পাতা:বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
বিশ্ববিদ্যালয়

সাধারণ ভাণ্ডারে। এখন সেখানে য়ুনিভর্সিটি যেমন উদারভাবে সকল দেশের, তেমনি একান্তভাবে আপন দেশের। এইটেই হচ্ছে মানুষের প্রকৃতির অনুগত। কারণ মানুষ যদি সত্যভাবে নিজেকে উপলব্ধি না করে তাহলে সত্যভাবে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে না। বিশ্বজনীনতার দাক্ষিণ্য বাস্তব হতে পারে না, সেই সঙ্গে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উৎকর্ষ যদি বাস্তব না হয়। এসিয়ার মধ্যযুগে বৌদ্ধধর্ম্মকে তিব্বত চীন মঙ্গোলিয়া গ্রহণ করেছিল, কিন্তু গ্রহণ করেছিল নিজের ভাষাতেই। এই জন্যেই সে সকল দেশে সে ধর্ম্ম সর্ব্বজনের অন্তরের সামগ্রী হতে পেরেচে, এক একটি সমগ্র জাতিকে মানুষ করেচে, তাকে মোহান্ধকার থেকে উদ্ধার করেচে।

 য়ুনিভর্সিটির উৎপত্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন নেই। আমার বলবার মোট কথাটি এই যে, বিশেষ দেশ বিশেষ জাতি যে-বিদ্যার সম্বন্ধে বিশেষ প্রীতি, গৌরব ও দায়িত্ব অনুভব করেচে তাকেই রক্ষা ও প্রচারের জন্যে স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সৃষ্টি। যে ইচ্ছা সকল সৃষ্টির মূলে, সমস্ত দেশের সেই ইচ্ছাশক্তির থেকেই তার উদ্ভব। এই ইচ্ছার মূলে থাকে শক্তির ঐশ্বর্য্য। সেই ঐশ্বর্য্য দাক্ষিণ্য দ্বারা নিজেকে স্বতই প্রকাশ করতে চায়, তাকে নিবারণ করা যায় না।