পাতা:বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূলোক

পৃথিবীর বৃহৎ গভীরতার তুলনায় এই পাহাড়পর্বত মানুষের চামড়ার উপর বলিচিহ্নের চেয়ে কম বই বেশি নয়।

 প্রাচীন যুগের পৃথিবীতে কুঁচকে যাওয়া স্তরের উচুনিচুতে কোথাও নামল গহ্বর, কোথাও উঠল পর্বত। গহ্বরগুলো তখনো জলে ভরতি হয়নি। কেননা তখনো পৃথিবীর তাপে জল ও ছিল বাষ্প হয়ে। ক্রমে মাটি হোলো ঠাণ্ডা, বাষ্প হোলো জল। সেই জলে গহ্বর ভরে উঠে হোলো সমুদ্র।

 পৃথিবীর অনেকখানি জলের বাষ্প তো তরল হোলো; কিন্তু হাওয়ার প্রধান গ্যাসগুলো গ্যাসই রয়ে গেল। তাদের তরল করা সহজ নয়। যতটা ঠাণ্ডা হোলে তারা তরল হোতে পারত ততটা ঠাণ্ডায় জল যেত জমে, আগাগোড়া পৃথিবী হোত বরফের বর্মে আবৃত। মাঝারি পরিমাপের গরমে-ঠাণ্ডায় অক্সিজেন নাইট্রোজেন প্রভৃতি বাতাসের গ্যাসীয় জিনিসগুলি চলাফেরা করছে সহজে, আমরা নিশ্বাস নিয়ে বাঁচছি।

 পৃথিবীর ভিতরের দিকে সংকোচন এখনো একেবারে থেমে যায়নি। তাবি নড়নের ঠেলায় হঠাৎ কোথাও তলার জায়গা যদি নিচে থেকে কিছু সরে যায়, তাহলে উপরের শক্ত আবরণ ভেঙে গিয়ে তার উপরে চাপ দিয়ে পড়ে, দুলিয়ে দেয় পৃথিবীর স্তরকে, ভূমিকম্প জেগে ওঠে। আবার কোনো কোনো জায়গায় ভাঙা আবরণের চাপে নিচের তপ্ত তরল জিনিস উপরে উছলে ওঠে।

১০৫