পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজপুত বিক্রম-সংবতের প্রারম্ভ হইতে খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দ পর্য্যন্ত রাজপুতগণ অপ্রতিহত প্রভাবে উত্তয় পশ্চিমভারতে শাসনদণ্ড পরিচালিত করেন। আজমীর ও দিল্লীর অধীশ্বর পৃথ্বীরাজ সাহাবুদ্দীন ঘোরী কর্তৃক ১১৯৩ খৃষ্টাব্দে পরাজিত হইবার পর হষ্টতেই প্রকৃতপক্ষে রাজপুতের প্রাধান্ত অপস্থত এবং মুসলমানের অভু্যদয় ঘটে । গ্রীক ঐতিহাসিকের বর্ণনানুসারে জানা যায়, মাকিদনবীর আলেকসান্দারের ভারতাভিযানকালে পঞ্জাবের পাৰ্ব্বত্যপ্রদেশের কতেlচজাতীয় রাজপুতের বাস ছিল। ফিরিস্তা বলেন—ইহার কোটকাঙ্গ ড্রায় রাজত্ব করিতেন । ৭১১ খৃষ্টাবে খলিফা বালিদের রাজ্যকালে আয়ত্বগণ সিন্ধু প্রদেশ আক্রমণপূৰ্ব্বক তদেশবাসী সুহ্ম ও মুম্রাবংশীয় রাজপুত রাঙ্গাদিগকে পরাভূত করে । পরবর্তিকালে এই রাজপুতবংশের অনেকে ইসলামধৰ্ম্মে দীক্ষিত হয়। এখনও বলুটীস্থানের মধ্যবর্তী ঝালাবান প্রদেশে রাজপুতজাতির বাস আছে। মহম্মদ ঘোরী কর্তৃক বিজিত হইবার পূৰ্ব্বে রাঠোরগণ কনোজে, শোলাঙ্কিরা অনস্থলবাড়ে, চৌহানেরা আজমীরে, কচ্ছ বাহগণ জয়পুরে, শিশোদিয়গণ উদয়পুরে, গহলোতবংশ মেবারে পূর্ণ প্রতাপে রাজদণ্ড চালাইতেছিলেন। কাঙড়ারাঞ্জের এবং জম্বুরজের অধীনে অপর দুই দল রাজপুত ইরাবতী ও শতদ্রুর মধ্যবর্তী পাৰ্ব্বত্য প্রদেশে বসবাস করিতেছিলেন। শেষোক্ত রাজপুতগণ জম্মুবাল নামে খ্যাত। রাজপুতনায় রাণী সঙ্গ, প্রতাপসিংহ প্রভৃতি শিশোদীয় বীরগণ মোগলসূম্ৰাটু বাবর, আকবর শাহ প্রভৃতির বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করিয়া যেরূপ বীরত্ব প্রভাব প্রদর্শন করিয়াছেন,তাহ ইতিহাসে সবিশেষ লিখিত আছে । মোগলরাজ-সরকারে ও মানসিংহ,জয়সিংহ প্রভৃতি রাজপুতগণ বীরত্বের পরাকাষ্ঠী প্রদর্শন করিয়া গিয়াছেন । মহারাষ্ট্র-কেশরী শিবাজী আপনাকে রাজপুতবংশধর বলিয়। ঘোষণা করেন। তাঞ্জোর ও কোলহাপুরে ঐ বংশের শাখা এখনও বিদ্যমান আছে। ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দে কোন রাঠোরসর্দার কর্তৃক আমন্ত্রিত হইয়া মহারাষ্ট্রীয়দল আজমীরে প্রবেশলাভ করে, এই সময় হইতে রাজপুতনার শাসনভিত্তি শিথিল হইতে আরম্ভ হয় । ১৮০৩ খৃষ্টাকে রাজপুতনার অধিকাংশ মহারাষ্ট্রের কবলিত হয় । সেনাপতি ওয়েলেসলী ও লেকের সহিত উত্তর ভারতে সিন্দেরাজের যুদ্ধ ঘটে । এই যুদ্ধে মহারাষ্ট্রশক্তি হতবল হইলে তাহারা ইংরাজরাজের মধ্যস্থতায় রাজপুতরাজন্তগণের প্রতি অত্যাচার করিতে বিরত হন। অতঃপর ১৮১৪ খৃষ্টাৰে পেন্ধারী দস্থ্যসদ্ধার জার্মার র্যার উপদ্রবে [ ৩৬৭ ] রাজপুত রাজপুতনার কতকাংশ উৎপন্ন যায়। এই সময় উদয়পুর রাজকথায় পাণিপীড়নস্থত্রে জয়পুর ও যোধপুর-রাজের মধ্যে শত্রুত বাধে । মহারাষ্ট্রগণ ও পাঠানগণ উভয়পক্ষেই সহায়ত। করিয়া উভয় রাজসংসারকে বিধ্বস্ব করিয়া ফেলে। অবশেষে উক্ত রাজকন্যাকে বিষপ্রয়োগে বিনাশ করিম উড়য়রাজের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা হয়। ১৮১৭ খৃষ্টাম্বে মার্কইস অব হেষ্টিংস আৰ্মীয় খাকে বশীভূত করিলে রাজপুতরাজগণ ইংরাজরাজের অধীনতা স্বীকার করিতে বাধ্য হন। রাজপুতগণ ধৰ্ম্মনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতি সমভাবে রক্ষণ করিতে বিশেষ যত্নশীল ছিলেন । র্তাহার। ব্রাহ্মণদিগকে ভূমিদান, দেৰমনিরপ্রতিষ্ঠা এবং পর্বোৎসবে একত্র যোগদান দ্বারা পরস্পরের মধ্যে নৈকট্যস্থাপন ও সহানুভূতিবৃদ্ধি বিষয়ে মনোযোগ দিলেন। রাজবাড়ার প্রধান প্রধান দেবালয়সমুছে রাণাপ্রদত্ত ভূক্তি ব্যতীত, ব্রাহ্মণগণ বণিক্‌ ও কৃষকদিগের নিকট হইতে কিছুকিছু দান পাইয়া থাকেন। উহাকে মাপা’ অর্থাৎ পণ্যদ্রব্যের নির্দিষ্টাংশ বলে । একলিঙ্গেশ্বর ও নাথজি বা নাথদ্বারমন্দির মেবারের প্রধান । বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ বল্লভাচার্য্য কর্তৃক সৰ্ব্বপ্রথমে নাথদ্বারে নাথজির মুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ সময় তিনি আরও ছয়ট বিগ্ৰহ আনিয়া নাথদ্বারে স্থাপন করেন। কিন্তু পরবৰ্ত্তিকালে তাহার পৌত্র গিরিধারী ঐ সপ্তধিগ্রহ স্বীয় সপ্ততনয়কে দান করেন। তাহীদের উত্তরাধিকারিগণই এক্ষণে ঐ সকল মুপ্তি পুজার অধিকারী । নাগদ্ধারে নাথজি ব্যতীত অপরাপর মূৰ্ত্তিগুলি বিভিন্নস্থানে রক্ষিত হইয়াছে । মথুরানাথ—কোট, দ্বারকানাথ—কঙ্করোলী, গোকুলনাথ বা চন্দ্ৰ—জয়পুর, যদুনাথ—মুরাট, বি2ঠলনাথ— কোটা ও মদনমোহন—জয়পুর । এই সপ্তবিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজপুতগণের মধ্যে কৃষ্ণাৰ্চনার বিস্তার ঘটে। বৈষ্ণবধৰ্ম্মের আশ্রয়াবলম্বন করিয়া রাজপুতগণ ক্রমে বল্লভাচার্য্য প্ৰবৰ্ত্তিত অল্পকূট মহোৎসব প্রচলিত করেন। রাজপুতজাতীয় প্রধান পৰ্ব্ব বসন্তপঞ্চমী। ঐ পঞ্চমী তিথি হইতে ৪৯ দিন পর্য্যস্ত রাজপুতঞ্জাতি একবারে উম্মাদমূৰ্ত্তি ধারণ করিয়া থাকেন। বসস্তুপঞ্চমীর দুইদিন পরেই তামুসপ্তমী। ঐ দিন রাজপুতগণ স্বৰ্য্যদেবের উপাসনা করেন। ইহার পর কলিসিদ্ধেশ্বরের শিবরাত্রি উৎসব । স্বয়ং রাণাকে দেলোদেশে নিরস্তু উপবাস করিতে হয়। ফাঙ্কনমালে আহেরিয়া নামক বীরপৰ্ব্বোৎসব । রাণী সামস্তবর্গে পরিবৃত ও বাসস্তী পরিচ্ছদে ভূষিত হইয় প্রতিপুর্ণ মানলে মৃগয়ায় গমন করেন। অত:পর রাজপুতজাতির ফলগুৎসবের সমারোহ। ঐ সময়ে তাহার পিতামাত ভ্রাতাবন্ধু ভগিনী ভাৰ্য্যা প্রভৃতি সকলেই