত্মা, জ্ঞান এবং আকার (ক) লইয়া মানুষের জীবন। এইগুলি পৃথকৃ পৃথক হইয়া পড়িলে মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পরে জ্ঞান ইতস্ততঃ ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়ায়, আত্মা অধোলোকে গিয়া নানা প্রকার কষ্ট সহ করে, তন্দ্বারা তাহার ধৰ্ম্মনিষ্ঠতার পরীক্ষা হয়। অবশেষে, কোথাও তিন হাজার, কোন থানে বা দশ হাজার বৎসরের পরে পুনৰ্ব্বার সেই জ্ঞান ও আত্মা পূৰ্ব্বশরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু শরীর নষ্ট হইয় গেলে আর তাহার প্রবেশ করিতে পারে না। সে কারণ মিশরবাসীরা যত্নপূর্বক মৃতদেহ রক্ষা করিয়া রাথিতেন । মৃতদেহ প্রস্তুত করিয়া দিবার নিমিত্ত সে কালে মিশরে প্রায় ৭০০। ৮০০ কারিকর ছিল। কেহ নাড়ীভূড়ী বাহির করিয়া দিত, কেহ ক্ষার জলে শরীর ভিজাইত, কেহ ঔষধ পূরিত, কেহ বা য় করিত। মিশরে পুরুষ মরিলে মৃতদেহকে তৎক্ষণাং কারিকরদের কাছে দেওয়া হইত। স্ত্রীলোক মরিলে মড়াটা কিছু দিন ঘরে পড়িয়া থাকিত । মৃত শরীর কি রূপে রক্ষা করিতে হয়, হিরোডোটস্ এবং ডায়োডোরস তাহার বিশেষ অনুসন্ধান করিয়াছিলেন । র্তাহাদের মতে, ধনবান ব্যক্তির দেহ যে প্রণালীতে প্রস্তুত করা হইত তাহার বায় অনেক। এক একটা শরীর মসলা দিয়া - পাক করিতে ও সাজাইতে অনুন ৭১৫০ সাত হাজার দুই শত পঞ্চাশ টাকা খরচ পড়িত। ইজিপ্তে মুৰ্দ্দারফরাসের মত এক প্রকার লীচ জাতীয় কারিকর ছিল । তাহারা মৃতদেহের বাম দিকের পাজরার নিম্নে চিরিয়া পেটের নাড়ীভূড়া বাহির করিয়া দিত। আর এক সম্প্রদায়ের মুৰ্দ্দারফরাস বুক চিরিয়া ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড
পাতা:বিশ্বকোষ প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪৯
অবয়ব