পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

", রঘুনাথ দাস গোস্বামী রঘুনাথ দাস গোস্বামী, জনৈক প্রসিদ্ধ ভক্ত বৈষ্ণব । হুগলী জেলার অন্তর্গত সপ্তগ্রামের নিকট হরিপুর নামে একটা স্থান আছে ; প্রায় চারিশক্ত বর্ষ পূৰ্ব্বে এই হরিপুর একট সমৃদ্ধিশালী গওগ্রাম মধ্যে পরিগণিত ছিল ; তৎকালে এই গ্রামে হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধন নামে দুই সহোদর বাস করিতেন ; বিংশতি লক্ষের অধিকারী হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধন তৎকালে প্রসিদ্ধ সপ্ত গ্রামে মহাসম্রাস্ত ব্যক্তি বলিয়া পরিচিত্ত ছিলেন। র্তাহারা জাতিতে কায়স্থ। তাছাদের উপাধি মজুমদার ছিল। এই ভ্রাতৃদ্বয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ গোবৰ্দ্ধনের একটী পুত্র হয়, ঐ পুত্রেরই নাম রঘুনাথ দাস। রঘুনাথের প্রকৃতি অতি ধিচিত্র ছিল, অতি বাল্যকাল হইতেই তিনি সংসারবিরাগীর ন্যায় ছিলেন। যখন হরিদাস ঠাকুর কয়েকদিনের জন্য হরিপুরের নিকটবর্তী চাদপুরে যান, তখন রঘুনাথ তাহার পরিচর্য্যাদি করিয়া তাহার কুপাভাজন হন। ঐ সময় রঘুনাথ তাহাদের পুরোহিত বলরাম আচায্যের গৃহে থাকিয়৷ অধ্যয়ন করিতেন । এই সময়ে মহাপ্রভু চৈতন্তের নাম তাহার কর্ণগোচর হয়। রঘু গৌরাঙ্গের নাম গুনিয়াই তদায় চরণে আত্মসমর্পণ করিলেন । তথন তাহার ধৈর্য্য অস্তুহিত হইল ; তিনি শাস্ত্রালোচনা, সাংসারিক মুখ, এমন কি আছারনিদ্র ত্যাগ করিয়া একাস্তে কেবল গৌরাঙ্গ সঙ্গ লাভের উপায় ভাধিতে লাগিলেন । এ অবস্থায় তিনি একাকী পলাইয়। গৌরাঙ্গ-সমীপে যাইতে চেষ্টা করেন, রঘুনাথের পিতা, পুরের ঈদৃশ আচরণে ভীত হইয়া, যাহাতে তিনি পলাইতে না পারেন, এই অভিপ্রায়ে তাহার রক্ষার্থ পাচজন প্রহরী ও বুঝাইবার জন্য দুইজন ব্রাহ্মণ নিযুক্ত রাখেন এবং তাহাকে সংসারে আবদ্ধ করার জষ্ঠ সেই অল্পবয়সেই (সপ্তদশ বর্ষে ) একটি উন্মুখ-যৌবন মুন্দরা বালিকার সহিত বিবাহ দিলেন । কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না । যে প্রেমের প্রবল আকর্ষণে ব্ৰজগোপীগণ পতিপুত্র পরিত্যাগ করিয়। পাগলিনী প্রায় পুলিন প্রাস্তে ছুটিয়া যাইত; রঘুনাথ সেই প্রেমের আকর্ষণ ছিন্ন করিতে পারিলেন না । একদা রাত্রিকালে তাহার গুরু যদুনন্দনাচাৰ্য্য তাহাকে একট কার্য্যে প্রেরণ করিলে, তিনি গুরু মাঞ্জা পালন করিয়া উদ্ধশ্বাসে নীলাচলের দিকে ছুটলেন । খাছারনিদ্রাত্যাগ করিয়া দ্বাদশ দিনে লীলাচলে গিয়া প্রভূর সহিত সন্মিলিত হইলেন। রঘুনাথের প্রতি প্ৰভু অতি সদয় ব্যবহার করিলেন ; তিনি রঘুনাথকে আপনার “দ্বিতীয় স্বরূপ স্বরূপ দামোদরের হস্তে সমৰ্পণ করিলেন । রঘুনাথের বৈরাগ্য অতুলনীয়, চৈতন্য5ब्रि छ।भूप्ङ भाtश् [ 58° রঘুনাথ দাস গোস্বামী “ক্লখুনখের অনন্ত গুণ কে ফরিবে লেখা । রঘুনাথের নিয়ম যেন পাথরের লেখা। সাড়ে সাত প্রহর মায়, যাহার—স্মরণে । তাহার নিদ্র। চারিদও, সেহ নহে কোন দিনে ॥ বৈরাগ্যের কথা তার অদ্ভুত কথন । আজন্ম না দিল জিহ্বায় রসের স্পর্শন ৷ ছিড়। কানি কান্থা ৰিন ন পরে বসন । সাবধানে কৈল প্রভুর আজ্ঞায় পালন ।” রঘুনাথ ষোল বংলর কাল নীলাচলে প্রভুর সেবা করেন, প্রভুর অন্তৰ্দ্ধানের পর বুন্দাবনে গমন করেন, ইচ্ছা—সনাতন ও শ্ৰীক্ষপকে দর্শনান্তর গোবৰ্দ্ধন হষ্টতে পতিত হয়ে দেহত্যাগপূৰ্ব্বক শ্ৰীমহাপ্রভুর বিরক্ত ব্যথা হইতে অব্যাহতি লাভ করেন ; কিন্তু রূপ ও সনাতন তাহাকে এ অন্যায় সঙ্কল্প ত্যাগ করিতে অনুরোধ করিলেন ; তাছার তাহাকে তৃতীয় ভ্রাতার মত রাথিতেন ও তাহার মুথে প্রভুর সমস্ত কথা শ্রবণ করিতেন । বৃন্দাবনে তিনি যে ভাবে জীবন যাপন করেন, চরিতামৃতে তাহার এইরূপ আভাস দেওয়া হইয়াছে, যথা—

    • তায় জল ত্যাগ কৈল অত্যু কি কথন । পল দুই তিন মঠ করেন ভক্ষণ ॥

সহস্ৰ দণ্ডবৎ করে লয় লক্ষ নাম । দুষ্ট সহস্ৰ বৈষ্ণুবেরে নিত্য পুরণাম ॥ রাত্রি দিনে রাধাকৃষ্ণের মানস-সেবন । প্রহরেক মহাপ্রভুর চরিত্র চিন্তন ॥ তিন সন্ধ্য রাধাকুণ্ডে আপতিত স্নান । ব্ৰজবাসী বৈষ্ণুবেরে করে আলিঙ্গন দান। সাৰ্দ্ধ সপ্তপ্রহর করে ভক্তির সাধন । চারিদও নিদ্রা, দেহ নহে কোন দিন।” রঘুনাথকে প্রভু কৃপা করিয়া একছড়া গুঞ্জামালা ও একটা গোবৰ্দ্ধনশিলা প্রদান করেন ; রঘুনাথ ইষ্ঠারই সেবা করিতেন। । ভক্তিরত্নাকরে লিখিত আছে,— “প্ৰভুদত্ত গোবৰ্দ্ধনশিলা গুঞ্জাহীয়ে। সেবে কি অদ্ভুত সুথে আপন পাসরে । দিবানিশি না জানয়ে নামগ্রহণে । নেত্রে নিদ্র। নাই অশ্রুধায়| দু-নয়নে ॥ দাস গোস্বামীর চেষ্ট কে বুঝিতে পারে। সদ মগ্ন রাধাকৃষ্ণচৈতন্ত বিহারে - রঘুনাথ প্রথম প্রথম গোবৰ্দ্ধন সমীপে বাস করেন, পরিশেষে রাধাকুণ্ডতীরে অবস্থিতি করিতেন । এই রাধাকুও ও গ্রামকুও-উদ্ধারই রঘুনাথের এক কীৰ্ত্তি । তিনি উক্ত বিলুপ্ত তীর্থদ্বয়ের উদ্ধার না করিলে বৈষ্ণৱৰর্গের বিমাজের সীমা থাকিত না।