বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিশ্বমানবের লক্ষ্মীলাভ.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রবাসী গ্রামবাসী সংবাদ

 “হাসছ কেন।”

 “বোকা ছাড়া ধনী হতে কে চায়। তাই হাসছি।” পরে সে গম্ভীরভাবে বললে, “ধনী হওয়া মানে পরকে লুঠ করা।”

 “কিন্তু ভালো ভালো জিনিস তোমার নিজের হয়, তাও কি চাও না? তোমাকে কেউ যদি ঘোড়া কি মোটরগাড়ি দেয়, তা কি নাও না।’

 “নিই বইকি, নিয়ে বাবার সমবায়ে দিয়ে দিই। জানেন, প্রবাসী মশায়, আজকাল ধনী কথাটা আমরা গুদামজাত করেছি, ওটা আর চলতি নেই।”

 আমি অবাক হয়ে ছোকরার পানে তাকিয়ে রইলাম। এতটুকু মুখে অত বড়ো কথা। একি ওর সত্যিকার মনের ভাব, না শেখানো বুলি। কিন্তু বেশ স্বচ্ছন্দে বলে গেল, চোখের ভাবে মুখের কথায় গরমিল তো দেখলাম না, মুখস্থ গৎ আওড়াবার মতো চেহারা মোটেই নয়। আমি যে-দেশ থেকে এসেছি, সেখানকার ছেলেরা বলা দূরে থাক এ কথা ভাবতেই পারে না; সেখানে এ ধরনের মতামত নেহাতই ফাঁকা শোনাত; তাই প্রথমটা সন্দেহ হয়েছিল।

 রাস্তার মোড়ে ছেলেটির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হল। আমাদের বাড়ি যে পাড়ায় ছিল, নানা কথা ভাবতে ভাবতে সেদিকে চলতে লাগলাম।

 এখন দেশে যে-দ্বন্দ্ব চলেছে, তা রাস্তার দুই পাশের মাঠের চেহারা থেকেই বোঝা যায়। এক দিকে সমবায়ের হাত পড়েছে, আল দিয়ে খেত ভাগ করা নেই, কলে বোনা বিচির গাছের সোজা সোজা লাইন জমির ঢাল ধরে যেন ফসলের স্রোতের মতো বিল পর্যন্ত চলেছে। অপর ধারে, যারা সমবায়ভুক্ত হয়নি, তাদের ভাগ করা ছোটো ছোটো খেতে ফসলের সে তেজ নেই, তারা যেন বিরুদ্ধ ভাবের জের টেনে রেখেছে মাত্র। এ বৎসরের গোড়ায় যে “সমবায়” এত ভয়ভাবনা ওজর-

১০৮