পাতা:বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
বিশ্ববিদ্যালয়

 বয়স যদি পর্য্যবসিতপ্রায় না হোত আর যদি আমার কর্ত্তব্য হোত ক্লাসে সাহিত্যশিক্ষকতা করা তবে এই আদর্শ অনুসারেই কাজ করবার চেষ্টা করতুম। সম্ভবত আমার পক্ষে তার পরিণাম শোকাবহ হোত। কর্ত্তৃপক্ষ এবং ছাত্রেরা কেউ দীর্ঘকাল আমাকে সহ্য করতেন না। সেই সম্ভবপর সঙ্কট কাটিয়ে এসেচি।

 আজ আমার শেষ বয়সে আমার কাছ থেকে কোনো রীতিমতো কর্ম্মপদ্ধতির প্রত্যাশা করা ধর্ম্মবিরুদ্ধ, তাতে প্রত্যবায় আছে। আমার ক্লান্ত জীবনের সায়াহ্নকালে আমাকে বাংলা অধ্যাপকের সুলভ সংস্করণরূপে চালাতে গেলে তাতে কাজেরও ক্ষতি হবে, আমার পক্ষেও সেটা স্বাস্থ্যকর হবে না। আমি এই জানি যে, আজ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বঙ্গবাণী-বীণাপাণির মন্দির-দ্বারে বরণ করে নেবার ভার আমার পরে। সেই কথা মনে রেখে আমি তাকে অভিনন্দিত করি। এই কামনা করি যে, যখন ধূম-মলিন নিশীথপ্রদীপের নির্ব্বাপণের ক্ষণ এল তখন বঙ্গদেশের চিত্তাকাশে নব সূর্য্যোদয়ের প্রত্যুষকে যথার্থ স্বদেশীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন ভৈরবরাগে ঘোষণা করে, এবং বাংলার প্রতিভাকে নব নব সৃষ্টির পথ দিয়ে অক্ষয় কীর্ত্তিলোকে উত্তীর্ণ করে দেয়।