পাতা:বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়
২৯

ব্রাউনের বেরিয়ল আর্‌ন্‌ এবং মিলটনের প্যারাডাইস্‌ রিগেন্‌ড্‌ আমাদের পাঠ্য ছিল। নোট প্রভৃতির সাহায্যে বইগুলি নিজে পড়ে আসতুম তার অর্থগ্রহণের জন্যে। অধ্যাপক ক্লাসে বসে মুর্ত্তিমান নোট বইয়ের কাজ করতেন। যে কাব্য পড়াতেন তার ছবিটি পাওয়া যেত তাঁর মুখে মুখে, আবৃত্তি করে যেতেন অতি সরসভাবে, যেটি শব্দার্থের চেয়ে অনেক বেশি, অনেক গভীর সেটি পাওয়া যেত তাঁর কণ্ঠ থেকে। মাঝে মাঝে দুরূহ জায়গায় দ্রুত বুঝিয়ে যেতেন, পঠন-ধারার ব্যাঘাত করতেন না। রচনা শক্তির উৎকর্ষ-সাধন সাহিত্য শিক্ষার আর একটি আনুষঙ্গিক লক্ষ্য। এই দায়িত্বও তাঁর ছিল। (ভাষা শিক্ষা সাহিত্য শিক্ষার কাজ মুখ্যত ভাষাতত্ত্ব দিয়ে নয়, সাহিত্যের প্রত্নতত্ত্ব দিয়ে নয়, রসের পরিচয় দিয়ে ও রচনায় ভাষার ব্যবহার দিয়ে।) যেমন আর্ট শিক্ষার কাজ আর্কিয়লজি আইকনোগ্রাফি দিয়ে নয়, আর্টেরই আন্তরিক রস-স্বরূপের ব্যাখ্যা দিয়ে। সপ্তাহে একদিন তিনি সমগ্রভাবে ছাত্রদের প্রদত্ত রচনার ব্যাখ্যা করতেন, তার পদচ্ছেদ, প্যারাগ্রাফ বিভাগ, শব্দপ্রয়োগের সূক্ষ্মত্রুটি বা শোভনতা, সমস্তই তাঁর আলোচ্য ছিল। সাহিত্য ও ভাষার স্বরূপবোধ, তার আঙ্গিকের অর্থাৎ টেক্‌নিকের পরিচয় ও চর্চ্চাই সাহিত্য শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য এই কথাটিই তাঁর ক্লাস থেকে জেনেছিলেম।