পাতা:বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়

 জ্ঞানের একটা দিক আছে তা বৈষয়িক। সে রয়েচে জ্ঞানের বিষয় সংগ্রহ করবার লোভকে অধিকার করে, সে উত্তেজিত করে পাণ্ডিত্যের অভিমানকে। এই কৃপণের ভাণ্ডারের অভিমুখে কোনো মহৎ প্রেরণা উৎসাহ পায় না। ভারতে এই যে মহাভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়যুগের উল্লেখ করলেম, সেই যুগের মধ্যে তপস্যা ছিল, তার কারণ ভাণ্ডারপূরণ তার লক্ষ্য ছিল না, তার উদ্দেশ্য ছিল সর্ব্বজনীন চিত্তের উদ্দীপন, উদ্বোধন, চারিত্রসৃষ্টি। পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বের যে আদর্শ জ্ঞানে কর্ম্মে হৃদয়ভাবে ভারতের মনে উদ্ভাসিত হয়েছিল, এই উদ্যোগ তাকেই সঞ্চারিত করতে চেয়েছিল চিরদিনের জন্য সর্ব্বসাধারণের জীবনের মধ্যে, তার আর্থিক ও পারমার্থিক সঙ্গতির দিকে, কেবলমাত্র তার বুদ্ধিতে নয়।

 নালন্দা বিক্রমশীলার বিদ্যায়তন সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। সে যুগে যে বিদ্যার মহৎমূল্য দেশের লোক গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল, তাকে সমগ্র সম্পূর্ণতায় কেন্দ্রীভূত করে সর্ব্বজনীন জ্ঞানসত্র রচনা করবার ইচ্ছা স্বতই ভারতবর্ষের মনে সমুদ্যত হয়েছিল সন্দেহ নেই। ভগবান বুদ্ধ একদিন যে-ধর্ম্ম প্রচার করেছিলেন, সে-ধর্ম্ম তার নানা তত্ত্ব, নানা অনুশাসন, তার সাধনার নানা প্রণালী নিয়ে সাধারণচিত্তের আন্তর্ভৌম স্তরে প্রবেশ করে ব্যাপ্ত হয়েছিল। তখন দেশ প্রবলভাবে কামনা করেছিল